পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States of America) উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য, একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা ও পাঁচটি টেরিটোরি এবং কিছু মাইনর আউটলেয়িং দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটি "আমেরিকা" নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আটচল্লিশটি অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত; এই অঞ্চলের উত্তরে কানাডা ও দক্ষিণে মেক্সিকো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত; আলাস্কার পূর্ব সীমান্তে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রাশিয়া অবস্থিত। হাওয়াই অঙ্গরাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে পাঁচটি টেরিটরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লক্ষ
বর্গকিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল)। রাজধানী ওয়াশিংটন, ডি.সি.
এবং বৃহত্তম নগরী নিউ ইয়র্ক শহর।
১৫০৭ সালে জার্মান মানচিত্রকর মার্টিন ওয়াল্ডসিম্যুলার
বিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। এই মানচিত্রে তিনি ইতালীয় আবিষ্কারক ও
মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে পশ্চিম গোলার্ধের নামকরণ করেন
"আমেরিকা"। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে পূর্বতন
ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি প্রথম দেশের আধুনিক নামটি ব্যবহার করে। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই
"unanimous
Declaration of the thirteen united States of America" নামে
এই ঘোষণাপত্রটি "Representatives of the united States of
America" কর্তৃক গৃহীত হয়। ১৭৭৭ সালের ১৫ নভেম্বর দ্বিতীয়
মহাদেশীয় কংগ্রেসে আর্টিকলস অফ কনফেডারেশন বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে বর্তমান নামটি
চূড়ান্ত হয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নামানুসারে কলম্বিয়া নামটি এক সময় মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হত। "ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া"
নামের মধ্যে এই নামটির আজও অস্তিত্ব রয়েছে।
মার্কিন নাগরিকেরা বাংলা ভাষায় "মার্কিনী" নামে
পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিশেষণ হিসেবে "মার্কিন" শব্দটি
ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামরিক ও অর্থনীতির
শীর্ষস্থানের অধিকারী, বর্তমান বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একদা ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অধীনস্থ কলোনি বা উপনিবেশ।
আমেরিকার নানা অঞ্চল ছিল ইউরোপের নানা দেশের দখলে। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে দেশটি
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মতাদর্শ গ্রহণ করে বিশ্বসেরা হয়েছে। উপনিবেশ থেকে আমেরিকার
স্বাধীন ও শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র রূপে গড়ে উঠার ইতিহাস অনেকেরই আগ্রহ ও মনোযোগের
বিষয়।
আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সন্নিহিত অঞ্চলের দেশগুলো
আবিষ্কৃত হয় ষোড়শ শতকে। জন ক্যাবট নামক একজন ইংরেজ প্রশাসক সর্বপ্রথম আমেরিকার
পূর্ব উপকূলে পৌঁছান এবং মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ইত্যাদি এলাকায়
বসতি স্থাপন করেন।
অবশ্য তারও আগে, ১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার
কলম্বাস স্পেনের পতাকা বহন করে আমেরিকা মহাদেশের বর্তমানের পশ্চিম ভারতীয়
দ্বীপপুঞ্জ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসের দেখানো সমুদ্রপথ ধরে অপরাপর
স্প্যানিশ দখলদারগণ পুরো দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে অধীনস্থ করেন। কেবল ব্রাজিল বাদ
পড়ে স্প্যানিশ আগ্রাসন থেকে। ব্রাজিলে কায়েম হয় আরেক ঔপনিবেশিক দখলদার পর্তুগালের
কর্তৃত্ব।জন ক্যাবট দ্বারা আমেরিকায় প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশটির
পূর্ব-উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটেনের তৎকালীন রাজা সপ্তম হেনরি’র শাসন কায়েম হয়। যেহেতু ক্যাবট ছিলেন একজন ব্রিটিশ, তাই তিনি সপ্তম হেনরির হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দেন।
এরইমাঝে আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন
ইউরোপীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে এবং স্থানীয় আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের নিধন ও
নির্মূল করে উপনিবেশ তৈরি হতে থাকে। উপনিবেশ গঠনের কাজে আফ্রিকা থেকে শত শত জাহাজ
