Adsterra

ট্যুর-ড্রামা ঘরনার সিনেমা ‘জিন্দেগি না মিলেগা দোবারা

 

ঢাকা ভয়েজ  dhaka voice; জিন্দেগি না মিদোবারা, জীবনে দুইবার মিলন হয়নালেগা , hindi movie

জীবনটা তো উপভোগ করার জন্যেই একজীবনে যদি পৃথিবীকে চক্ষু মেলিয়া না দেখা যায় তবে তো জীবনটাই বৃথা সুখের সন্ধানে আমরা সকলেই বাঁচি ২০১১ সালে জয়া আকতার পরিচালিত ট্যুর-ড্রামা ঘরনার সিনেমাজিন্দেগি না মিলেগা দোবারাবলিউডে মুক্তি পায় এটি এই পরিচালকের প্রথম সিনেমা এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন হঋত্তিক রোশান, ফারহান আখতার, অভয় দেওল, ক্যাটরিনা কাইফ সহ আরও অনেকেই 

কাবির, ইমরান এবং আর্জুন তিনজন সেই স্কুল জীবনের বন্ধু জীবন এবং জীবিকার তাগিদে তারা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকলেও মনের টান তাদের বিন্দুমাত্রও কমেনি কাবিরের সাথে নাতাশার এংগেজমেন্ট সেই অনুষ্ঠানে ইমরান উপস্থিত থাকলেও চাকরির ব্যস্ততায় আর্জুন উপস্থিত থাকতে পারেনি কাবির স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিতে চাকরি করে বেশ একঘেয়ামি এবং নিরস জীবন যাপন করে সে অফিসের কাজে স্ত্রীকে তেমন সময় দিতে না পারায় তার ডিভোর্স পর্যন্ত হয়ে যায় ইমরান পরিকল্পনা করে কাবিরের এংগেজমেন্টের পর তারা বন্ধু মিলে স্পেনে ঘুরতে যাবে এদিকে ইমরানের বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স সেই বাল্যবয়স থেকেই ইমরানের বাবা স্পেনের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ইমরান সিদ্ধান্ত নেয় এই ভ্রমণের ফাঁকে সে অবশ্যই তার বাবার সাথে একবারের জন্যে হলেও দেখা করবে ইমরান ভ্রমণের প্রস্তাব কাবিরকে দিলে প্রথমে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও বন্ধুর কথা সে রাখতে বাধ্য হয় এরপর তারা তিন বন্ধু স্পেনে একত্রিত হয় স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হবার পর আর্জুন মানসিকভাবে বেশ অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছিলো এই ট্যুরটা তার জন্য একধরনের রিফ্রেশমেন্ট মুড তৈরি করে ট্যুরে গিয়ে তাদের সাথে পরিচয় হয় লায়লা নামের একজন ভারতীয় মেয়ের লায়লা বেশ স্বাধীনচেতা এবং ভ্রমণ পিপাসু একজন তরুণী যার কাছে জীবনটা রঙ্গিন জীবন ক্ষণে ক্ষণে তাকে বিনোদিত করে আর্জুন সেই ভ্রমণে লায়লা খুব কাছের বন্ধু হিসেবে ভাবতে শুরু করে ইমরান কবিতা লিখতে, ছবি আঁকতে পছন্দ করে অর্থাৎ সে পুরোদম্ভর একজন সংস্কৃতি মনা লায়লা, ইমরান, কাবির এবং আর্জুন মিলে পুরো স্পেনের আনাচে কানাচে ঘুরতে শুরু করে তারা কখনো স্কুবা ডাইভ করে, কখনো বা স্কাই ডাইভ করে কিংবা টমেটো উৎসবে অংশ নিয়ে ভ্রমণটা উপভোগ করতে থাকে এর মধ্যে একদিন মদ্যপান করতে গিয়ে বারে কাবির, আর্জুন এবং ইমরান মারামারি করে জেল খাটে ইমরান তার বাবাকে ফোন করে, বিখ্যাত বাবার সুপারিশে ছেলে এবং তাদের বন্ধুদের ছেড়ে দেওয়া হয় বাবার কাছে গিয়ে ইমরানের তাদের সেই বাল্যকালের সুখী পরিবারের কথা মনে পরে সে বাবাকে অনুরোধ করে একবারের জন্যে হলেও তারা পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হবে কিন্তু বাবা তাতে রাজি হয়না এমন দুঃখ, হতাশার মাঝেও ইমরান জীবনের প্রকৃত সুখের সন্ধানে থাকে এই সিনেমার সংলাপ এবং সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো চমৎকার বিশেষ করে এই সিনেমায় স্পেনের সংস্কৃতি ঐতিহ্য পর্দায় বিস্তারিত দেখা যায় এই সিনেমা দেখতে দেখতে আপনার মনে হবে আপনিও এই সিনেমার মধ্যেই ভ্রমণ করছেন এই সিনেমায় ইমরানের কণ্ঠে শুনা কবিতাগুলো এক ধরনের স্নিগ্ধ অনুভূতি দেয় যেমন ইমরান যখন তার বাবার কাছ থেকে ফিরে আসে তখন সে একটি কবিতা পাঠ করে যার অনুবাদ এমন

