পঙ্কজ ত্রিপাঠী - অভিনয়ের জন্যেই যার জন্ম
পঙ্কজ ত্রিপাঠী - অভিনয়ের জন্যেই যার জন্ম
৫
সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে ভারতের বিহারে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। বাবা পন্ডিত বানারস তিওয়ারি এবং মা হেমবন্তীর সন্তান
পঙ্কজ তার বাবা মায়ের স্বপ্ন ডাক্তার হবার ইচ্ছা পূরন না করে নিজের
স্বপ্ন অভিনেতা হবার পিছনে ছুটেন। তিনি প্রায় ৪০ টিরও বেশি
চলচ্চিত্র এবং ৬০ টির বেশি
টেলিভিশন নাটকে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে ‘ওমকার’ সিনেমাতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিষেক হয়। মূলত তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৯৫ সালে
বিজয় কুমারের একটি নাটকে স্থানীয় চোরের ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে। এই নাটকে তার
অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। তিনি তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি থিয়েটারে যুক্ত হবেন। প্রায় ৭ বছর ধরে
পঙ্কজ থিয়েটারে অভিনয়ের পরে তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং সেখানে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে ভর্তি
হন, সেখান থেকে ২০০৪ সালে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি বিনা পারিশ্রমিকে অংশ সিনেমায় এক্সট্রা আর্টিস্ট হিসেবে অভিনয় করেন। তার প্যাশনকে সম্মান জানাতে তার স্ত্রী মৃদুলা ত্রিপাঠী স্থানীয় স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসার চালাতেন। তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন আনুরাগ ক্যাশপ পরিচালিত ‘গ্যাংস অব ওয়াসাপুর’ সিনেমায়
সুলতান চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে। তিনি তখন ‘গুলাল’ নামের একটি সিরিয়ালের শুটিং করছিলেন। শুটিং চলাকালীন সময়ে আনুরাগ ক্যাশপের কাস্টিং ডিরেক্টর তাঁকে ফোন দেন এবং তাঁকে তাদের হাউজে আসতে বলেন। হাউজে গিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা অডিশন
দেবার পর ক্যাশপ তাঁকে
সিনেমায় নেন। এই সিনেমায় তার
চরিত্রটি দর্শক যখন লুফে নেয় তখন এঁকে একে তিনি মাসান, ফুকড়ে, মাঞ্জিঃ দ্যা মাউন্টেন ম্যানের মতো সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। গুঞ্জন সেক্সানায় বিচক্ষণ বাবার চরিত্রে অভিনয় কিংবা মিমি সিনেমায় কৃতি সাননের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় এখনো দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। মির্জাপুর সিরিজ তার ক্যারিয়ারকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কালিন ভাইয়া চরিত্রটি যেনো কৈ মাছের প্রাণ
হয়েছিল পর্দায়। তার মুখ থেকে বের হওয়া সংলাপ গুলো শুনে যেমন, ‘পুরুষ সবসময় নারীদের উপরেই থাকে’ দর্শকরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে। কৃষক পরিবারের ছেলে হওয়ায় তার ধৈর্য্যধারণের ক্ষমতা অতুলনীয় তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
ছোট বেলায় তিনি যেকোনো কাজ অত্যন্ত মনোযোগের সাথে করতেন যা তাঁকে অভিনেতা
হতে সাহায্য করেছে। তিনি রাঁধুনি হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। স্কুল পাশ করার পর হোটেল ম্যানেজমেন্টের
উপর তিনি কোর্সও করেন। একবার তাদের গ্রামে যাত্রার আসর হয় সেখান থেকেই
তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ শুরু হয়। বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে
উপজেলার একটি থিয়েটারে তিনি যুক্ত হন। একাধিকবার ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন। খুব সাদা-সিধে জীবনযাপন করেন তিনি। এখনো তার ফোনে কোনো এনরয়েড এপস তিনি ব্যবহার করেন না। সেই মান্ধাতা যুগের মতো ফোনে ম্যাসেজ চালাচালি করে যোগাযোগ করতেই তিনি পছন্দ করেন। নিজেকে পর্দায় দেখার জন্য তার এত আগ্রহ ছিলো
যে প্রায় টানা ৭ টি টেলিভিশন
কমার্শিয়াল শুধুমাত্র যাতায়াত ভাড়ার বিনিময়ে তিনি করেছেন। দিল্লির পানিপুরি তার প্রচণ্ড পছন্দ। এক সিনেমায় শুটিং
করতে গিয়ে শুধু পানিপুরি খেয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পেট খারাপ অবস্থাতেও কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় তিনি মন দিয়ে কাজটি
শেষ করেছিলেন। উপমহাদেশের এই নিবেদিত প্রাণ
কিংবদন্তী অভিনেতার বন্দনায় মুখর আজ সারা বিশ্বের
সিনেমাপ্রেমীরা।
No comments