Adsterra

ইন্দিরা গান্ধী || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান

ইন্দিরা গান্ধী || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান

Indira Gandhi and her role of the Liberation War of Bangloadesh
ইন্দিরা গান্ধী (ডানে) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ছবি: পিন্টারেস্ট (আর্ট.কম)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাণের বন্ধু ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এদেশের নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষকে যখন নির্মমভাবে হত্যা করছে পাকিস্তানী হানাদাররা তখন অসংখ্য বাংলাদেশি সীমান্তের ওপারে পেয়েছিল নিরাপত্তা। ১৯৭১ সালে শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় দেখতে এসেছেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রায় এক কোটি লোক জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন এলাকায়। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে খাদ্য ও বাসস্থান দিয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করেন তিনি।

ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী, ঐতিহ্যবাহী নেহেরু পরিবারে। বাবা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং মা কমলা দেবী। প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে যোগদান করেনরবিঠাকুরই তার নাম রেখেছিলেন প্রিয়দর্শিনী১৯৬৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন এবং লালাবাহাদুর শাস্ত্রীর কেবিনেটে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের রাজনীতিতে আবির্ভূত হন।

বাংলাদেসগের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা অবশ্যই বলা প্রয়োজন। ভারতের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্য বৃদ্ধি ছাড়া গত্যন্তর নেই’- হেনরি কিসিঞ্জারের মুখের উপর এমন কথা বলার মত উদার মানসিকতা একজনেরই ছিল, যা তিনি করেও দেখিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ধীরে চলা নীতি ও কূটনৈতিক কৌশলের পক্ষপাতি ছিলেন। ৩০ এপ্রিল ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ইচ্ছুক বাংলাদেশী তরুণদের সশস্ত্র ট্রেনিং দানের ব্যবস্থা করেন।

একাত্তরের ভয়াবহ বিভীষিকাময় পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। ইন্দিরা গান্ধী ৯৮,৯৯,৩০৫ জন উদ্বাস্তুকে তাঁর দেশে আশ্রয় দেন, তাদের থাকা খাওয়া চিকিৎসাসহ অন্যান্য সাহায্যও করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী সংখ্যা ছিল সবচে বেশি। পরম মমতায় ঠিক যেন এক মা তাঁর সন্তানের মতন সেদিন বিপর্যস্ত শরণার্থীদের পাশে দাড়ালেন এবং দেশবাসীকে সহায়তা করতে অনুরোধ করলেন। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাই শুধু নয় তিনি সহজ সরল নার নিরস্ত্র বাঙ্গালিকে সাহস যোগাতে লাগলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। ঘুরে দাঁড়ালো বাঙালি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ পেয়ে বাঙালিরা সশস্ত্র অবস্থান বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঝাঁপিয়ে পড়লো পাক বাহিনীদের উপর।

শরণার্থীদের প্রচণ্ড চাপে তীব্র আর্থিক সংকটের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা ও যোগাযগ পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রের উপর উপর্যুপুরি চাপ দেয়া হচ্ছিল শরণার্থীদের বোঝা বিভিন্ন রাজ্যের ভেতর ভাগ করে দেওয়ার জন্য। সমস্যা বাঁধাল শরণার্থীরা। তারা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইল না। পশ্চিমবঙ্গের অজয় মুখার্জীর মন্ত্রীসভাকে প্রধানত আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শরণার্থীদের চাপে রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ায় পদত্যাগ করতে হয়। ২৫ জুন থেকে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়। কেন্দ্রের দফতরবিহীন মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে পশ্চিম বঙ্গের গভর্নরের উপদেষ্টা বানিয়ে পাঠানো হল মূলত বাংলাদেশের বিষয়ে তদারকির জন্য। 

জুলাই মাসে বিশ্বের রাজনীতিতে এক নাটকীয় ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের মধ্যস্থতায়, হেনকি কিসিঞ্জারের মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে চীনের বরফ শীতল সম্পর্কের অবসান ঘটল। পাকিস্তান দুই বৃহৎ শক্তির প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ২ আগস্ট ঘোষনা করল রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগেকারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করবে তারা। ভারতের সর্বস্তরের জনগণ এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ইন্দিরা গান্ধী সুস্পষ্ট ভাষায় পাকিস্তানকে জানিয়ে দিলেন শেখ মুজিবের বিচারের আয়োজন করা হলে এর পরিণতি ভালো হবে না। তিনি এই বিচার প্রহসন বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি লিখলেন।

আগস্ট মাসে ভারত-সোভিয়েত বিশ বছর মেয়াদি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং সফররত সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদ্রে গ্রোমিকো স্বাক্ষরিত চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল চুক্তিকারী দুটি দেশের কোনোটি যদি তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয় অপর দেশ তাঁর মিত্রের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে মুক্তিকামী বাঙালির মনোবল বাড়িয়েছিল। চুক্তির পরই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সামরিক সাহায্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ভারত আরও দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে সাহায্যের অঙ্গীকার করে।