ভর্তি করে কালো মানুষদের দাস হিসাবে নিয়ে আসা হয়। চলতে থাকে দাস ব্যবসা এবং অবাধে
সম্পদ লুণ্ঠন। নিউল্যান্ড বা নিউ ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিতি সদ্য-আবিষ্কৃত নতুন অঞ্চল
আমেরিকা ভূখণ্ডটি ইউরোপীয় নানা দেশের শোষণ, নির্যাতন ও আধিপত্য কায়েমের
ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ইতিহাস জানাচ্ছে যে, ইংরেজরা বর্তমান আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে দখল করলেও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আজকের ফ্লোরিডা ও
আশেপাশের এলাকায় শাসন প্রতিষ্ঠা করে স্পেন। ফরাসিরা নোভো-স্কটিয়া অঞ্চলে, ওলন্দাজ বা ডাচগণ হাডসন নদীর উপত্যকায় এবং সুইডিশরা ডেলাওয়ার অঞ্চলে
নিজেদের উপনিবেশ কায়েম করে।
ঐতিহাসিক তথ্য মতে, আমেরিকার প্রথম স্বীকৃত
উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬০৭ সালে, জেমস টাউন-এ। ১৭৩২ সালে
পুরো অঞ্চলে উপনিবেশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩টিতে এবং সকল উপনিবেশই ছিল ইউরোপের
বিভিন্ন শক্তির দখল কর্তৃত্বে।
১৬৬৪ সালে ব্রিটিশরা ওলন্দাজদের হটিয়ে দিয়ে ওলন্দাজ-অধিকৃত
অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এরপর স্পেন-অধিকৃত অঞ্চলেও ইংরেজরা
নিজেদের শাসন কায়েম করতে সক্ষম হয়। অবশেষে ১৭৬৩ সালে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধে জয়ী হয়ে
ইংরেজরা সমগ্র আমেরিকার উপর নিজেদের দখল ও শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
ব্রিটিশ অধিকৃত সমগ্র আমেরিকায় উপনিবেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
সেখানে তীব্র হয় স্বাধীনতার আন্দোলন, যা মাত্র ১৩ বছরের মাথায়
ভেঙে পড়ে ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে। ১৭৭৬ সালে ১৩টি উপনিবেশ
একত্রে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে লড়তে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের
মুক্তির দাবিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। উপনিবেশগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্যের
পাশাপাশি নিজস্ব সামরিক বাহিনীও গড়ে তুলে। ৪ জুলাই, ১৭৭৬
সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর করে ১৩টি উপনিবেশের নেতৃবৃন্দ।
৪ জুলাই (১৭৭৬) তারিখটি আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত
গুরুত্ববহ। কারণ,
এদিনে স্বাধীন-সার্বভৌম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সূচনা হয়। বর্তমানেও
৪ জুলাই সেদেশের স্বাধীনতা দিবস রূপে পালিত হয়।
তবে ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের কবল থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রে
পরিণত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অবয়বটি সম্পূর্ণ হয় দীর্ঘ শাসনতান্ত্রিক
আলাপ-আলোচনা ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৮৭ সালে সর্বপ্রথম
আমেরিকার সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৩টি রাজ্য নিয়ে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র থেকে
আনুষ্ঠানিকভাবে ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আত্মপ্রকাশ করে। দেশটি প্রজাতান্ত্রিক নীতিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃত্ব শাসিত হওয়ার
অঙ্গীকার গ্রহণ করে।
দুই বছর পর ৪ মার্চ, ১৭৮৯ সালে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সকলের সম্মতির ভিত্তিতে কার্যকর হয়। সংবিধান অনুযায়ী
মার্কিন সংসদে দুটি কক্ষ থাকে। একটি নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি সভা (হাউস অব
রিপরেসেনটিটিভ) এবং অপরটি উচ্চকক্ষ বা সিনেট। একই বছর ৩০ এপ্রিল প্রথম মার্কিন
রাষ্ট্রপতি হিসাবে জর্জ ওয়াশিংটন এবং উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে জন অ্যাডামস নির্বাচিত
হয়ে শপথ গ্রহণ করেন।
প্রাথমিকভাবে ১৩টি রাজ্য নিয়ে গঠিত হলেও বর্তমানে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০টি। এর বাইরে ফেডারেশন শাসিত রাজধানী ওয়াশিংটন
ডিসি,
পাঁচটি মেজর টেরিটোরি ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র দ্বীপও রয়েছে
বিশাল এ দেশের মধ্যে।
আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ১৭৭৬ সালে শুরু হয়ে ২৪৪
বছরের আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ইতিহাস ২৩৩ বছরের। বলা বাহুল্য, আজকের এই
মহাশক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু শুরুতে এতো প্রবল ছিলনা। ছিল সাদা আর কালোর
গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। যে কারণে প্রায় আড়াই শ বছরের পুরনো রাষ্ট্র হলেও মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বশক্তি হিসাবে অতি নবীন।
কারণ রাষ্ট্র গঠনের প্রথম ১৫০ বছর আভ্যন্তরীণ সমস্যার
মোকাবেলা ও পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে
নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। এই সময়কালে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণে
দেশটির বিদেশ নীতি ইচ্ছুক ছিলনা। মার্কিনি পররাষ্ট্র নীতির ইতিহাসে এই সময়কালকে
বলা হয় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী পর্যায়’।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিস্থিতি বদলাতে থাকে এবং
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবলভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময়,
বিশেষত ১৯৪০ সাল থেকে বিশ্ব রাজনীতিতে দেশটি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অগ্রসর হয়, যার ফলে মহাযুদ্ধ বিজয়ের
অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তারপর স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠাণ্ডা যুদ্ধকালীন উত্তপ্ত দ্বিমেরু
কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ব্লকের
বিপরীতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্ব দেয়। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর এককেন্দ্রিক
বিশ্বব্যবস্থার উদ্ভব হলে বিশ্ব রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসীন হয় যুক্তরাষ্ট্র।
এবং কঠিন পথ পেরিয়ে উপনিবেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমে ক্রমে একবিংশ শতকের
পৃথিবীতে একক পরাশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি সহ
একটি অত্যন্ত উন্নত দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে
শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে এবং এর সংস্থাগুলি প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে, বিশেষত
কম্পিউটার, ফার্মাসিউটিক্যালস ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, মহাকাশ এবং সামরিক সরঞ্জামগুলিতে সামনের দিকে বা নিকটে রয়েছে। মার্কিন
ডলার হল আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলিতে সর্বাধিক ব্যবহৃত মুদ্রা এবং এটি বিশ্বের
শীর্ষস্থানীয় রিজার্ভ মুদ্রা, এর অর্থনীতি তার সামরিক,
পেট্রোডলার ব্যবস্থা ও এর সাথে যুক্ত ইউরোডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে
বৃহৎ ট্রেজারি মার্কেট দ্বারা সমর্থিত।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্য
অংশীদার হল চীন, কানাডা, মেক্সিকো,
জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ
কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত এবং তাইওয়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক এবং
দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার নাম মার্কিন ডলার। এর
কাগুজে নোটের নকশা অনুযায়ী একে চলতি ভাষায় 'গ্রীন বাক' হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এর সাংকেতিক চিহ্ন $, তবে অন্যান্য দেশের ডলার নামক মুদ্রা থেকে আলাদা করার জন্য একে
আন্তর্জাতিক দলিলাদিতে US$ লেখা হয়। এর এক শতাংশের নাম
সেন্ট। ১ ডলার ১০০ সেন্ট এর সমতূল্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যটক আকর্ষণের দিক থেকে ও অনেক এগিয়ে। এখানের পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে রয়েছে -
• ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান - বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান, ইয়েলোস্টোন হল ওল্ড ফেথফুল উষ্ণ প্রসবণ, সেইসঙ্গে বিশ্বের উষ্ণ প্রসবণের অধিকাংশেরই আবাসস্থল। ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানটি প্রাথমিকভাবে ইয়োমিঙ্গ এ অবস্থিত, সঙ্গে মোন্টানা ও ইডাহোর অন্যান্য ছোট অংশের মধ্যেও ব্যাপ্ত রয়েছে। দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের প্রবেশপথটি ইয়োমিং থেকে উপলব্ধ রয়েছে, অন্যদিকে উত্তর, পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব প্রবেশপথটি মোন্টানায় অবস্থিত। ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান সু-সংরক্ষিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বৈশিষ্ট্যযুক্ত। উদ্যানটিতে বেশ কিছু বিশিষ্ট উষ্ণ প্রসবণের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট অববাহিকা, গ্র্যান্ড প্রিজম প্রসবণ, মিডওয়ে উষ্ণ প্রসবণ অববাহিকা, আপার উষ্ণ প্রসবণ অববাহিকা, নরিস উষ্ণ প্রসবণ অববাহিকা, ম্যামথ উষ্ণ প্রসবণ, ওল্ড ফেথফুল. ওয়েষ্ট থাম্ব উষ্ণ প্রসবণ অববাহিকা, লোন স্টার উষ্ণ প্রসবণ এবং ক্যাসেল উষ্ণ প্রসবণ।আর্টিস্ট পয়েন্ট, লামার উপত্যকা হল উদ্যানটির সবচেয়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিগোচর জিনিস। উদ্যানটি ১৮৭২ সালের ১লা মার্চ স্থাপিত হয়েছিল। এটি প্রায় ২,২১৯,৭৯১ একর এলাকা জুড়ে আবৃত রয়েছে। ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান, ১৯৭৮ সালে ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষিত হয়।
• আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.তে অবস্থিত হোয়াইট হাউস - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির গৃহ এবং নির্বাহী অফিস হল হোয়াইট হাউস, যা ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের জন্য আমেরিকার সরকার এবং ক্ষমতার এক প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ন্যাশনাল মল-এর উত্তর-পশ্চিমী প্রান্তে অবস্থিত। সার্বজনীন উদ্যান ইলিপ্স ও ন্যাশনাল ক্রীসমাস ট্রি, হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। আমেরিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে হোয়াইট হাউসের জন্য এই স্থানটির নির্বাচন করেছিলেন। হোয়াইট হাউসের নির্মাণকার্য ১৭৯২ খ্রীষ্টাব্দে সূচনা হয়। নকশা প্রতিযোগিতায় স্থপতিবিদ জেমস হোবানের নকশাটি নির্বাচিত হয়।
রাষ্ট্রপতি জন আ্যডামস এবং তাঁর স্ত্রী আ্যবিগাইল হোয়াইট
হাউসের প্রথম অধিবাসী ছিলেন। হোয়াইট হাউস হল একটি জাতীয় প্রতীক এবং আমেরিকান
স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্মিত তালিকায় এটি দেশের সেরা স্থাপত্যগুলির মধ্যে
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে।
• টাইমস স্কোয়্যার - বিশ্বের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতীকি আকর্ষণ টাইমস স্কোয়্যার, নিউ ইয়র্কের ব্যস্তময় শহর ও সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। সংবাদপত্রের নামানুসারে “নিউ ইয়র্ক টাইমস” ১৯০৪ সালে তার সদর-দপ্তরটি স্কোয়্যার-এ স্থানান্তরিত করে নেয়। টাইমস স্কোয়্যার এখন একটি প্রধান বিনোদনমূলক কেন্দ্র, টেলিভিশন স্টুডিও, ব্যবসায়িক এবং শত-শত উজ্জ্বল বর্ণময় বিলবোর্ডের ঝলকানির আবাসস্থলবেশ কিছু চলচ্চিত্রে তার অপরিমেয় জনপ্রিয়তার কারণে টাইমস স্কোয়্যারের চিত্রগ্রহণ দেখানো হয়েছে “টাইমসস্কোয়্যার” (১৯৮০), “দ্য স্ট্যান্ড” (১৯৯৪), “ডিপ ইমপ্যাক্ট” (১৯৯৮) এবং “নোয়িং” (২০০৯)। একজন চিত্তবিনোদন প্রেমীর জন্য টাইমস স্কোয়্যার-এ সমস্ত কিছু রয়েছে।
• নিউ ইয়র্ক সিটি - বিশ্বের মহত্তম শহর হিসাবে বিবেচিত। বিগ আপেল হিসাবেও এ শহর পরিচিত। নিউ ইয়র্ক সিটি প্রচুর মানুষের দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধতম শহর হিসাবে বিবেচিত হয়। শহরটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসাবে রয়েছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ন্যাশনাল মনুমেন্ট। এগুলি ছাড়াও এখানে অবস্থিত টাইমস স্কোয়্যার এবং দ্য এম্প্যায়ার স্টেট বিল্ডিং বেশ জনপ্রিয়।
• স্ট্যাচু অফ লিবার্টি মনুমেন্ট, নিউ ইয়র্ক - স্বাধীনতার প্রতীক, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আগন্তুক বা নবাগতদের সাদর সম্ভাষণায়, নিউ ইয়র্ক হারবার-এ দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৯৮৪ সালে, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় তালিকাভূক্ত হয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সের থেকে প্রাপ্ত উপহার হিসাবে, মূর্তিটি ১৮৮৬ সালে ২৮-শে অক্টোবর, ফ্রেডেরিক-অগাস্টে বার্থওল্ডি দ্বারা নকশায়িত ও উৎসর্গীকৃত হয়েছিল। স্থাপত্যবিদ ইউগেনে ভাইওল্যেট-লে-ডাক, মূর্তিটির ভারবহনকারী বুনিয়াদটির নির্মাণ করেছিলেন। মূর্তিটি ১৫১ ফুট 1 ইঞ্চি (৪৬ মিটার) উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটির মোট ওজন হল ৪৫০,০০০পাউন্ড। মূর্তিটির চূড়াটিতে ২৫-টি জানলা রয়েছে, যা সমুদ্রের এক অত্যাশ্চর্য্য দৃশ্য অবলোকনের প্রস্তাব দেয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বে তিনটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি রয়েছে।
প্রথমটি আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। দ্বিতীয়
মূর্তিটি প্যারিসের লাক্সেমবার্গ-এর বাগিচায় এবং তৃতীয়টি ফ্রান্সের সোয়ান
আইল্যান্ডে অবস্থিত।
এছাড়াও নিউ ইয়র্কের সেন্ট্র্যাল পার্ক, অরল্যান্ডোর
সীওয়ার্ল্ডে একটি ডলফিনের দৃশ্য, আ্যরিজোনার গ্র্যান্ড,
ক্যানিয়ন হলো নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে অন্যতম প্রসিদ্ধ ও বহুল পরিদর্শিত
পর্যটন গন্তব্যস্থল।
No comments