রাজনীতি কি এখন দিল্লি ঘুরে সিঙ্গাপুরে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে বিদেশিদের সঙ্গে নানাভাবে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আলোচনা চলছে বিদেশেও। চলতি মাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদলের ভারত সফর নিয়ে আলোচনা চলছে এখনো। দিল্লির আলোচনার রেশ না কাটতেই এবার আলোচনায় সিঙ্গাপুর। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা দেশটিতে যাওয়ায় এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা গেছেন চিকিৎসার জন্য।
গত ২৭ জুন থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মস্তিষ্কের বহির্ভাগে টিউমারের অসুখ নিয়ে তিনি সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো এবং শিগগির দেশে ফিরবেন বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ পর্যন্তও সব ঠিক ছিল। দুই দিন পরেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান। এরপর থেকেই ডালপালা মেলে নানা আলোচনা।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের তিন নেতার সিঙ্গাপুরে অবস্থান এরই মধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার কথা বলা হলেও গুঞ্জন থেমে নেই। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহের কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীনেরা। এমনকি এ নিয়ে কানাঘুষা চলছে খোদ বিএনপিতেও।
বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মিশ্র ধারণার কথা জানান। তাঁদের অনেকের ধারণা, বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নেতারা একান্তে আলাপ করতেই সিঙ্গাপুরে গেছেন। সেখান থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো করণীয় নির্ধারণ করতে পারেন।
অন্যরা অবশ্য মনে করছেন, এসব কিছুই নয়। তাঁরা বলছেন, চলমান এক দফার আন্দোলন এখন একটা পর্যায়ে এসেছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বিএনপি ও শরিকদের রাজপথে গা ঝাড়া দিয়ে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। তার আগে অসুস্থ নেতারা একরকম প্রস্তুতি হিসেবেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন।
বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকেও। বিএনপির তিন নেতার সিঙ্গাপুরে অবস্থান বিষয়ে গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপির তিন নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন। পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে, এটা কি আদৌ চিকিৎসা, নাকি আরও কোনো ষড়যন্ত্র করার উদ্দেশ্যে তাঁরা সিঙ্গাপুরে গেলেন। এটা অনেকের প্রশ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন যে সময় চলছে, সেই সময়ে একটি দেশে একটা দলের টপ মোস্ট তিনজন নেতা অবস্থান করছেন। সেখানে আরও কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, সেখানে আলোচনা হতেই পারে। এর মধ্যে রাজনীতি থাকতেই পারে এবং এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে এখানে ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হয় না।’
এর আগে ৬ আগস্ট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে ভারতে যায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এরপর ২০ আগস্ট দিল্লির আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সফর শেষে দেশে ফিরে তিনি বলেন, সফরকালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অনুমতি ছাড়া সে বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
No comments