একাত্তরের মাঝামাঝি সময়ে বেলগ্রেডের রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি কংগ্রেসে ভারতীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এক বার্তায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন- ‘ পূর্ববঙ্গের ঘটনায় ভারতের পক্ষে উদাসীন থাকা কঠিন এবং ইতোমধ্যে ২০ লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব উদ্বাস্তু যাতে সম্মানের সাথে দেশে ফিরতে পারে সেজন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলায় সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ নেয়। এরপর দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সফল করতে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যে বিদেশী রাষ্ট্রনেতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধী। তখন শক্তিশালী আমেরিকা ও চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তিনি প্রথমে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়িয়ে বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও শরণার্থী সমস্যাটি বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে ইউরোপ ও আমেরিকায় ঝটিকা সফর করেন। 

আগস্টে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করেন। তিনি শীত পর্যন্ত যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কেননা সে সময়ে চীন বাহিনীর পক্ষে সীমান্তে অভিযান চালানো সম্ভব হবে না। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘ মি.প্রেসিডেন্ট, আমি ওয়াশিংটনের আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। এসেছি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রাম এবং এক কোটি শরণার্থীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে।বিশেষভাবে পাকিস্তানের কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন বন্ধ করে তাকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য। নিক্সন তা উপেক্ষা করে। রাতে নৈশভোজে ইন্দিরা গান্ধী নিক্সনকে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তিনি ৩৬ হাজার মাইল ভ্রমণ করেছেন। ৩৭৫ টি মিটিং করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে সাড়ে তিন লাখ সম্মানিত নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তিনি এখানে এসেছেন শান্তির প্রত্যাশা নিয়ে।

অক্টোবর-নভেম্বর মাস জুড়ে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন রণক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করতে থাকে, আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভারত তার পাল্টা জবাব দেয়। ৬ ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় ঘোষণা দেন, ‘ আমি এই হাউসকে আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, কালক্রমে আরও অনেক দেশ স্বীকৃতি দেবে।এটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রথম স্বীকৃতি। দ্বিতীয় স্বীকৃতি দেয় ভুটান।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার আগে শ্রীমতি গান্ধী আমেরিকা এবং ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র সফর করে তাদের মনোভাব জেনে এসেছেন। যারা বিরুদ্ধে ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কাউকে পক্ষে এনেছেন, কিংবা পাকিস্তানকে ঢালাও সমর্থন থেকে বিরত রেখে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে অনিবার্য করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ইন্দিরা গান্ধী শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, লন্ডনের ডেইলি মিররের ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতায় পরিণত হয়েছিলেন, যাকে নিরস্ত করার ক্ষমতা আমেরিকারও ছিল না। ৭১-এ ইন্দিরা গান্ধী ও ভারত সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনেও ইন্দিরা গান্ধীর সরকার সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন দুঃসময়ের বন্ধু। বাংলাদেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে সেবাযত্ন করায় ইন্দিরা গান্ধীর এ কাজকে যীশুখ্রিস্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা। তারা সবাই ঈশ্বরের সন্তানশীর্ষক একটি গ্রন্থে তেরেসা এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। ইন্দিরা গান্ধী আজ পৃথিবীতে নেই, কিন্তু আজও আমরা চির কৃতজ্ঞ এই মহীয়সী নারীর প্রতি। 

ভারতের এই স্বীকৃতি, সহযোগিতা ছাড়া এবং জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে প্রবল প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ছিল সুদূর পরাহত। ৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর লন্ডন থেকে দেশে ফেরারে পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে দিল্লিতে কয়েক ঘন্টার জন্য যাত্রাবিরতি করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য এবং তার মুক্তির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ও জনমত গঠনের জন্য তিনি শ্রীমতি গান্ধীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ভারতের জনগণের উদ্দেশ্যে শ্রীমতু গান্ধী বলেছিলেন, ‘ শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বাধীনতার এবং তিনি তা দিয়েছেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম বাংলাদেশের শরণার্থীদের সসম্মানে দেশে ফেরত পাঠাবো, মুক্তিযোদ্ধাদের সবরকম সাহায্য করবো এবং বাংলাদেশের অবিসংবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনব। আমিও আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।

ইন্দিরা গান্ধী শুধু এক কোটি বাংলাদেশিকে আশ্রয় ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থাই করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। আর বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি মার্কিন রক্তচক্ষুর বিপরীতে এক অনন্য অবস্থানও নেন তিনি। বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধেও পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেখানেও এক হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবাদী অথচ নিরস্ত্র বাঙ্গালিকে সাহস জোগান তিনি। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, যুবক যুবতিদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে একের পর এক গেরিলা যুদ্ধে পরাস্ত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ পূর্ববাংলায় যা ঘটেছে, তাতে ভারত সরকার নীরব থাকবে না।পরে ১৭ মে তিনি পশ্চিমবঙ্গ আসেন। যেখানে বাঙালিরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। ৩০ এপ্রিল, ‘৭১ ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেন। ৯ মে তাদের হাতে দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে আগ্রহী বাংলাদেশের তরুণদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়ার দায়িত্ব। এ ছাড়া পাকিস্তানি শাসককতৃক বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন আদায়ে তিনি দেশে দেশে সফর করেন। স্বাধীন বাংলা বেটার কেন্দ্রের জন্য একটি ট্রান্সমিটার বরাদ্দ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং সামরিক সাহায্য বন্ধের বিষয়ে অক্ষমতা জানালে ইন্দিরা গান্ধী তাকে বলেন, ‘ ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহায়তা বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই

সেই মহিয়সী নারী ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতার সম্মাননাদেওয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ, মুুক্তযুদ্ধ

No comments

Powered by Blogger.