পাউরুটি বনরুটি যেন রোগের ঝুড়ি
দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাউরুটি কিংবা বনরুটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব খাবার কতটা নিরাপদ, তা কেউ ভাবছেন না। অথচ গবেষণায় এসব খাবারে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অনিরাপদ খাবার নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসারসহ নানা রোগ হতে পারে।
এগুলোর মধ্যে পটাশিয়াম ব্রোমেট পাউরুটি, বনরুটি, কুকিজ, পেস্ট্রি, পিৎজার রুটি ইত্যাদি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে এবং অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই উপাদান ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছে ২০ বছর আগেই খাবারে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর সায়েন্স ইন দ্য পাবলিক ইন্টারেস্ট সুপারিশ করেছে। কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোসহ অনেক দেশেই খাবারে এই উপাদানের ব্যবহার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও সম্প্রতি এটি নিষিদ্ধ করেছে বিএসটিআই। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত লবণ-চিনি যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা এখন সবার জানা। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত লবণ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মাইকোটক্সিন বিশেষ ধরনের ছত্রাক থেকে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিষাক্ত উপাদান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট ও মাইকোটক্সিনের উপস্থিতি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। রুটিতে অণুজীব ও ছত্রাকের উপস্থিতি থাকলে পেটের নানা রোগ হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত চিনি ও লবণে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণায় ২২৮টি নমুনার মধ্যে ৫০টিতে ছত্রাক, ৩২টিতে মাইকোটক্সিন পাওয়া গেছে। ১৯৩টি নমুনায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২২৮টি নমুনার মাত্র ৭টিতে সঠিক ওজন পাওয়া গেছে। ওজন উল্লেখ নেই ১৩৬টি নমুনায়। ৪৫টিতে উল্লেখিত ওজনের বেশি এবং ৪০টিতে কম ওজন পাওয়া গেছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেসব রুটি সর্বোচ্চ চার দিন দোকানে থাকছে, তাতে ছত্রাক ও মাইকোটক্সিন তৈরি হতে পারে। এসব খাবার খেলে তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বদহজম, মাথা ঘোরা, পেটে আলসার ও ক্যানসার হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইপিএইচ যেসব নমুনা পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চুপ করে বসে থাকলে হবে না।
বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (সিএম) রিয়াজুল হক বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট যেসব নমুনা পরীক্ষা করে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে, সেগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের, তা সুনির্দিষ্ট করে জানালে তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
তবে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত কোনো সভায়ই কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাউকে কখনো ডাকে না। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নমুনা পরীক্ষা করেছেন।
জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য অধিকার মঞ্চের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তারা ভোক্তার স্বার্থ দেখছে না। ভোক্তারা ভেজাল খেয়েই যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশে যেসব আইন রয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
No comments