Adsterra

ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা

ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা  ঢাকা ভয়েজ  dhaka voice;


বিংশ শতাব্দীর অন্যতম আবিষ্কারের মধ্যে অন্যতম একটি হলো বিমান তথা উড়োজাহাজ। যে আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে এক ঝটকায় উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। একটা সময় মানুষের স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার।

১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাইট ভ্রাতৃদ্বয় এ মাধ্যমে মানুষের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। বর্তমানে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিমানে করে মানুষ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌছে যায়। তবে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিতে গিয়ে ঘটে গেছে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা। নিভে গেছে অনেক মানুষের জীবন প্রদীপ।

আকাশ পথের যাত্রীদের জন্য বিমান দুর্ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো। যদিও উড়োজাহাজ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদ ট্রান্সপোর্টেশন হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু একবার দুর্ঘটনার মুখে পড়লে বেঁচে ফেরার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তাই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের মনে বেশ ভীতি কাজ করে।


ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এমন কয়েকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হল :

এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ : ১৯৮৫ সালের ২৩শে জুন বোয়িংয়ের অন্যতম সেরা উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৪৭ আটলান্টিক মহাসাগরের উপরে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়। এসময় বিমানটি আইরিশ আকাশসীমায় ৩১০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে চলছিলো। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৩২৯ জন প্রান হারায়। নিহতদের মধ্যে ২৬৮ কানাডিয়ান, ২৭ জন ব্রিটিশ এবং ২৪ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। নাইন ইলেভেনের আগে এটাই ছিলো বিশ্বের অন্যতম একটি প্রাণঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলা। কানাডার একটি তদন্ত কমিটি এই ঘটনার পেছনে ভারতীয় শিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছিলো। ধারণা করা হয় হামলাকারী শিক জঙ্গি তার সুটকেসে করে একাধিক শক্তিশালী বোমা নিয়ে বিমানে অবস্থান করছিলো। ভ্রমনের ঠিক মধ্যপথে সে এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। তবে কীভাবে এই সুটকেসটি নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ এরিয়ে বিমানে পৌঁছেছিলো এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়।

১৯৯৬ চার্খি দাদরী মধ্য-আকাশ সংঘর্ষ : ১৯৯৬ সালের ১২ই নভেম্বর ভারতের নয়া দিল্লির পশ্চিমাংশের একটি গ্রাম চার্খি দাদরী এর আকাশে এই দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছিলো। যে দুটি বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিলো তার একটি ছিল সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স বোয়িং ৭৪৭। এটির যাত্রাপথ ছিলো দিল্লি থেকে সৌদি আরবের দাহরান। অন্যটি ছিলো কাজাকিস্থান এয়ারলাইন্সের লুসিয়ান আইএল-৭৬, যার যাত্রাপথ ছিল কাজাকিস্থান থেকে দিল্লি। এই সংঘর্ষে উভয় বিমানের ৩৫৯ জন যাত্রীর সকলেই নিহত হয়েছিলো। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী মধ্যে-আকাশ সংঘর্ষ এবং উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ইতিহাসের ৩য় প্রাণঘাতী ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিলো কাজাকিস্থান পাইলটের নির্ধারিত উচ্চতা থেকে আর নিম্নে বিমানটি পরিচালনা করা, যার কারনে বিমানটির লেজের অংশ আরব বিমানের বাম পাখায় ধাক্কা খায় এবং দুটি বিমানই আগুন লেগে মাটিতে ভূপাতিত হয়।

জাপানিস এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১২৩ : ফ্লাইট ১২৩ বিমানটি জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে এসারকো যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত ছিলো। ১৯৮৫ সালের ১২ আগস্ট বোয়িং ৭৪৭ মডেলের এই বিমানটি প্রায় ১২ মিনিট ধরে একটি অগ্নিচূর্ন ডিকম্প্রেশনের মধ্য দিয়ে যায় এবং ৩২ মিনিট পরে টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বিধ্বস্ত হয়। ১৫জন বিমানক্রু এবং ৫০৯ জন যাত্রীর ৫০৫ জনই এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জানা যায়, ৭ বছর আগে সংগঠিত একটি দুর্ঘটনার পরে এই একই বিমানের লেজের অংশ মেরামত করা হয়েছিলো। তবে এই মেরামত ছিলো ত্রুটিপূর্ন এবং প্রচন্ড হাইড্রোলিক চাপে এই মেরামতের অংশটি খুলে যায়। এতে বিমানের লেজ ভেঙ্গে গিয়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। এটি এখন পর্যন্ত জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা।

টার্কিশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৮১ : টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর ৯৮১ ফ্লাইটটি ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট থেকে প্যারিসে একটি বিরতির পরে ইংল্যান্ডের হার্টথ্র এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত ছিলো। ১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ, বিমানটি প্যারিস সংলগ্ন আরমিননভিলে ফরেস্টের উপরে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় বিমানে অবস্থানরত ৩৪৬ জন যাত্রীই প্রান হারায়। বিমানটি খাড়াখাড়ি ভাবে নিচের দিকে পতিত হয় এবং মুহুর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে তদন্তে উঠে এসেছিলো যে, বিমানটি ফ্রান্সের নিকটবর্তী একটি বন অতিক্রম করার সময় নির্মাণ ত্রুটির কারনে এর অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন একটি কার্গো ডোর ভেঙ্গে যায়। ফলে প্রচুর পরিমানে বাতাস উড়োজাহাজে নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করে এবং নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বিমানটি ভূপতিত হয়।

