Adsterra

পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল ।। Brazil is the 5th largest country in the world.

পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল ।। Brazil is the 5th largest country in the world.

আমাদের দেশের মানুষের কাছে আরেকটি প্রিয় নাম ব্রাজিল। সারাবিশ্বে এই দেশটির নাম ছড়িয়েছে তাদের ফুটবলের জনপ্রিয়তা থেকে।ব্রাজিল শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে আসে ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি পেলের কথা। সেই সাথে ভেসে ওঠে চোখ ধাঁধানো নান্দনিক ফুটবল ম্যাচ। এরপর সামনে আসে সবুজ আর হলুদের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক পতাকার রঙ। ব্রাজিলীয় গান ও নৃত্যের একটি ধরণ সাম্বার নামটিও উঠে আসে। এই জানার বাইরেও রয়েছে ব্রাজিলের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।

ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ। সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী ব্রাজিল নামে পরিচিত। এছাড়াও জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ৮,৫১৪,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৫,২৯০,৮৯৯ বর্গমাইল) এটি আমেরিকার একমাত্র পর্তুগিজভাষী দেশ, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র।

ব্রাজিলে পূর্বভাগ আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। যার উপকূলীয়ভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭,৪৯১ কিমি। ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম, ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক দেপার্ত্যমঁ ফরাসি গায়ানা। এছাড়াও এর উত্তর-পশ্চিমভাগে কলম্বিয়া, পশ্চিমে বলিভিয়া ও পেরু, দক্ষিণ-পশ্চিমে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে, এবং সর্ব-দক্ষিণে দক্ষিণে উরুগুয়ে অবস্থিত। ব্রাজিলীয় সীমানায় আটলান্টিক মহাসাগরের বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে ফের্নান্দু জি নরোনিঁয়া, রোকাস অ্যাটল, সেন্ট পিটার ও সেন্ট পল রকস, এবং ত্রিনিদাজি এ মার্চিঁ ভাজ। ব্রাজিলের সাথে চিলি ও ইকুয়েডর ব্যতীত দক্ষিণ আমেরিকার সকল দেশেরই সীমান্ত-সংযোগ রয়েছে।

১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত একটি পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছায় এবং পর্তুগালের রাজা প্রথম মানুয়েলের নামে ভূখণ্ডটিতে পর্তুগালের অধিকার দাবি করে। সে সময় পর্তুগিজরা ব্রাজিলে বসবাসরত প্রস্তর যুগের আদিবাসীদের সাথে পরিচিত হয়।

১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলে প্রথম পর্তুগিজ উপনিবেশটি গোড়াপত্তন হয়। তবে ১৫৩৪ সালে ডম তৃতীয় জোয়াউঁ কর্তৃক সমগ্র অঞ্চলটি ১২টি পৃথক বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রথাটি সমস্যাপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজা পুরো উপনিবেশ প্রশাসনের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ দেন। পর্তুগিজরা কিছু আদিবাসী গোত্রকে নিজেদের দলে নেয়। অপরদিকে বাকিদেরকে তঁরা দাস হিসেবে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু গোত্রকে দীর্ঘ যুদ্ধে হারিয়ে ও রোগ বিস্তারের মাধ্যমে নিঃশেষ করে দেয়। ।১৬শ শতকের মধ্যভাগে ঔপনিবেশিকেরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের ভালো মাটি ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর সুযোগ নিয়ে সেখানে চিনির প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে। সে সময় চিনি ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য। আন্তজার্তিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্তুগিজরা আফ্রিকান দাসদেরও ব্রাজিলে নিয়ে আসা শুরু

ফরাসিদের সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগিজরা তাদের দখলকৃত ভূখণ্ড ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৫৭ সালে তারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত রিউ দি জানেইরু ও ১৬১৫ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউঁ লুইসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তারা আমাজন অরণ্য অভিমূখে অভিযান শুরু করে ও ঐ অঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। নিয়ন্ত্রণ লাভের পর পর্তুগিজরা অঞ্চলগুলোতে নিজেদের গ্রাম ও দুর্গ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকে আরও সুসংহত করে। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাদের এ অভিযান সর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত হয়। সেখানে রিও দে লা প্লাতা নদীর তীরে তারা সাক্রামেন্তো শহরের গোড়াপত্তন করে, বর্তমানে যা উরুগুয়ের অংশ।

