Adsterra

অর্থনীতির বিকাশে গ্রামীণ স্বনির্ভরতা

 

অর্থনীতির বিকাশে গ্রামীণ স্বনির্ভরতা, ঢাকা ভয়েজ, dhaka voice,

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বনের ভিত্তি অবশ্যই কৃষি। দেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। কৃষিকে উপেক্ষা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব। কৃষি উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। উন্নতি অগ্রসরতার তাগিদে আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ নিয়ে গ্রামীণ অথংন উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিজাত উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তিবিদ্যায় সফলতা সুফল কাজে লাগিয়ে দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার আজ স্বাবলম্বী, প্রতিষ্ঠিত সফল। বেকারত্ব দূর করতে চাকরির মোহ ত্যাগ করে অনেক শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে নানাভাবে কৃষি, মৎস্য উৎপাদনসহ নিজেদের নিয়োজিত করে চলেছে বিভিন্ন উন্নয়ন উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে। অবক্ষয়ের যুগেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি কার্যকরী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলছে। তথাকথিত শিক্ষিতদের বাদ দিলেও গ্রামীণ মানুষের যথার্থ যোগদান প্রতিকূল অবস্থায়ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষায় সাড়া জাগানো ভূমিকা নিয়ে চলেছে। গ্রামীণ শিক্ষিত যুবকরা অনেকাংশে কৃষি কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রতি ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে প্রথমেই গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে তাকানোর আবশ্যকতা রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি নিতান্ত পিছিয়ে নয়। দেশের অর্থনীতি এবং আপাত শান্তির বাতাবরণ গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপরই টিকে রয়েছে। প্রয়োজন আরো গতি সঞ্চার। প্রবল জনবিস্ফোরণ এবং অপরিকল্পিত শিক্ষা পদ্ধতি, দুর্নীতি এবং ভ্রষ্টাচারের সুযোগে আমাদের সমাজব্যবস্থা আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অপরিকল্পিত শিক্ষা পদ্ধতির ফলে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে উঠেই রঙ-বেরঙের জালে জড়িয়ে দিশাহীন হয়ে যায়। কৃষি এবং কৃষিসম্বন্ধীয় বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প আধুনিকতার পরশে চিরাচরিত দেশীয় জীবনযাত্রার মৌলিকতা সুরক্ষিত রেখেও নতুন দিশার সূচনা করতে পারে। হস্তশিল্প, বয়নশিল্প, খাদি গ্রাম্য উদ্যোগের প্রভাব আমাদের অনেক উন্নতি ঘটাতে পারে। এছাড়াও মৎস্য চাষ, ফুল চাষ, পাট চাষ, পান চাষ, পশুপালন, দুগ্ধ প্রকল্প, ইক্ষু চাষ এবং একই সঙ্গে চা কাগজ শিল্প আমাদের অঞ্চলের অর্থনীতিকে নতুন দিশা দিতে পারে। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের তাগিদে নারীদের আরো সক্রিয় হতে হবে এবং তাদের প্রতি সমাজ সরকারের পক্ষ থেকে আরো সহায়তা দান করতে হবে। তাদের প্রেরণায় সমাজের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নারীরা আরো তৎপর হয়ে উঠবেন।