টেনরিফ বিমান বিপর্যয় : এই দুর্ঘটনাটি ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ সংঘটিত হয়েছিলো। একটি একেএলএম বোয়িং ৭৪৭ বিমান সংকেত ছাড়া উড্ডয়নে চেষ্টারত ছিলো এবং সংঘর্ষ হয়েছিলো রানওয়েতে অবস্থানরত প্যান আম ৭৪৭ বিমানের সাথে। এই সংঘর্ষে একেএলএম এয়ারক্রাফটের কোন যাত্রীই বাঁচেননি। ৫৮৫ জন যাত্রী এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলো। কিন্তু আকস্মিকভাবে প্যান আমের ৬১জন ক্রু এবং ৩৯৬ জন যাত্রী সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো। পাইলটের ত্রুতিই ছিলো এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। পাইলট ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই উড্ডয়নের চেষ্টা করেছিলেন। তবে বলা হয় ঘন কুয়াশার কারণে বিমানের ক্রুরা সংঘর্ষের একদম কাছে পৌঁছানোর আগে প্যান আম উড়োজাহাজটি দেখতে পান নি। এই ঘটনার অনেক বড় প্রভাব পড়েছিল সমস্ত এয়ারক্রাফট কমিউনিটিতে। অনেকেই পাইলটদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে বিমান নিয়ে নিখোঁজ অ্যামিলিয়া ইয়ারহার্ট : আমেরিকার বিমানচালনার পথপ্রদর্শক অ্যামিলিয়া ইয়ারহার্ট ১৯৩৭ সালে ২ জুলাই পৃথিবী প্রদক্ষিণকালে তার নেভিগেটরসহ নিখোঁজ হয়। তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিমানচালক যিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি হাউল্যান্ড দ্বীপে এটি নিখোঁজ হয়ে যায়। অ্যামেচার গবেষকদের মতবাদ তার বিমানের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় এটি বিধ্বস্ত হয়। অন্যদের মতবাদ তিনি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজবেল্টের গুপ্তচর ছিলেন বলে তাকে জাপানের সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছে। অন্যরা বলে থাকেন তিনি বিমান নিয়ে জাপানের কোন দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছেন। আর সবচেয়ে মজার যে তথ্যটি পাওয়া যায় তা হলো, এলিয়েনরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।

ফ্লাইট-৫৭১ এর আন্দিজ পর্বতের দুর্যোগ : উরুগুয়ান এয়ার ফোর্সের চার্টার বিমান ৪৫ জন যাত্রীসহ খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেই যাত্রা শুরু করে আন্দিজ পর্বতের উপর দিয়ে। যাত্রার প্রায় আধা ঘণ্টা পর বিধ্বস্ত হয় আন্দিজ পর্বতমালায়। বিধ্বস্তের সাথে সাথেই মারা যায় ১২জন যাত্রী। পরদিন মারা যায় আরও ছয়জন। ৮ জন যাত্রী প্লেন দুর্ঘটনার স্থান থেকে হাঁটতে থাকেন লোকালয়ের উদ্দেশ্যে। বাকি ১৬ জন বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন নরমাংসভক্ষণের মাধ্যমে। ৭২ দিন পর্যন্ত তাদের কেউ খুঁজে পায়নি। বেঁচে থাকে মাত্র দুইজন, যাদের খুঁজে পায় একজন গ্রাম্য ফেরিওয়ালা। সে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। এছাড়াও বিএসএএ গ্রুপের আরেকটি ফ্লাইটে 'স্টার এরিয়াল' নামের একটি বিমান ১৯৪৯ সালে বারমুডা থেকে জ্যামাইকা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ আজীবনের জন্য বিএসএএ স্টার গ্রুপের সব বিমান বন্ধ করে দেয়।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে নিখোঁজ ফ্লাইট ১৯ : ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেল। ইউএস নৌবাহিনীর বিমান ডিভিশনের ট্রেনিং সেশন চলছিল সেদিন। বিকেলবেলা ফ্লোরিডার মাটি থেকে আকাশে উড়লো একে একে ছয়টি বিমান, কিন্তু ফিরে আসেনি এর একটিও। এর ফলেই জন্ম নেয় এক অবিশ্বাস্য রহস্য- বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিলো এই সেশন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৈমানিকদের আপডেট ছিল, তারা সামনে ঘন বায়ুস্তর ছাড়া কিছুই দেখছেন না এবং তাদের কম্পাস অনবরত ঘুরছে, কোনো দিক নির্দেশ করছে না। প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য তাদের উদ্ধারে নৌবাহিনী থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এভাবেই সেই ছয়টি বিমান এবং তাদের বৈমানিকরা হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য।

ইংলিশ চ্যানেলে নিখোঁজ বৈমানিক গ্লিন মিলারের বিমান : গ্লিন মিলার ছিলেন ইউএস এয়ারফোর্সের বিগ ব্যান্ড পদক প্রাপ্ত একজন বৈমানিক। ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মে তিনি প্যারিসে বিমানবাহিনীর বার্ষিক প্রদর্শনীতে ছিলেন। ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৪৪ সালে তিনি প্যারিস থেকে আকাশে উড়াল দেন এবং ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় নিখোঁজ হন। তার এই নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অনেক গালগল্প প্রচলিত ছিল। কেউ কেউ বলেন জার্মান বোম্বাররা তার বিমান ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার মতবাদটি দেন একজন জার্মান সাংবাদিক। তিনি একটি জার্মান পত্রিকায় লিখেন মিলার বেঁচে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান প্যারিসের একটি পতিতালয়ে। এখন পর্যন্ত তার নিখোঁজের কারণটি অজানা।

 

 

 

 

 

No comments

Powered by Blogger.