Adsterra

সিজারিয়ানের পর প্রসূতি মায়ের যত্ন || লিখেছেন ডা. আবিদা সুলতানা

সিজারিয়ানের পর প্রসূতি মায়ের যত্ন  || লিখেছেন  ডা. আবিদা সুলতানা

একজন গর্ভবতী মহিলার বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন যেমন তার যত্ন নিতে হয় সবার থেকে আলাদাভাবে
, ঠিক তেমনি সন্তান প্রসবের পর বিশেষভাবে তার যত্ন নিতে হয় যেন সে তার আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।  প্রসব পরবর্তী ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ সময় একজন মায়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়।  প্রসব পরবর্তী দিনগুলো মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং বিশেষ করে মায়ের যদি সিজারিয়ান হয়। 

সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় এবং তারপরেও শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল যায়। এটি একটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচার যেখানে পেটের বিভিন্ন স্তরের টিস্যু কাটা হয়। সিজারের প্রভাব মায়ের উপর শুধু শারীরিকভাবে নয় মানসিকভাবেও পড়ে। তবে এই পরিবর্তন এক এক মায়ের জন্য এক এক রকম হতে পারে।  সার্জারির পর আপনার অস্থির এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এ অনুভূতি আটচল্লিশ ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক মায়েদের সারা গায়ে চুলকানি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের চেতনানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।

সিজার হলে মায়েদের সাধারণত দুই থেকে চারদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। তবে বাসায় ফিরে যাওয়ার পর ও কয়েক সপ্তাহ মা রিকভারি স্টেজ এ থাকবে। 

সিজারের পর কাঁটা স্থানে অসাড় অনুভূতি বা ব্যথা হতে পারে এবং কাটাস্থান সাধারণত কিছুটা ফুলে থাকতে পারে এবং কালো হয়ে যেতে পারে। পেটে চাপ পরে এমন কোনো কিছুতেই এই সময় ব্যথা লাগতে পারে। তবে এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এ সময় কাশি দেওয়ার সময় বা হাসার সময় হাত বা বালিশ দিয়ে কাটা স্থানে সাপোর্ট দিতে পারেন। 

প্রত্যেকটি মায়েরে প্রসবের পর ভার্জিনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। এটি রক্ত, ব্যাকটেরিয়া এবং জরায়ুর ছিঁড়ে যাওয়া টিস্যুর  সমন্বয়ে গঠিত। প্রসবের পর প্রথম কিছুদিন এই ডিসচার্জ উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়ে থাকে।

সিজারের পর প্রথম এক দুদিন গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এ সময় মায়ের পরিপাকতন্ত্র মন্থর থাকে বলে বেশি গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। এ সময় হালকা হাঁটাচলা স্বস্তি দিতে পারে। সার্জারির পর মাকে বিছানা থেকে উঠে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।  তবে সেটা নিজে নিজে কখনোই চেষ্টা না করে নার্সের সাহায্য নেওয়া উচিত। এ সময় হেঁটে বাথরুমে যাওয়াটা ও অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু এই নড়াচড়া সেরে ওঠার জন্য খুবই উপকারী। এর ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। সার্জারি পর শুয়ে থাকা অবস্থাতেও পা নাড়িয়ে, স্ট্রেচিং করে পায়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়। 

তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে ডাক্তার সেলাই খুলে দিতে পারে। এতে তেমন কোনো ব্যথা পাওয়া যায় না এবং খুব অল্প সময় লাগে। এটি সাধারণত হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ এর আগে করা হয়। তবে যদি কোন সমস্যা থাকে তবে আরো কিছুদিন পরেও তা খোলা হতে পারে। 

 

প্রথমদিকে সিজারের কাটা স্থান সামান্য ফোলা এবং গাঢ় বর্ণে থাকলেও ছয় সপ্তাহের মধ্যে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।সিজারের কাটা সাধারণত ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। এটি সেরে ওঠার সময় কাটা স্থানে চুলকাতে পারে। 

 

কাজ ও বিশ্রাম

সিজারিয়ান একটি মেজর সার্জারি। অন্য যে কোনক সার্জারির মতো এটা সেরে ওঠার জন্য সময় দিতে হবে।  সিজারের পর স্বাভাবিকভাবে বিশ্রামে থাকতে হবে। এই সময় নিজের শরীরলে সুস্থ করার জন্য ভালোমতো বিশ্রাম করা জরুরি, অন্তত প্রথম ছয় সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে।   যদিও এটা বলার চাইতে করাটা  অনেক কঠিন।  বাচ্চার কারণে বিশ্রাম নেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাচ্চার যত্নআত্তির   কাজে পরিবারে অন্য সদস্যদের সাহায্য নিতে হবে। 

 

তবে শুধু শুয়ে বসে সময় কাটালেই চলবে না সিজারের সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মাকে বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে যেতে উৎসাহিত করা হয়। এতে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে। তবে এ সময় হাঁটাচলা ধীরে করতে হবে। নিয়মিত হাঁটা শুধু ক্যালরি বার্ন করে না, অপারেশনের পর শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়াতেও সাহায্য করে। যে সকল মায়েরা সিজার অপারেশনের মধ্য দিয়ে যান, তাদেরকে সাধারণত অপারেশনের পরদিন থেকে অল্প অল্প করে হাঁটা শুরু করতে বলা হয়। কারণ হাঁটলে সেলাই দ্রুত শুকায়, রক্ত জমাট বাঁধে না এবং ব্যথা পশমন তরান্বিত হয়। তবে প্রথম ছয় থেকে আট সপ্তাহ খুব আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে হাঁটার গতি এবং সময় বাড়াতে হবে। তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে। 

 

খাবার 

প্রসব পরবর্তীতে মায়ের  স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি দরকার হয়। এই অতিরিক্ত ক্যালরি বুকের দুধ তৈরি জন্য প্রয়োজন হয়। তাই এ সময় মাকে সঠিক মাত্রায় সুষম খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে।  এ সময় মায়ের দেহে পানির প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।  মাকে সব সময় পিপাসা পেলেই প্রচুর পানি পান করাতে হবে। পানি পানের উপকারিতা আছে। যেমন: এই পানি বুকে দুধের মাধ্যমে বাচ্চার পানির প্রয়োজনীয়তা মিটায়। বাচ্চাকে আলাদা করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। পানি মায়ের শরীরের বিভিন্ন পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। প্রস্রাবের প্রদাহকোষ্ঠকাঠিন্য এবং রক্ত জমাট বাঁধার রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। 

 

কাটাস্থানের যত্ন

সিজারের ক্ষেত্রে কাটা স্থানের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন।  যদি কাটা স্থানটি কাপড়ের সাথে  ঘষা লাগে তবে এর উপর গজ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিতে পারেন। ঢোলা, আরামদায়ক এবং সুতি কাপড় পড়ার চেষ্টা করুন। কাটা স্থানে ইনফেকশন হচ্ছে কি-না খেয়াল রাখুন।


শেয়ার করে অন্যকে পয়রার সুযোগ করে দিন 

 ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি 

No comments

Powered by Blogger.