Adsterra

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, পৃথিবীর ৫ম সুন্দর শহর

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, পৃথিবীর ৫ম সুন্দর শহর ঢাকা ভয়েজ  dhaka voice;


ভিয়েনা
বিশ্বের অন্যতম কসমোপলিটন শহর। বিশাল ঐশ্বর্যমণ্ডিত রাজকীয়তা, তার রোমাঞ্চকর দর্শনীয় অভিজ্ঞতা এবং রহস্যময়তায় ঘেরা নাগরিক বৈচিত্র্যময়তার স্বাদে পরিপূর্ণ এক শহর। শহরের বিভিন্ন স্থাপনা আধুনিক এবং মধ্যযুগীয় দুই স্থাপত্যেরই এক অপূর্ব মিশেলে তৈরি হয়েছে। ইউরোপের প্রায় সব দেশের স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাবে ভিয়েনায়। এখানকার প্রাসাদ, জাদুঘর, অপেরা হাউস থেকে ক্যাথেড্রাল, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরিসহ প্রশাসনিক অফিসগুলোতেও ডিজাইন- সবখানে নান্দনিক স্থাপত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।

ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী। এটি অস্ট্রিয়ার দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত। ভিয়েনা শহরটি অস্ট্রিয়ার পূর্ব অংশে অবস্থিত এবং ইহার নিকটেই চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরি অবস্থিত। এই শহরগুলো ইউরোপীয় সেন্ট্রোপ (প্রজেক্ট) সম্মিলিতভাবে কাজ করে।ভিয়েনার আয়ত রাজধানী শহর৪১৪.৬৫ বর্গকিমি (১৬০.১০ বর্গমাইল) স্থলভাগ৩৯৫.২৬ বর্গকিমি (১৫২.৬১ বর্গমাইল)জলভাগ ১৯.৩৯ বর্গকিমি (.৪৯ বর্গমাইল) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অস্ট্রিয়ার অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। অস্ট্রিয়া নিজে একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অস্ট্রিয়ার অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে এবং একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নতুন রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্য বাধার সৃষ্টি করলে অস্ট্রিয়া তার প্রাক্তন বৈদেশিক বাজার এবং জ্বালানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্যের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অস্ট্রিয়াতে রক্ষণশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। যে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ভিয়েনাকে সামাজিক গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছিল, ১৯৩৪ সালে তাদের পতন ঘটে এবং ডানপন্থী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়াকে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি অস্ট্রিয়া দখল করে। এসময় মার্কিন সোভিয়েত সেনারা এখানে অবস্থান করছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রিয়া আবার স্বাধীন হয় এবং তারপর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।

অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। অস্ট্রিয়ার রাজনীতি- ভিত্তি একটি কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা, যেখানে চ্যান্সেলর হলেন সরকারপ্রধান। এটি একটি বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সরকার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা দ্বি-কাক্ষিক সংসদ।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে বিশ্বের প্রথম মনোবিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর জন্মস্থান এই শহরে হওয়ায় ভিয়েনাকে "স্বপ্নের শহর" বলা হয়।

ভিয়েনার উল্লেখযোগ্য লেখকদের মধ্যে রয়েছে কার্ল লিওপোল্ড ফন মোলার, কার্ল জুলিয়াস হাইডভোগেল, ফ্রাঞ্জ কাফকা, আর্থার স্নিটজলার, ইলিয়াস ক্যানেটি, ইঙ্গেবার্গ বাচম্যান, রবার্ট মুসিল প্রমুখ।

ভিয়েনায় জন্মগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য সংগীতশিল্পীদের মধ্যে রয়েছে লুই অস্টেন, অ্যালবান বার্গ, ফ্যালকো, ফ্রিটজ ক্রিসলার, জোসেফ ল্যানার, আর্নল্ড শোনবার্গ প্রমুখ।

