মেজর হায়দার, একজন বাঙালি অফিসার
কমিশন প্রাপ্তির পর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁকে কুমিল্লা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ১৫-২০ দিন পর পুনরায় কুমিল্লায় নিয়োগ করা হয়।মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ২৭ মার্চ সেখান থেকে পালিয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় অবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। পরে তেলিয়াপাড়া হয়ে আগরতলার মেলাঘরে চলে যান। সেখানে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন দুই নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। হায়দার সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন।
মেজর হায়দার গেরিলাদের মাঝে প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিলেন আগে থেকেই। আর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে হায়দারের বীরোচিত উপস্থিতি তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। তাই ইতিহাসের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে মেজর হায়দারের কাছ থেকেই পরবর্তী নির্দেশনা পায় মুক্তিবাহিনী, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। ঢাকা বেতারে ও টিভিতে সাহসী গেরিলা কমাণ্ডার একটি কথিকা পাঠ করেন- ‘আমি মেজর হায়দার বলছি, মুক্তিবাহিনীর প্রতি নির্দেশ…’।
“আমি মেজর হায়দার বলছি। প্রিয় দেশবাসী, আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশ এখন মুক্ত। আপনারা সবাই এখন মুক্ত বাংলাদেশের নাগরিক।
জনগণের প্রতি আমার আবেদন – আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করুন। আল বদর, আল শামস, রাজাকার ও দালালদের ধরিয়ে দিন। নিজ হাতে আইন তুলে নেবেন না।”
সকল গেরিলার প্রতি আমার নির্দেশ- আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।কোথাও যেন আইন ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট না হয়। লুটপাট বন্ধ করতে হবে। এলাকায় এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার দেশে ফিরে দায়িত্ব না নেবেন, ততদিন পর্যন্ত গেরিলাদের যার যার এলাকায় আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।
এ যেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা! চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ঘোষণা! সারাদেশের জনগণ উল্লাসে মেতে ওঠে। আকাশ-বাতাস মুখরিত হয় শ্লোগানে শ্লোগানে!
No comments