Adsterra

১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের ২৫ মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর

১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের ২৫ মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর

২৫ মার্চ কালো রাত থেকে ঢাকায় যুদ্ধের শুরু হলেও ১৯ এপ্রিল বিকেলে পাক হানাদার বাহিনী কিশোরগঞ্জে প্রথম আসে। আসার পথে গচিহাটা থেকে রাস্তার দুইপাশের বাড়ি ঘরে আগুনে পুড়িয়ে সব ছারখার করে। এলাকা জুড়ে বিভিষিকাময় আতংকের সৃষ্টি করে। আর তাদের বুলেটে কিশোরগঞ্জে প্রথম শহীদ হন সন্নাসী, যাকে সবাই মামু বলে ডাকতো। এর পর থেকেই সারা কিশোরগঞ্জে শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর তান্ডবলীলা। ঘর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। দোসরদের সহযোগীতায় চালায় লুটপাট, হত্যা আর ধ্বংস যজ্ঞের খেলা।

কিশোরগঞ্জে বর্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক ছিল নরপশু মেজর ইফতেখার। এই নরপশুর পাশবিকতা কিশোরগঞ্জে এক বিভিষিকা সৃষ্টি করে ছিল। নরপশুদের সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে ১৫ অক্টোবর ৭১, কিশোরগঞ্জ সদর থানার বড়ইতলা নামক স্থানে। হানাদার বাহিনী এলাকার রাজাকারদের সহায়তায় আশপাশের প্রায় ছয় সাত টি গ্রামের নিরীহ লোকদের কে জড়ো করে এক পর্যায়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে ৩৬৫ জন গ্রামবাসীকে। আহত অবস্থায় তাদের কেউ কেউ আজও বেঁচে আছে।

সম্ভবত মার্চ ৭১ সালে কিশোরঞ্জ শহরে সর্ব প্রথম স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত এক বিরাট মিছিল বের হয়। ১০ মার্চ রথখোলার মাঠে স্বাধীনতার পতাকাও উঠে গেছে। সেদিন এক সমাবেশে বেতার টি,ভি শিল্পী বিপুল ভূট্টাচার্য গান গেয়েছিল- "মানবো না মানবো না মিলিটারীর কোন শাসন মানবো না"

 

১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও কিশোরগঞ্জ শহর সত্যিকার অর্থে বিজয় দিবসেও বিজয় দেখেনি। কারণ এখানে বিজয় এসেছে ১৭ই ডিসেম্বর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, বিজয় দিবসেও এখানে পাকবাহিনীর দোসর দালাল সাথে মুক্তিসেনাদের প্রচন্ড লড়াই হয়েছে। রক্ত ঝরেছে। এর আগে মুক্তিবাহিনীর দাপটে পাকহানাদার বাহিনী ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ ছেড়ে গেলেও তাদের দোসর আল মুজাহি, আলবদর বাহিনী, আল সামস রাজাকারদের দল ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ কে পাকিস্তান বানিয়ে রাখে। তৎকালীন কিশোরগঞ্জ শহরকে শত্রুমুক্ত করতে ১৬ ডিসেম্বর রাতে চারদিক থেকে গেরিলা মুক্তিসেনারা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন চৌহানের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী প্রচন্ড গুলি বর্ষন করলে হানাদার বাহিনীর দোসররা কম্পিত হয়ে ওঠে। সে রাতে বেশ কয়েকজন আলবদর, রাজাকার নিহত হয়। শত্রুমুক্ত হয় কিশোরগঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.