যখন মেঘের কান্না আকাশে ছড়িয়ে পড়ে,

যখন দুঃখের ছায়াগুলো ঝকমক করে

যখন চোখের কোণের জল তার ঠিকানা খুঁজে পায়,

যখন ভয় একাকিত্বকে বাঁচিয়ে রাখে

তখন আমি নিজেকে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করি এবং বলি তুমি কাদছো কেনো?

জীবন আমাদের ঠিক এভাবেই বয়ে নিয়ে যাবে

এই গভীর নিরবতার মধ্যে দিয়ে আমাদের প্রত্যেককেই যাত্রা করতে হয়

প্রত্যেকের জীবনে সামান্য দুঃখ আছে,

প্রত্যেকের জীবনে সুখের অস্তিত্বও আছে

কান্নার কোনো প্রয়োজন নেই,

প্রতিটা মূহুর্ত নতুন জীবনের সূচনা করে

কেনো সেই অনাগত মূহুর্তকে হাত ছাড়া করতে চাও?

ওহ মন! তুমি কাদছো কেনো?

কাদছো কেনো!”         

 

এই সিনেমায় দারুণ কিছু সংলাপ রয়েছে একজন মানুষের আকাঙ্ক্ষা কেমন হতে পারে তা লায়লার মুখ থেকে শুনা সংলাপ থেকেই বুঝা যায় যখন আর্জুন লায়লাকে প্রশ্ন করে জীবনের অর্থ কি? লায়লা তার উত্তরে বলে- জীবন আমার কাছে একধরনের সারপ্রাইজ জীবন আমাকে হতবাক করে দিক আমি তা চাই যা আশা করিনাই তার চেয়েও ভালো কিছু চাই, খারাপটা কেনো চাইবো বলতে পারো? কাড়ি কাড়ি টাকা, স্মার্ট-হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ডের চেয়ে পাখি হয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াবে আমার সাথে কোনো সঙ্গী এটাই যে আমি চাই

বলিউডে এধরনের সিনেমা শুধু মাত্র আকতার সিবলিংরাই বানাতে পারে সেই ২০০০ সালের শুরুতে এমন সিনেমা নির্মাণ করে নতুন যুগের সূচনা করেছিলো ফারহান আখতার তারই দেখানো পথে এগারো বছর পর একই ধাঁচের সিনেমা নির্মাণ করলেন তারই বোন জয়া আখতার এধরনের সিনেমা কেনো তিনি বানিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে জয়া বলেছেন, ‘ আসলে আমরা ছোট বেলা থেকেই পশ্চিমা সিনেমাগুলো দেখতাম আর আমাদের বাবা-মায়ের মধ্যে যখন বিচ্ছেদ হলো আমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লাম,হতাশ থাকতাম আমাদের মাথায় এলো আমরা কিভাবে আনন্দ খুঁজে পাবো জীবনের অর্থ আসলে কি? আমরা হাসতে চাই, আমরা উড়তে চাইচমৎকার এই সিনেমাটি যদি না দেখে থাকেন তবে অবশ্যই দেখে নিতে পারেন


লিখেছেন ঃ সাদ ধ্রুব 

No comments

Powered by Blogger.