Adsterra

রাষ্ট্রপতি বললেন গণতন্ত্রহীন অবস্থার উন্নয়ন কখনো সর্বজনীন হতে পারে না

রাষ্ট্রপতি বললেন গণতন্ত্রহীন অবস্থার উন্নয়ন কখনো সর্বজনীন হতে পারে না

আগামী জাতীয় সংসদ ইলেকশনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যুদ্ধ ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত থেকে সবার সহায়তা করা উচিত। একই সঙ্গে উনি এইরকম বলেছেন, গণতন্ত্রহীন সিচুয়েশনে যে উন্নয়ন হয়, তা কোনো সময়েই সর্বজনীন হতে পারে না। সে উন্নয়ন হয়  ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক।


আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস, সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, জনগণের প্রতি সংসদের দায়বদ্ধতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সংসদ মেম্বার হিসেবে প্রথম সংসদে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে কল্পনা করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।


১৯৭৩ বর্ষের ৭ এপ্রিল বসেছিল জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। সুবর্ণজয়ন্তীতে এই বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়।

রাষ্ট্রপতির উক্তির সময় গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ব্যতীত তিন বাহিনীর প্রধানেরা, রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং মিশনপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।


সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার সম্ভাষণ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনও দেশ, কমিউনিটি ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে  থেকে আমাদের সকলের সাহায্য করা উচিত।’


গণতন্ত্র ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে। দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকলে অগ্রগতি ও উন্নতি এগিয়ে যায়। আবার গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নকে স্থায়ী ও টেকসই করার জন্য হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে, তৃণমূল অবস্থায় গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে।’


রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতিতে যে অগ্রগতি হয়, তা কখনও সর্বজনীন হতে পারে না। সে উন্নতি হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। গত দেড় দশকে  ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার ফলে দেশ উন্নতি–অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের দায়িত্ব উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নেওয়া।’



রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়। মনে চাইল কোনো দেশ থেকে পরিমাণমতো গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করলাম, বিষয়টি এমন নয়। চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উন্মেষিত ও শক্তিশালী হয়। জাতির বাপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কর্তৃত্ব আদায়ের প্রত্যেকটি আন্দোলন ও সংগ্রামে এর দীপ্ত উদাহরণ রেখে গেছেন। ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদের কার্যবাহে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যগুলো পাঠ করলে বোঝা যায় সংসদকে কীভাবে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হয়।’


গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে সংসদ মেম্বারদের গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের অভ্যর্থনা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, কেবল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতরাই সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব তার সাথে জনগণের কাছে জবাবদিহি শিওর করতে পারেন।


গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে, এরূপ যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর সম্ভাষণ জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি।


জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৭ এপ্রিল একটি  ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৩ বর্ষের এই দিনে জাতীয় সংসদের ১ম সমাবেশ বসেছিল। সদ্য স্বাধীন কান্ট্রিতে  শুরু হয়ে গিয়ে ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের। তবে এই যাত্রার পেছনে আছে ২৪ বছরের অত্যাচার, শোষণ ও উপদ্রবের কাতর ইতিহাস।


সংসদের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, সার্বিকভাবে সংসদের নিমিত্ত তিনটি ইম্পোর্টেন্ট দায়িত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। প্রথমত, সমাজের সব শ্রেণি, পেশা, জেন্ডার, মত ও সড়কের প্রতিনিধিত্ব করা। দ্বিতীয়ত, বিধান প্রণয়ন ও গর্ভনমেন্টের খরচা নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিষয়াদি তার সাথে তৃতীয়ত, তদারকির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। সংসদীয় নিয়মে নানারকম মন্ত্রণালয় সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোকে ঠিকভাবে কার্যকর করা গেলে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি শিওর করা পসিবল হবে।

জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাষণ জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাঁরা (জনগণ) প্রচুর প্রার্থনা নিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছেন যাতে তাঁদের কথা, চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা আপনারা সংসদে তুলে ধরেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং নীতি-আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। অথচ সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা থাকতে পারে না।’


জাতীয় সংসদে সব স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এটি অর্জনে আমাদের সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.