বিনোদনকারীদের মধ্যে রয়েছে হেডি লামার, ক্রিস্টোফ ওয়াল্টজ, জন ব্যানারএরিক পোহলম্যান, বরিস কোডজো, ক্রিস্টিন বুচেগার, মিশা হাউসেরম্যান, সেন্টা বার্জার প্রমুখ।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য ইউরোপের এই শহরটি ভ্রমণপিয়াসীদের আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে ভিয়েনা।এর রাজকীয় রূপ, অসাধারণ বারোক স্থাপত্য, সঙ্গীত নাট্যকলা জগদ্বিখ্যাত। এর অন্যতম কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে,

ভিয়েনা স্টেট অপেরা: অপেরা মিউজিক্যাল থিয়েটারের প্রাণকেন্দ্র ভিয়েনা। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভিয়েনা স্টেট অপেরা। মোজার্ট তার কর্মজীবন সালসবার্গে শুরু করলেও ভিয়েনায় জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন। এই সময়েই তৈরি করেছেন তার অসামান্য সব সুর সৃষ্টি। প্রতি সন্ধ্যায় ভিয়েনা স্টেট অপেরায় অর্কেস্ট্রার আয়োজন করা হয়। স্টেট অপেরায় কোনো অপেরা বা অর্কেস্ট্রার সাক্ষী থাকা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। এই স্টেট অপেরার স্থাপনা ডিজাইনে নিও রেনেসাঁ যুগের চেক জার্মান স্থাপত্যই মূলত প্রাধান্য পেয়েছে।

সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রালভিয়েনার এই ক্যাথেড্রালটি রোমান গথিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। ক্যাথেড্রালের ভিতরের ফ্রেসকো পেন্টিং থেকে শুরু করে এর স্ট্রাকচারাল দর্শন সবকিছুই দেখার মতো। এর প্রাচীন নানা কালেকশন সবদিক থেকেই অনন্য।

স্কনব্রান প্যালেসস্কনব্রান প্যালেস ভিয়েনার জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। এখানে ইতিহাস, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এর বিশালত্বের কোনো তুলনা নেই। কারুকার্যময় প্যালেসের চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক পরিখা, সাথে বিশাল উদ্যান। উদ্যানের মধ্যে শ্বেত পাথরের মার্বেলে তৈরি অসংখ্য রোমান ভাস্কর্য। প্যালেসের ভিতরের মিউজিয়ামও কম আকর্ষণীয় নয়।

বেলভেডেয়ারভিয়েনার ঐতিহাসিক এক বিল্ডিং কমপ্লেক্স এই বেলভেডেয়ার। এর আপার লোয়ার বেলভেডেয়ার নামে দুটি প্রাসাদ রয়েছে। এই প্যালেসগুলোর নির্মাণে ফরাসি স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। প্রাসাদ সংলগ্ন উদ্যানটিও বেশ সুন্দর। উদ্যানের মাঝে স্থাপিত পানির ফোয়ারার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এক অপূর্ব রোমান ভাস্কর্য।

ভোকস থিয়েটার মিউজিয়াম কোয়ার্টারএকদিকে ভোকস থিয়েটার এবং অন্যদিকে রয়েছে মিউজিয়াম কোয়ার্টার। এই মিউজিয়াম চত্বরে শিল্পকলা থেকে সাহিত্য, ন্যাচারাল সায়েন্স থেকে শুরু করে টেকনোলজি সব ধরনের মিউজিয়াম রয়েছে। এখানে মর্ডান কনটেম্পোরারি আর্টের মিউজিয়াম আর তার নান্দনিক সব স্থাপত্য সত্যিই অতুলনীয়। এছাড়া ভিয়েনার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ঐতিহাসিক সেইন্ট পিটার্স চার্চ, ভিয়েনার পুরাতন চিড়িয়াখানা, ভিয়েনা সিটি হল, ভিয়েনা ফাইন আর্ট মিউজিয়াম, ন্যাশনাল থিয়েটার, অস্ট্রিয়ান ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম অন্যতম।

ভিয়েনা এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে আদৃত। ভিয়েনার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অস্ট্রিয়ার অসাধারণ সৌন্দর্যময় পার্বত্য ভূদৃশ্যাবলীর টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন।

No comments

Powered by Blogger.