Adsterra

এলপিজি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি- এসেছে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

এলপিজি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি- এসেছে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

ভোক্তা অবস্থায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দর একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পর্যাপ্ত মানুষ। এমনিতেই মার্কেটপ্লেসে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দর ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাসের দর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। 


বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষণা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার হতে প্রতি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। তবে আজ শনিবার প্রভাতে পৌর এলাকা ও আশপাশের নানারকম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা রাষ্ট্রশাসক গোষ্ঠী নির্ধারিত দামের চেয়েও ১০০ হতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছেন। এতে ক্রেতাদের ভিতর ক্ষোভ দেখা গেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, পরিবেশকদের (ডিলার) কাছ থেকেই বহু দামে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খুচরা বাজারেও এর দাম অনেক বেশি।


আজ সকাল ঠিক বেলা ১০টার দিকে জেলা শহরের বেউথা এরিয়ায় কোহিনুর ইসলামের দোকানে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে আসেন চর বেউথা গ্রামের লোকমান হোসেন (৫০)। তিনি বারো লিটারের সিলিন্ডার গ্যাস কেনেন ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘আমাগো মতোন গরীব মাইনষের যে কী বিপদ! মার্কেটে সব জিনিসপত্রের প্রাইস বাড়ছে। এখন সিলিন্ডার গ্যাসের দামও বাড়ানো অইচে। দুঃখের কথা কে শুনব?’


মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বান্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী কাপড়ের দোকান পরিচালনা করেন।  সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের ভ্যালু বেড়েছে। এর ভিতরে এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যালু বৃদ্ধি ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে উঠেছে তাঁর জন্য। ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দর দেড়-দুই গুণ বেড়েছে। কতিপয় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। আমাগো মতো নিম্ন ইনকামের মানুষের জীবনযাপন এখন শক্ত হয়ে পড়েছে।’


পৌর এলাকার সেওতা এলাকার অধিবাসী মাসুদ রানা সাহেব বলেন, ‘চাল, ডাল, আটা ও তেল—প্রতিটি জিনিসের প্রাইস বেড়েছে। অথচ আমাদের  তো বাড়েনি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও বেড়েছে। তার উপর একলাফে সিলিন্ডার গ্যাসের দর এত বাড়ায় আমাদের দিশাহারা অবস্থা।’


 নির্ধারিত দামের চাইতে অধিক প্রাইস চাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিতরে বাগ্‌বিতণ্ডার চিত্রও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি পরিবেশকদের দামের উপর নির্ভরশীল বলে দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।


সদর থানার দীঘি মাঝিপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, লেটেস্ট মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে উনি পরিবেশকদের কাছ থেকে ১২ লিটারের প্রত্যেকটি সিলিন্ডার ১ হাজার ৫৫০ টাকায় কিনছেন। এরপর সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা লাভে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এবং সিলিন্ডার বাড়িতে পৌঁছে দিলে ১ হাজার ৬৫০ টাকা নিচ্ছেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেউথা এরিয়ায় এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের পরিবেশক আরিফুল হক ১ম আলোকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ১২ লিটারের সিলিন্ডারপ্রতি ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। আমরা সেই দামেই বিক্রি করছি। তবে বলা চলে খুচরা বিক্রেতারা ৫০ থেকে ১০০ টাকা অধিক দরে বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারা অবশ্যই তো কিছুটা লাভ করবেন।’


কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জের সভাপতি  ছারোয়ার বলেন, প্রথমে অনেক ব্যক্তি লাকড়ির চুলায় রান্নার কাজ করতেন। তবে ইদানিং আর সেই অবস্থা নেই। অধুনা কেবলমাত্র শহরেই নয়, গ্রামের মানুষও রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। দ্রব্যমূল্যের এই অস্ঊবাভাবিক র্ধ্বগতির সময়ে এলপিজি গ্যাসের অস্বাভাবিক ভ্যালু বৃদ্ধি সীমিত ইনকামের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাবেন। নিম্ন রোজগারের মানুষের কথা বিবেচনা করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।


জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন,  নির্ধারিত দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য অধিদপ্তরের পক্ষ হতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অতিরিক্ত দামে এই এলপিজি গ্যাস বিক্রির অভিযোগে বৃহস্পতিবার এক খুচরা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানির এজেন্টদের নিয়ে সভা ডেকে আনা হয়েছে। সরকার ঠিক নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তারা যেন সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে পারেন ঠিক সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.