তারেক মাসুদের সাহসী নির্মাণ রানওয়ে
'রানওয়ে' সিনেমাটি তারেক মাসুদের অসাধারন নির্মাণ না বলে আমি বরং বলবো সাহসী নির্মাণ। কেনো সাহসী নির্মাণ বলছি সেটার ব্যখ্যা একটু পরে দিচ্ছি। তবে সিনেমাটির নাম কেনো 'রানওয়ে' রাখা হয়েছে তার ব্যখ্যা আমার কাছে স্পষ্ট ছিলোনা। তবে ইউটিউবে ক্যাথরিন মাসুদের এক সাক্ষাতকারে এর সুস্পষ্ট ব্যখ্যা পাই।
"রানওয়ে
এমন একটা ছবি যা একটা দৃশ্য
দিয়ে শুরু হয়। আমরা যখন উত্তরাতে থাকতাম তখন জানালার পাশ দিয়ে দেখতাম বস্তির মাঠে বাচ্চারা খেলছে আর ঠিক তার
পাশেই কয়েক ঘন্টা পর পর বিমান
ল্যান্ড করছে।এই যে আমার চোখে
দেখা একই সাথে এই দৃশ্যটা, এই
যে একই সংগে এত্ত বিশাল বৈষম্য এটা আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক আর সমাজব্যবস্থার চিত্র
তুলে ধরে।"- ক্যাথরিন মাসুদ।
প্রথমেই
বলি সিনেমাটিকে কেনো আমি সাহসী নির্মানের কাতারে ফেলেছি। সিনেমাটির কাহিনী গড়ে উঠে ২০০৫-২০০৬ সালের দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে। সে সময় বিএনপি
সরকারের আমলে এমন সিনেমা বানানো মানেই ছিলো প্রচন্ড সাহসের ব্যাপার।সিনেমায় দেখানো হয় ধর্মকে দেশ শাসনের
হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, দেশে জ্বালাও
পোড়াও, অরাজকতা তৈরি করতে সরকার জঙ্গিবাদকে পরোক্ষভাবে ইন্ধনযোগাতে থাকে।একটা পরিবার যাদের মূল আয়ের উৎস স্বামীর বিদেশি আয়ের উপার্জনের টাকা এবং মাস শেষে মেয়ের গার্মেন্টেসের স্বল্প আয়ের বেতন। যেখানে দেখা যায় বিদেশে যাবার পরেও দালালদের সর্বস্ব করার প্রবনতা এবং বেতন ভাতা না বাড়িয়ে বরং
শারিরীক নির্যাতন সহ নানা হুমকি
এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনের টাকা লুট করে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী
এবং কর্মকর্তাদের রাতারাতি আংগুল ফুলে কলা গাছ হবার দৃশ্য। সম্ভবত এই সিনেমার মাধ্যমেই
সরকারের উপর ক্ষোভটা প্রকাশ করেছেন কিংবা সিনেমার মাধ্যমেই প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন পরিচালক। জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টির নেপথ্যের মানুষেরাই স্বার্থের টানে সেই সদস্যদের অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে তখন হয়তো রুহুলের বাড়ি ফিরে আসাটাই হয়তো হয়েছে সঠিক প্রতিবাদ।
আমার
মনে হয় সিনেমাটি সময়
উপযোগী। কারন সম্প্রতি বংগবন্ধুর মূর্তি বা ভাস্কর্য নিয়ে
উগ্র মৌলবাদীরা যখন অত্যাচার শুরু করেছে তখন এত বছর পরেও
এই সিনেমাটা একদম সময় উপযোগী এক প্রেক্ষাপট তুলে
এনেছে বলে মনে করি।
তারেক মাসুদের সাহসী নির্মাণ রানওয়ে
লিখেছেন ঃ সাদ ধ্রুব
No comments