১৭ শতকের শেষভাগে ব্রাজিলের চিনি রপ্তানির পরিমাণ কমতে থাকে, তবে ১৬৯০-এর দশকে ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে বেশ কিছু স্বর্ণখনি আবিষ্কৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় বান্দিরাঞ্চিস (Bandeirantes) নামে পরিচিত এই পর্তুগিজ স্কাউটরা বর্তমান ব্রাজিলের মাতু গ্রসো ও গোইয়াস অঞ্চলে স্বর্ণখনির সন্ধান পান। তৎকালীন সময়ে জায়গাটির নামকরণ করা হয় মিনাজ জেরাইস (বাংলা অর্থ সাধারণ খনি’), যা বর্তমানে ব্রাজিলের একটি প্রদেশ। স্বর্ণখনি আবিস্কারের ফলে চিনি রপ্তানি কমে যাওয়া থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে পর্তুগিজ উপনিবেশ রক্ষা পায়।এছাড়াও স্বর্ণখনিতে কাজের উদ্দেশ্যে সমগ্র ব্রাজিলসহ পর্তুগাল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এ অঞ্চলে পাড়ি জমায় এই সময় দেশের অভ্যন্তরভাগে বসতি স্থাপিত হয় এবং অর্থনীতি ও জনসংখ্যার প্রধান কেন্দ্র দেশের উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অংশে স্থানান্তরিত হয়।

স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকগণ এ অঞ্চলে পর্তুগিজ উপনিবেশের সম্প্রসারণে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। ১৪৯৪ সালে স্পেন অধিকৃত ভূখণ্ডে পর্তুগিজদের উপনিবেশ সম্প্রসারণ রোধে উভয়পক্ষের মধ্যে তোর্দিজিলাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৭ সালে স্পেনীয়রা পর্তুগিজ অধিকৃত বান্দা ওরিয়েন্টাল নিজেদের দখলে আনতে সমর্থ হয়। যদিও পরবর্তীকালে এ বিজয় নিষ্ফল বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ ঐ বছরেই পর্তুগিজ ও স্পেনীয় সাম্রাজ্যের ভেতর প্রথম সান লিদিফোনসো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে এ অঞ্চলের পর্তুগিজদের সম্প্রসারিত সকল অঞ্চলে পর্তুগালের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। বর্তমান ব্রাজিলের সীমানাও মূলত এই সম্প্রসারিত ভূখণ্ডের সীমানার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্ধারিত হয়েছে।

১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ রাজ পরিবার, পর্তুগালে অনুপ্রবেশকৃত নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী পর্তুগালসহ মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ স্থানেই নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিল। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে রাজ পরিবার নিজেদেরকে ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরুতে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে এটি সম্পূর্ণ পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তার অকর্মক্ষম মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল, ব্রাজিল, অ্যান্ড দি আলগ্রাভিস। ১৮০৯ সালে পর্তুগিজরা ফরাসি গায়ানা দখল করে (যদিও পরবর্তীকালে ১৮১৭ সালে তা ফ্রান্সের কাছে ফিরিয়ে দেয়)। এছাড়ারও ১৮১৬ সালে ইস্টার্ন স্ট্রিপও তারা নিজেদের দখলে নেয়, ও কিসপ্লাতিনা নামে নামকরণ করে। কিন্তু ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিল এ অঞ্চলটির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারায়, এবং অঞ্চলটিতে উরুগুয়ে নামের একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।

১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান, ও যাবার পূর্বে তার বড় ছেলে পেদ্রু জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন।৷ পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিত ব্রাজিলীয়রা পুরনায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে। রিজেন্ট পেদ্রু পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রু আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের কাছে থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একই বছরের ১২ অক্টোবর ডম পেদ্রু ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন, এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর মাধ্যমেই ব্রাজিলে ৩২২ বছর ধরে চলে আসা পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটে।

তৎকালীন সময়ে ব্রাজিলীয়রা রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, এবং গণতন্ত্র ততোটা জনপ্রিয় ছিল না।স্বাধীনতার ঘোষণার ফলস্বরূপ ব্রাজিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ব্রাজিলের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, ও দক্ষিণাঞ্চলসহ পর্তুগিজ অধিকৃত প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়েছিল। অবেশেষে ১৮২৪ সালের ৮ মার্চ পর্তুগিজ সৈন্যরা ব্রাজিলীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে, এবং ১৮২৫ সালের ২৯ আগস্ট পর্তুগাল ব্রাজিলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয় ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত।

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র। একটি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ২৬টি প্রদেশ, ও ৫,৫৬৪টি মিউনিসিপ্যালিটি নিয়ে এর যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছে।

১৮৩১ সালের ১ এপ্রিল প্রথম পেদ্রু সিংহাসন ছেড়ে দেন ও তার কন্যার রাজত্ব পুনরায় দাবি করার উদ্দেশ্যে পর্তুগালে পাড়ি জমান। যাবার পূর্বে তিনি তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে নির্বাচিত করে যান, যিনি পরবর্তীতে ডম দ্বিতীয় পেদ্রু নামে সিংহাসনে আরোহণ করেন।যেহেতু নতুন সম্রাটের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল, তাই এ সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে রিজেন্সি পদ্ধতি চালু করা হয় ও সম্রাটের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য।

