Adsterra

স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান


 

স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান

 স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান 

উপমহাদেশে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক স্যার উইলিয়াম মার্ক টালিদীর্ঘ ৩০ বছর বিবিসিতে কাজ করেছেন, যার মধ্যে ২০ বছরই ছিলেন বিবিসির দিল্লি কার্যালয়ের ব্যুরো চিফউপমহাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে ভালোই অবগত তিনিসাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁকে সম্মানজনকনাইটউপাধি দেয় ব্রিটেন১৯৮৫ সালে তিনিওবিইপদবিতে ভূষিত হন১৯৯২ সালেপদ্মশ্রীপদক লাভ করেন২০০৫ সালেপদ্মভূষণপদক লাভ করেনতিনি লন্ডনের ওরিয়েন্টাল ক্লাবের সদস্য

     মুক্তিযোদ্ধারা পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছে, যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, টিক্কা খান আর ইয়াহিয়ার গদিতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেকোথাও কোনো আক্রমণ, ধ্বংসের খবর নিজে হাজির হতেনকৌতূহল আর উৎকণ্ঠার এসব বিষয় নিয়ে, একাত্তরের সেই দিনগুলোতে বিবিসি রেডিওতে হাজির হতেন মার্ক টালিতাঁর সেই কন্ঠ আর নিরপেক্ষ তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে একাত্তরে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন 

   ১৯৮৫ সালে তাঁর প্রথম গ্রন্থঅমৃতসর মিসেস গান্ধীজ লাস্ট ব্যাটেল প্রকাশ করেনতাঁর সহকর্মী ও বিবিসি দিল্লির প্রতিনিধি সতীশ জ্যাকবকে নিয়ে এই গ্রন্থটি রচনা করেনবইটিতে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সংঘটিত অপারেশন ব্লু স্টারের ঘটনাবলি, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক শিখ বিদ্রোহীদের দমন ইত্যাদি বিষয়ের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন১৯৯২ সালে তাঁরনো ফুল স্টপ ইন ইন্ডিয়াপ্রকাশিত হয় 

    ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় ধনাঢ্য ইংরেজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনিশৈশবের প্রথম দশকে ভারতে অবস্থান করেনইংল্যান্ডের বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেনতিনি ক্যামব্রিজের চার্চ অব ইংল্যান্ডে পাদ্রী হতে চেয়েছিলেনকিন্তু লিংকন থিওলোজিক্যাল কলেজে পড়াশোনার সময় পাদ্রীদের বিষয়ে অনেক কিছু জেনে এই চিন্তা থেকে সরে আসেন১৯৩৪ সালে তিনি বিবিসিতে যোগদান করেনভারতীয় সংবাদদাতা হিসেবে ১৯৬৫ সালে ভারতে চলে আসেনদক্ষিন এশিয়ায় কর্মজীবনে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর সাক্ষী হয়েছিলেনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, অপারেশন ব্লু স্টার ও এর ফলে সংঘটিত ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড, শিখবিরোধী দাঙ্গা, রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে বিবিসিতে প্রেরণ করতেন

    একাত্তরে উত্তাল সারাদেশসর্বত্রই মানুষের মুখে শুধু যুদ্ধের আলোচনা, সচেতন বাঙালি মাত্রই সর্বদা জানতে আগ্রহী ছিল কোথায় কি ঘটেছে আর এর জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে থাকতো একাত্তরের বিবিসিতে একটি কণ্ঠ শোনার জন্যএকাত্তরের বিবিসি মানেই মার্ক টালি

   একাত্তরের বিবিসি বলতে সবাই মার্ক টালিকেই জানতমুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তান দিনগুলোতে তিনি ছিলেন বাঙ্গালি মুক্তিযোদ্ধাদের আশার আলোযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রেডিওর এরিয়াল তুলে সকাল-সন্ধ্যা বিবিসিতে মার্ক টালির কথা শোনার জন্য উৎকণ্ঠিত থাকত পুরো দেশতাঁর বক্তব্যের সময় পিনপতন নীরবতা থাকতোতাঁর কণ্ঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত প্রতিটী বাঙ্গালির বুকে১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিলো ৩৫ বছর

   প্রতি মুহূর্তে বাঙ্গালিদের চাঙ্গা করতে তাঁর কণ্ঠের ভূমিকা অনস্বীকার্যমার্ক টালি বলেন, একাত্তরে বাঙ্গালিদের ওপর আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিশাল ভুল করেছিলপাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুরো দেসশকে ধ্বংস করার নীতি গ্রহণ করেছিলপুরোদেশ যেনো ভূতের নগরীতে পরিণত হয়েছিলবাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্মাননানিতে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় আসেন স্যার উইলিয়াম মার্ক টালিমার্ক টালির সাথে বাংলাদেশের যেনো নাড়ির টানমার্ক টালির মা ছিলেন বাংলাদেশের নেত্রকোনার মেয়েবাবা ব্রিটিশ নাগরিকত্বে ব্যবসার সুবাদে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে পাট কিনতে আসতেনবাংলাদেশের সঙ্গে স্থায়ীত্ব বেড়ে যায় তাঁর মা বাঙ্গালি বলে

   তিনি একসময় বলেছিলেন, ফ্রান্স ও জার্মানি একত্র হয়েই গড়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নএই উদাহারণ অনুসরণ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানকে একত্রিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারজোটরাষ্ট্রগঠন করা উচিতদেশগুলো একত্র হলে এই অঞ্চলের দারিদ্র, নিরক্ষরতা ও ক্ষুধার মত বিষয়গুলো দূর করা সহজ হবে 

No comments

Powered by Blogger.