Adsterra

ওয়াগনার গ্রুপের এখন কী হবে ?

 

ওয়াগনার গ্রুপের এখন কী হবে ?

গত জুনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। সেই বিদ্রোহের দুই মাসের মাথায় বুধবার (২৩ আগস্ট) বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর বের হয়েছে। বিদ্রোহের পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে সময় নিয়ে প্রতিশোধ নেবেন।

প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটিতে কী হয়েছিল সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়— তবে একটি বিষয় পরিষ্কার— বিদ্রোহের পর প্রথমে প্রিগোজিনের গঠিত বাহিনীকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে— সর্বশেষ পুরোপুরি শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপ অনেক বড় অবদান রেখেছিল। দশ মাসেরও বেশি সময় লড়াই করে রাশিয়াকে বাখমুত শহরের দখল এনে দিয়েছিল তারা। কিন্তু জুনের সেই বিদ্রোহের পর ইউক্রেনে ওয়াগনারের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া প্রিগোজিনকে পর্দার অন্তরালে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু আফ্রিকায় সেনা পাঠিয়ে প্রিগোজিন যে একটি প্রভাব অর্জন করেছিলেন সেটি কাজে লাগিয়ে— কিছু সময়ের জন্য হলেও— আবারও প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন তিনি।

মৃত্যুর কয়েকদিন আগে আফ্রিকার কোনো একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন প্রিগোজিন। সেখানে তিনি নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এছাড়া রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

প্রিগোজিনকে বহনকারী যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে— বিধ্বস্তের আগে সেটি মস্কোর কাছের তেভার অঞ্চলের ওপর ছিল। বিমানটিতে প্রিগোজিন ছাড়াও ওয়াগনারের আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভূপাতিত করা হয়েছে।


এই ঘটনায় শুধু প্রিগোজিনই প্রাণ হারাননি, তার সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন ওয়াগনারের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। জুনে ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ করে মস্কোর পথে যে রওনা দিয়েছিল— সেটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন দিমিত্রি উটকিন। ভাড়াটে এ সেনা সিরিয়ায় তেলখনিগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলেন।

ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে বলা হয়েছে, ওই বিমানে বাহিনীটির আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।

এখন যে বিষয়টি পরিষ্কার সেটি হলো, ওয়াগনার বলতে এখন আর কিছু নেই।

বিদ্রোহের পর ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বেলারুশে। তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বেলারুশে যাওয়া সেসব সেনা দেশটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বেলারুশে যাওয়া সেনাদের মধ্যে অনেকে বেতন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, এ কারণে অনেকে পূর্ব আফ্রিকার দেশে চলে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেলারুশে ওয়াগনারের সেনার সংখ্যা প্রথমে ৫ হাজার হলেও সেটি চার ভাগের তিন ভাগ কমে গেছে।

ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, আফ্রিকার যে দেশগুলোতে ওয়াগনারের শক্ত অবস্থান ছিল সেখানে তারা তা ধরে রাখতে পারবে কিনা।

যদিও আফ্রিকার দেশগুলোয় অবস্থানরত ওয়াগনার সেনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আজ্ঞাবহ নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে প্রশ্ন থাকবে, তিনি প্রিগোজিনের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন কিনা।

আফ্রিকায় ওয়াগনারের যে প্রভাব বিস্তার হয়েছে সেটিতে প্রিগোজিনের অবদান ছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা দেখভাল করছিলেন। কিন্তু ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল।

ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সাবেক ভাইস-মার্শাল সিন বেল গত জুনে বিদ্রোহের পর স্কাই নিউজকে বলেছিলেন, ‘প্রিগোজিনকে ছাড়া ওয়াগনার কিছুই নয়। যদি ওয়াগনার গ্রুপ ইয়েভগিনি প্রিগোজিন হয়ে থাকে। তাহলে এটি কীভাবে টিকে থাকবে সেটি দেখা কঠিন হবে। আমরা যা জানি এরমাধ্যমে ওয়াগনারের সমাপ্তি হয়েছে।’


সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান


No comments

Powered by Blogger.