রিজেন্সি চালুর পর ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্রোহে রূপ নেয়। এটি রিজেন্সি ব্যবস্থাটিকে বেশ অস্থিতিশীল করে তোলে ও রিজেন্টদের শাসনে ব্রাজিল প্রায় অরাজক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।বিদ্রোহের ফলস্বরূপ কিছু কিছু প্রদেশ ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে, যদিও এসকল গোষ্ঠীর বিদ্রোহটি সত্যিকার অর্থে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে ছিল না। তবে এসব কিছুই বলবৎ ছিল যতোদিন দ্বিতীয় পেদ্রু নিজে রাষ্ট্রভার গ্রহণে অসমর্থ ছিলেন। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পেদ্রুর আইনগত সাবালকত্ব অর্জনের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়, এবং তিনি শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি এক টানা ৫৮ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকার পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নও সাধিত হয়।

দ্বিতীয় পেদ্রুর ৫৮ বছরের শাসনামলে ব্রাজিল তিনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জয়লাভ করে। যুদ্ধগুলো ছিল প্লেটাইন যুদ্ধ, উরুগুয়েইয়ান যুদ্ধ, এবং ওয়ার অফ ট্রিপল অ্যালায়েন্স।এছাড়াও পেদ্রুর শাসনামলেই ব্রাজিল রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়। মূলত সফল নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়। এই ৫৮ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটি ছিল দাস প্রথার বিলোপ সাধন।

ব্রাজিল একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। দেশটির সরকার ব্যবস্থায় একজন প্রেসিডেন্ট, জাতীয় কংগ্রেস ও বিচার বিভাগ আছে। ১৮৮৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশটি গণতন্ত্রের সঙ্গে লড়াই করেছে।

ব্রাজিলের নানা ধরনের মাটি ও জলবায়ু দেখা যায়। তাই এখানে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদিত হয়।।

ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।ব্রাজিলের রপ্তানিখাত অত্যন্তু দ্রুত বিস্তৃত ও বিকশিত হচ্ছে, এবং টাইকুনের একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করছে। ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, পাদুকা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত, কফি, কমলার রস, সয়াবিন, এবং কর্নড বিফ। দেশটি ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ ও পণ্যবাজারে নিজের উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করে চলেছে। এছাড়াও ব্রাজিল উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির ১৯৯৪ সাল থেকে মুদ্রা হিসেবে ব্রাজিলীয় রিয়াল ব্যবহার করে আসছে।

ব্রাজিলের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক সংস্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। ব্রাজিল জাতিসংঘ, জি-২০, সিপিএলপি, লাতিন ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অফ ইবেরো-আমেরিকান স্টেটস, মার্কুসাউ ও ইউনিয়ন অফ সাউথ আমেরিকান নেশন্স, এবং ব্রিক দেশগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

ব্রাজিলীয় সাহিত্য বিশ্বে অন্যতম আলোড়ন তোলা সাহিত্য।ব্রাজিলের লেখক পাওলো কোয়েলহো বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত লেখক।এছাড়া মাচাদো দ্যে অ্যাসিস ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা লেখক হিসেবে সুপরিচিত।

ফুটবল খেলাই ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল পাগল। দেশটি কিছু সেরা খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে।ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে চিহ্নিত।

ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা অংশগ্রহণ করেছে বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরে। বিশ্বকাপ শিরোপাও তারা জিতেছে সবচেয়ে বেশি, পাঁচবার। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে।

সবচেয়ে বেশি, চারটি কনফেডারেশনস কাপ বিজয়ী দলও ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয়ের লড়াই, কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল সফলতা পেয়েছে আটবার।

ব্রাজিলের সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবলার হচ্ছেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, যিনি পেলে নামেই সারাবিশ্বে পরিচিত

ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে বেশি, ৭৭টি গোলের রেকর্ডও আছে পেলের দখলে। আর ব্রাজিলের জার্সি গায়ে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি, ১৪২টি ম্যাচ খেলেছেন সাবেক ডিফেন্ডার কাফু।

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে ছাড়াও গারিঞ্চা, জিকো, সক্রেটিস, জিজিনহো, রোমারিও, বেবেতো, রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহোদের মতো বিশ্ব-সেরা ফুটবলাররা খেলেছেন ব্রাজিলের হয়ে। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার নেইমারও উঠে এসেছেন ব্রাজিল থেকে।

