খানুয়ার যুদ্ধ ছিল বাবরের অন্যতম সফল যুদ্ধ
খানুয়ার যুদ্ধ ছিল বাবরের অন্যতম সফল যুদ্ধ
ভারতের
অন্যান্য শক্তির মধ্যে রাজপুত শক্তি ছিলো অন্যতম। রাজপুতানার মেবারের অধিপতি ছিলেন রাজা রানা সংগ্রাম সিংহ। সংগ্রাম সিংহ ধারণা করেছিলেন বাবুর তার পূর্বপুরুষের মতোই দিল্লির সম্পদ লুট করে স্বদেশে ফিরে যাবেন। তখন তিনি ইব্রাহিম লোদীর রণক্লান্ত সেনাবাহিনীকে সহজেই পরাজিত করে মুসলিম শাসনের ধ্বংস্তুপের উপর স্বাধীন হিন্দুরাজ্য কায়েম করবেন। কিন্তু পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভের পর বাবুরের ভারতবর্ষে
স্থায়ীভাবে রাজত্ব করার কথা জেনে সংগ্রাম সিংহ এক শক্তিশালী রাজপুত
বাহিনী গঠন করেন। বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃবর্গ, আজমীর, মারওয়ার, আম্বর ও চান্দেরীর রাজপুতগণ
এবং মেওয়াটের হাসান খান তার দলে যোগদান করেন। প্রতিপক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখে বাবুরের সৈন্যগণ আতংকিত হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধ না করে কাবুলে
ফিরে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। সেনাবলের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বাবুর দুটি কাজ করেন। তিনি তার নিজের পানপাত্র ভেঙ্গে ফেলেন এবং তার সোনার ও রূপার পানপাত্রগুলো
বিতরণ করে দেন। বাবুর জিহাদ ঘোষণার মাধ্যমেও সৈন্যদেরকে উদ্দীপ্ত করেন এবং আগ্রার পশ্চিমে খানুয়ার প্রান্তরে সৈন্য সমাবেশ করেন।
১৫২৭
খ্রিস্টাব্দে ১৭ই মার্চ রানা সংগ্রাম সিংহ এবং বাবুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। প্রায় ১০ ঘন্টার যুদ্ধে
রাজপুত বাহিনী অসাধারণ বিক্রম দেখালেও বাবুবের যুদ্ধ কৌশলের কাছে অবশেষে পরাজিত হয়। বাবুর এই যুদ্ধে পানিপথের
মতোই ‘তুলঘুমা’যুদ্ধরীতি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে রাজপুত শক্তিতে ধ্বংস করেন। যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহ আহত অবস্থায় ধরা পড়েন এবং কিছুদিনের মধ্যে তার সহযোগীরা তাঁকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করে।
এই
যুদ্ধে পরাজিত হবার পর সংগ্রাম সিংহের
ভারতে রাজপুত স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়। শক্তিশালী মুঘলদের পরাজিত করার জন্য তার আর কোনো শক্তি
থাকেনা। রাজপুত শক্তির পতনের ফলে আফগানরাও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কারণ তাদের রাজপুতদের সাথে যোগ দিয়ে যে জোট তৈরির
সম্ভাবনা ছিলো তা নিঃশেষ হয়ে
যায়। এ যুদ্ধে জয়ের
ফলে বাবুর কাবুল থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তর করে এবং সেখান থেকেই সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকে, মুঘলদের অবস্থান ভারত বর্ষে আরও সুদৃঢ় হয়। কোনো কোনো ঐতিহাসিক খানুয়ার যুদ্ধকে বক্সারের যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ ভারতে ব্রিটিশ শক্তির প্রাধান্য স্থাপনে বক্সার যেমন একটি নিষ্পত্তিকারী যুদ্ধ, ভারতে মুঘল শক্তির উত্থানেও খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব ছিলো তদ্রুপ।
No comments