Adsterra

পাউরুটি বনরুটি যেন রোগের ঝুড়ি

পাউরুটি বনরুটি যেন রোগের ঝুড়ি


দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাউরুটি কিংবা বনরুটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব খাবার কতটা নিরাপদ, তা কেউ ভাবছেন না। অথচ গবেষণায় এসব খাবারে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অনিরাপদ খাবার নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসারসহ নানা রোগ হতে পারে।


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গবেষণাটি হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বর ডিসেম্বরে বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় পাউরুটি বনরুটির ২২৮টি নমুনা। এসব নমুনার মধ্যে যেমন নামীদামি 
ব্র্যান্ড আছে, পাশাপাশি নাম-পরিচয়সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের পাউরুটি-বনরুটিও আছে।


২২৮টি নমুনার মধ্যে ১১৬টি পাউরুটি ১১২টি বনরুটি। পাউরুটিগুলোর মধ্যে ৯৮টি নামীদামি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত বাজারজাত করা। বাকি ১৮টি নামসর্বস্ব বা নন-ব্র্যান্ডেড পাউরুটি। ১১২টি বনরুটির মধ্যে নামীদামি ব্র্যান্ডের ৬৪টি, বাকি ৪৮টি নন-ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানের। 
গবেষণায় সংগৃহীত নমুনাগুলোয় লবণ, চিনি, আয়রন, সিসা, ক্যাডমিয়াম, পটাশিয়াম ব্রোমেট, মাইকোটক্সিন, আর্দ্রতা, বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, এসব নমুনায় যেমন পটাশিয়াম ব্রোমেটের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া গেছে, পাশাপাশি ছত্রাক, মাইকোটক্সিন, মাত্রাতিরিক্ত চিনি লবণের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে।

এগুলোর মধ্যে পটাশিয়াম ব্রোমেট পাউরুটি, বনরুটি, কুকিজ, পেস্ট্রি, পিৎজার রুটি ইত্যাদি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে এবং অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই উপাদান ক্যানসারের কারণ হতে পারে। কারণে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে ২০ বছর আগেই খাবারে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর সায়েন্স ইন দ্য পাবলিক ইন্টারেস্ট সুপারিশ করেছে। কানাডা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোসহ অনেক দেশেই খাবারে এই উপাদানের ব্যবহার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও সম্প্রতি এটি নিষিদ্ধ করেছে বিএসটিআই। ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত লবণ-চিনি যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা এখন সবার জানা। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত লবণ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মাইকোটক্সিন বিশেষ ধরনের ছত্রাক থেকে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিষাক্ত উপাদান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট মাইকোটক্সিনের উপস্থিতি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। রুটিতে অণুজীব ছত্রাকের উপস্থিতি থাকলে পেটের নানা রোগ হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত চিনি লবণে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে।

এনএফএসএলের গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, তাদের সংগৃহীত নমুনার মধ্যে ১০০ গ্রামের পাউরুটিতে লবণের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল দশমিক ৪৩ গ্রাম। ব্র্যান্ডেড কোম্পানির একই পরিমাণ রুটিতে চিনির সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৮ গ্রাম। আর নন-ব্র্যান্ডেড কোম্পানির পাউরুটিতে সর্বোচ্চ চিনির পরিমাণ পাওয়া গেছে ১০ দশমিক ৫৫ গ্রাম। ছাড়া ২২৮টি নমুনার ৫৪টিতেই পটাশিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পটাশিয়াম ব্রোমেট রেকর্ড করা হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ দশমিক ৯৩ গ্রাম পর্যন্ত। অথচ বাংলাদেশে এটি ব্যবহার নিষিদ্ধ।

গবেষণায় ২২৮টি নমুনার মধ্যে ৫০টিতে ছত্রাক, ৩২টিতে মাইকোটক্সিন পাওয়া গেছে। ১৯৩টি নমুনায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২২৮টি নমুনার মাত্র ৭টিতে সঠিক ওজন পাওয়া গেছে। ওজন উল্লেখ নেই ১৩৬টি নমুনায়। ৪৫টিতে উল্লেখিত ওজনের বেশি এবং ৪০টিতে কম ওজন পাওয়া গেছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেসব রুটি সর্বোচ্চ চার দিন দোকানে থাকছে, তাতে ছত্রাক মাইকোটক্সিন তৈরি হতে পারে। এসব খাবার খেলে তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বদহজম, মাথা ঘোরা, পেটে আলসার ক্যানসার হতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইপিএইচ যেসব নমুনা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চুপ করে বসে থাকলে হবে না।

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট যেসব নমুনা পরীক্ষা করে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে, সেগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের, তা সুনির্দিষ্ট করে জানালে তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

তবে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত কোনো সভায়ই কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাউকে কখনো ডাকে না। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নমুনা পরীক্ষা করেছেন।

জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তারা ভোক্তার স্বার্থ দেখছে না। ভোক্তারা ভেজাল খেয়েই যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশে যেসব আইন রয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.