ফুটবল ছাড়াও ভলিবল, বাস্কেটবল, অটো রেসিং এবং মার্শাল আর্ট ক্রীড়াও ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়। ব্রাজিলের পুরুষ জাতীয় ভলিবল দলটি ওয়ার্ল্ড লীগ, বিশ্ব ভলিবল গ্রাঁ চ্যাম্পিয়ন্স কাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ এবং বিশ্বকাপের বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলার মধ্যে রয়েছে - টেনিস, হ্যান্ডবল, সুইমিং এবং জিমন্যাসটিক্‌স যা গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলে বেশকিছু ক্রীড়ার উদ্ভব ঘটেছে। তন্মধ্যে - বীচ ভলিবল, ফুটসাল এবং ফুটভলি অন্যতম। মার্শাল আর্টে ক্যাপোইরা, ভ্যালে টুডো এবং ব্রাজিলিয়ান জি-জিতসু ক্রীড়ার প্রচলন ঘটিয়েছে। অটো রেসিংয়ে এ পর্যন্ত তিনজন ব্রাজিলীয় ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ানে আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে

ব্রাজিল একটি আশ্চর্যজনক দেশ, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির স্মৃতিস্তম্ভে সমৃদ্ধ, যা তার সীমান্ত পর্যন্ত অনেক দূরে পরিচিত।

প্রথমত, তারা কর্কোভোডোর গ্রানাইট পর্বতে খ্রিস্টের ত্রাণকর্তা (রিডাইমার) মূর্তির অন্তর্ভুক্ত। এই রিও ডি জেনেরিও প্রধান আকর্ষণ এক , এটি শহরের কেন্দ্র বাম একটু অবস্থিত হয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মিলিয়ন তীর্থযাত্রী দ্বারা বার্ষিক ব্রাজিল মধ্যে যীশু একটি স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন হয়।

রিও ডি জেনিরোতে এই মূর্তির পাশাপাশি দেশটির বৃহত্তম স্টেডিয়াম মারাকানা এবং মাউন্ট সুগার লাউফ দেখার সুযোগ রয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিবেচিত।দক্ষিণ ব্রাজিলের রাজ্য রিও গ্রান্দে দো সুলের ছোট্ট একটি শহর এনকান্তাদোতে তৈরি হচ্ছে যীশু নতুন মূর্তিটি। যার নাম ক্রাইস্ট দ্য প্রোটেক্টর। রিও-র মূর্তিটির তুলনায় এই মূর্তিটি ১৬ ফুট উঁচু। যেখানে নয়া মূর্তিটি ৪৩ মিটার উঁচু এবং এর দুটি হাত প্রসারিত ৩৬ মিটার। সেখানে রিও-র ক্রাইস্ট দ্য রিডিমের উচ্চতা ৩৮ মিটার এবং সেটির দুটি হাত প্রসারিত ২৮ মিটার। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে কংক্রিট এবং লোহার মূর্তিটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল।

প্রকৃতি ব্রাজিল আশ্চর্যজনক আকর্ষণের মধ্যে স্থাপন করেছে অ্যামাজন নদী। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীটি তার অনন্য বাস্তুতন্ত্রের সাথে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে ক্রান্তীয় বন এবং অস্বাভাবিক প্রাণী। এই ইকো ট্যুরিজম  এবং চরম বিনোদন প্রেমীদের জন্য একটি মহান জায়গা।

পন্তানাল এই আকর্ষণীয় জায়গাটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি একটি তুষারঝড় ভূখণ্ড (প্রায় ১৫০ হাজার বর্গ কিমি) প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে ভাসমান গাছপালা, বহিরাগত প্রজাপতি, পাখি এবং প্রাণীদের বিরল প্রজাতির একটি বড় সংখ্যা পাওয়া যায়।

ব্রাজিলের ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ। এই দেশের ইতিহাসের পুরাতন মূলধন সালভাদর শহর। পাহাড়ে বাহিয়া রাজ্যে এটি অবস্থিত। বেশিরভাগ ভবন এখানে পর্তুগিজ শৈলীতে নির্মিত হয়েছে এবং পেলোরিনহো চতুর্ভুজায়ও ঔপনিবেশিক ভবনগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। দর্শনীয় মধ্যে সেন্ট অ্যান্টোনিও এবং সান মার্সেলোর দুর্গ পরিদর্শন মূল্য ভাল।

এটি Minas Gerais মধ্যে Ouro Preto শহরে পরিদর্শন আকর্ষণীয় হতে হবে, যেখানে প্রায় প্রতিটি কাঠামো একটি স্থাপত্য স্মৃতিস্তম্ভ হয়। উপরন্তু একটি বাস্তব চারী, আকর্ষণীয় যাদুঘর এবং প্রাচীন গীর্জা সঙ্গে একটি পর্যটন ট্রেন আছে। কাছাকাছি আরেকটি প্রাচীন শহর - মারিয়ানা, যা দেখতে খুবই মূল্যবান।

 

No comments

Powered by Blogger.