Adsterra

বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বদলে যাক পৃথিবী

বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বদলে যাক পৃথিবী

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির নেতৃত্বে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ জুনকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এবারকার ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’–এর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অনলি ওয়ান আর্থ’, যা বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘শুধু একটাই পৃথিবী’। এ বছর এর  সুইডেন। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক স্টকহোম কনফারেন্স অন দ্য হিউম্যান এনভায়রনমেন্টে সংঘটিত হয়েছিল। আর সেই সম্মেলনের স্লোগানও একই ছিল। ১৯৭২ বর্ষের স্টকহোম সম্মেলনের ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এই উত্তম বর্তমানেও সেইমভাবে প্রয়োগ-যোগ্য বিধায় আবারও নিউ করে স্মরণ করে দেওয়ার দরকার হয়ে পড়ছে—এ গ্রহই আমাদের শুধুমাত্র বাড়ি।


এ উপলক্ষে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে গিয়ে যে অবদান দেখতে পেলাম, তাতে অনেকটা পদ্যের আকারে শুরুতেই লেখা নির্ভুল এভাবে;


একটি মাত্র পৃথিবী

মহাবিশ্বে কোটি কোটি ছায়াপথ,

আমাদের ছায়াপথেও বিদ্যমান কোটি কোটি গ্রহ,

কিন্তু ‘পৃথিবী’ রয়েছে কেবলমাত্র একটি।

আসুন সকলেই মিলে এর স্নেহ নিই।


মহাবিশ্বে লাখো কোটি নক্ষত্রের ভিতরে আমাদের থাকার জায়গা ‘সৌরজগতে’, অর্থাৎ সূয্যি নামক নক্ষত্রটিকে ঘিরে যে গ্রহগুলো ঘুরছে, তাদেরই ১টি হচ্ছে আমাদের এই ‘পৃথিবী’। কিন্তু অধুনা পর্যন্ত ‘পৃথিবী’ ব্যতীত আর কোনো গ্রহই প্রাণী বসবাসের সক্ষম নয়। তাপমাত্রা বিবেচনা করলেও এর স্পষ্ট বর্ণনা প্রতীয়মান। সূর্যের দিক হতে কাছাকাছি দূরত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর পূর্বের গ্রহটি হচ্ছে শুক্র, আর পরবর্তী গ্রহটি হলো মঙ্গল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই তিনটি গ্রহের তাপমাত্রা যথাক্রমে শুক্র (প্রায় ৫০০ ডিগ্রি সে.), বিশ্ব (প্রায় ১৫ ডিগ্রি সে.) আর হিতকর (প্রায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সে.)। সূয্যি থেকে দূরত্ব বিবেচনায় এভাবে আর সব কোমর গ্রহের তাপমাত্রাই যথাক্রমে বাড়তে অথবা কমতে থাকে, যার মানে হচ্ছে এই যে সৌরজগতে কেবলমাত্র জগতের তাপমাত্রাই কেবল জানোয়ার বসবাসের যোগ্য, আর কোনোটি নয়। প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আর সব উপাদানও নেই আর কোনো গ্রহে।


অথচ তারপরও ‘একটি মাত্র পৃথিবী’ আর এই সেইম জগতের বাসিন্দা আমরা সবাই, এ আন্দাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বরাবরই আমাদের প্রচুর প্রচার-প্রচারণা চালাতে হয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে গেলে, এক গাঁয়ের মানুষকে আপন মনে হয়, মুছে বিদেশে নিজ রাষ্ট্রের যে কাউকে আপন মনে হয়, একইভাবে সে যে গ্রাম, উপজেলা বা জেলারই হোক না কেন। কিন্তু এই বিশ্ব ত্যাগ অন্য কোনো গ্রহে আমাদের যাতায়াত নেই বিধায় এ সুযোগ আমাদের কখনোই হয়ে ওঠেনি সেই হিসাবে যে আমরা সেইম গ্রহের বাসিন্দা, যার নাম ‘পৃথিবী’।


আবার এই সেইম বিশ্বে আমাদের পরস্পরের মাঝে যোগসূত্রও একই সুতায় বাঁধা। পরিবেশবিজ্ঞানে এ আন্দাজ প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও বিভিন্ন তত্ত্ব আর সূত্রের অবতারণা করা হয়েছে। ‘এনভায়রনমেন্টাল ইউনিটি’ ধারণাটিতে জানানো হয়েছে, গোটা জগৎ ১টি ‘কন্টিনিউয়াম’ বা একক সত্তা। ধারণাটির অনেক ভালো ব্যাখ্যার জন্য আমি বরং আমার ছোটবেলার, সম্ভবত শ্রেণি সেভেনের ইংরেজি বইয়ের একটি ছোট-গল্প ভাবনা করতে পারি।


একবার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ‘মুখ’–এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামল এ অজুহাতে যে অবশিষ্ট সকলেই এত কাজ করে, আর মুখ শুধুমাত্র বসে বসে খায়। এরপর হাত, পা আর মাথা সকলেই কাজ বন্ধ করে দিল। ফলে মুখে খাবার নেই, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে সারা দেহ তথা বিভিন্ন অঙ্গও দুর্বল আর অক্ষম হয়ে পড়ল। অতঃপর তাদের টনক নড়ল যে তারা সবাই আসলে একটি শরীরেরই নানারকম অঙ্গ, আলাদা নয়। আবার ব্রিটিশ পরিবেশবিদ জেমস লাভলক গ্রিক দেবী ‘গায়া’–র নামানুসারে অন্যটি তত্ত্ব দেন, যা ‘গায়া হাইপোথিসিস’ নামে পরিচিত। তাতে এইরকম একধাপ এগিয়ে বলা হয়েছে, সমগ্র পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে একটি একক জীবন্ত সত্তা। বনগুলো এর ফুসফুসসদৃশ কিংবা নদীগুলো এর ধমনি, শিরা-উপশিরা ইত্যাদি।


২০২২ বর্ষের প্রেক্ষাপটে, জগৎ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ সাম্প্রতিক পৃথিবীর কমপক্ষে তিনটি সমস্যাকে ম্যাক্সিমাম গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিচ্ছে;


১. জলবায়ু অতিশয় ফাস্ট অতিশয় তপ্ত হয়ে পড়ছে, যাতে লোক ও প্রকৃতির জন্য তা মানিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে;

২. বাসস্থানের লস তার সাথে আদার্স চাপে আনুমানিক এক মিলিয়ন জীব ও গাছ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে;

৩. দূষণ আমাদের মাটি, পানি ও বাতাসকে ক্রমেই বিষ করে চলেছে।


আসলে, এ সমস্যা হতে বেরিয়ে আসার শুধুমাত্র উপায় হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি ও সমাজকে প্রকৃতির সাথে এইরকম সংযুক্ত তথা অধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরিচালিত করা। এটি শিওর করা গেলেই আমাদের এই শুধুমাত্র বাসযোগ্য গ্রহের দীর্ঘায়ু আশা করা সম্ভব। আর তাই, মূল থিমের পাশাপাশি, অন্তর্নিহিত অনুমান হিসেবে ‘প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই জীবনযাপন’–এর উপর জোর দেওয়ার কথাও এবারকার পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.