আজকাল অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী সরকারি চাকরির পেছনে ঘুরে ক্লান্ত। তারা অনেকেই ভুলে যান, শিক্ষা শুধু চাকরির ভিত নয়, শিক্ষাজীবনের আলো। শিক্ষিত সমাজ ভুলে যান সীমিত সরকারি ব্যবস্থায় অজ¯্র চাকরি প্রদান অসম্ভব। অজ¯্র চাকরিপ্রার্থীর ভিড়ে তাই সরকার দিশেহারা এবং সরকারি আমলাদের কেউ কেউ প্রার্থীদের প্রতিযোগিতার সুযোগে দুর্নীতিপরায়ণ। ফলে প্রতিযোগিতার নামে দুর্নীতি বাড়ছে, সমাজ অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে, তরুণ-তরুণীরা ক্লান্তিতে ভুগছে। হোঁচট খেয়ে অর্থনৈতিক সংস্কার একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন প্রতিযোগিতার রেশ ধরে ক্রমে আলস্য, জিঘাংসা, চোরাকারবার, কালো টাকা, জঙ্গি তৎপরতা এবং শোষণ অত্যাচার মাথাচাড়া দেয়। এসব নিশ্চয়ই সভ্যতার পথে অশনিসংকেত। বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা তাই আজ একান্ত জরুরি। দেখা যায়, গ্রামগঞ্জে জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি এবং কৃষিক্ষেত্রে তার প্রভাব যথেষ্ট। শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কৃষিতেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উন্নয়ন জরুরি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যর্থ রাজনীতি, সরকারি ভ্রান্তনীতি, পাহাড়ি প্রতিকূলতা, প্রবল জনবিস্ফোরণ সমস্যা আমাদের অর্থনীতিতে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে, যার সিংহভাগই প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষ কৃষিজীবীর বিপক্ষে। প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলা করে কৃষিকে আঁকড়ে থাকাই আমাদের প্রধান ভরসা। সুতরাং কৃষিক্ষেত্রে অবাধ যোগদান নিশ্চয়ই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার জীবনমানের দিকে তাকানোর ফুরসত আপাতত আমাদের নেই। আমাদের উন্নয়নের পটভূমি কৃষিভিত্তিকই তৈরি করতে হবে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার থেকে শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী; অন্যদিকে আমাদের দেশের ৭০ শতাংশই কৃষিজীবী। আকাশ-পাতাল তফাত। ধ্রুব সত্যকে উপেক্ষা করা যায় না। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিচারধারা এক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ববহ। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের এখন মাঠে নামতে হবে এবং সরকারি অনুদানকৃত সব সুযোগ-সুবিধা দেশের অর্থনৈতিক উদ্ধারকল্পে নিবেদিত হতে হবে। কৃষিক্ষেত্র থেকে মুখ না ফিরিয়ে নিজ অধিকার বলে হরিলুটকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বনির্ভর হতে হবে। কৃষির উন্নতিতেই গ্রামীণ স্বনির্ভরতা এবং গ্রামীণ স্বনির্ভরতাতেই বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশ। বিভিন্ন পরিকল্পনায় সরকার কৃষির উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। কোথায়, কী বাবদ, কত টাকা মঞ্জুর হচ্ছে, কীভাবে খরচ হচ্ছে শিক্ষিত সমাজকে তার খতিয়ান রাখতে হবে এবং নিঃস্বার্থ সেবায় তা পৌঁছে দিতে হবে প্রতিটি গ্রামে। এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের ভূমিকাও অপরিসীম। সংবাদমাধ্যম তৎপরতার সঙ্গে যেন রাজনৈতিক নেতাদের কেচ্ছাকাহিনির পাশাপাশি সরকারি সব ব্যবস্থার স্বচ্ছ তালিকা সর্বদা যথাযথ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়, সে ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এসব ক্ষেত্রে আরো অবাধ যোগদান এবং পরিকল্পিত অবস্থান শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে শিক্ষার আলোয় নিঃসন্দেহে স্বনির্ভরতা দিয়ে আমাদের আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। শিক্ষা পদ্ধতিকে সে ধরনের কর্মমুখী করার উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কার করতে হবে। পাহাড়িদের জুমচাষ আমাদের অর্থনীতিতে যথেষ্ট সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে তাদেরও উন্নত চিন্তাধারা এবং সহযোগিতার প্রয়োজন। বনজ সম্পদের অবাধ ধ্বংস রোধ করে জুমচাষির চাষক্ষেত্রকে উন্নত প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদান চিরন্তন। যাযাবর জীবনের অবসানে কৃষি সভ্যতার গোড়াপত্তনেও নারীর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। আমরা বাংলাদেশি নারীকে ঘরের লক্ষ্মী বলে জানি। বাস্তবে নারী দূরদর্শী অধ্যবসায়ী; আদর্শ সমাজ গঠনে অগ্রদূত। কৃষি সভ্যতার দেশে গ্রামীণ মহিলারা পুরুষের কর্মক্ষেত্রের নিত্য অনুষঙ্গী। পশুপালন থেকে আরম্ভ করে চাষাবাদ এবং দ্রব্যের বাজারজাতকরণ সর্বত্রই নারীর প্রত্যক্ষ পরোক্ষ যোগদান গ্রামীণ জনজীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এক কথায় গ্রামীণ অর্থনীতিনির্ভর দেশীয় অর্থনীতিতে এবং সমাজজীবনে নারীর অবদান ভূমিকা অপরিসীম। যে জাতির নারীরা যত উন্নত মানসিকতার; সে জাতির অর্থনীতি, সংস্কৃতি সামাজিক ভারসাম্য তত বেশি সুরক্ষিত। আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে অনেক শিক্ষিত মহিলা তরুণীর প্রত্যক্ষ অবদান চোখে পড়ার মতো। তারাই মাঠে বর্ষাকালীন শস্য থেকে রবিশস্য উৎপাদনের সময় পর্যন্ত নিরলস সহায়তা করে যান। গ্রামীণ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পের সিংহভাগই নারীকেন্দ্রিক নারীনির্ভর। তবে অর্থনৈতিক সংস্কারকদের একটি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে; তা হলো কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পে যোগদান আনুপাতিক হারে সর্বাধিক হলেও মধ্যবিত্ত তদূর্ধ্ব স্তরের মহিলারা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের যোগদানের সুযোগ থাকলেও তাদের সিংহভাগই কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিযুক্ত নন। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে মহিলাদের শ্রমবিমুখতাও দেখা যায়। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে মেয়েদের অবাধ নির্ভয়ে যোগদান আমাদের অর্থনীতিকে শুধু চাঙ্গা করবে না, বরং এক মজবুত আর্থ-সামাজিক পরিবেশের সূচনাও ঘটাবে। ফলে নারীরা শুধু বোঝা হবে না, বরং সমাজের অর্ধাংশের যোগদানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নারীমুক্তিকে সুনিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে উপজাতি মহিলা, চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মহিলারা উদাহরণ হয়ে আমাদের আদর্শ প্রেরণা হতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.