খুনি শিকদার - শাকিব খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রায় ২ যুগ ধরে রাজত্ব করছেন কিং খান শাকিব খান। শাকিব খান কোটি টাকার কাবিন, ফুল নেবে না অশ্রু, আমার প্রাণের প্রিয়া, শিকারি, নবাব, প্রিয়তমা সহ অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তবে তার খুনি শিকদার সিনেমাটি দর্শকদের মনে আলাদাভাবে গেঁথে আছে। খুনি শিকদার সিনেমায় শাকিব খান শাহজাহান শিকদার চরিত্রে অভিনয় করেন। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করা এখন পর্যন্ত একমাত্র সিনেমা এটি। ২০০৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মনোয়ার খোকন। শাহজাহান শিকদার গ্রামে মানুষের বাড়িতে চুরি করে মায়ের চিকিৎসার খরচ চালায়। একদিন চুরি করতে গিয়ে গ্রামের ইমাম তাঁকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার শাস্তি দেয়। তার মা এই শাস্তি মেনে না নিতে পেরে হার্ট এটাকে মারা যান। শিকদার ইমামকে হত্যা করে গ্রাম থেকে পালিয়ে একটি লঞ্চ ঘাটে আশ্রয় নেয়। সেখানে একজনের সাথে তার পরিচয় হয়। সে তাঁকে এক বরফ কলের নেতা(মাফিয়ার) কাছে নিয়ে যায় এবং নেতা তার উপর বরফকল চালানোর পরিচালনা এবং চাঁদাবাজির দায়িত্ব দেয়। সপ্তাহে চাঁদাবাজি থেকে ২ লাখ টাকা আসার পরেও তাঁকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বিষয়টি শিকদার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনা। সে বরফকলের সেই মাফিয়াকে হত্যা করে। বিষয়টি জানতে পেরে জাঁদরেল ইটের ব্যবসায়ী আকবর তাঁকে ডেকে পাঠায় এবং তার দলে কাজ করতে বলে। আকবর শিকদারকে দায়িত্ব দেয় আরেক ব্যবসায়ী রহমানকে হত্যা করার জন্য। দুটো বড় বড় খুনের পর শিকদারের নামে পত্র-পত্রিকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাঁকে পুলিশ খুজতে শুরু করে। তবে শিকদারের দল বারবার শিকদারকে খবর পৌঁছে দিলে সে পুলিশের ধরা ছোয়ার বাহিরে চলে যেতে থাকে। কিন্তু একজন খুনি, হত্যাকারীর পরিণতি কি এমনই হবে! সে কি বারবার পার পেয়ে যাবে? তার সাথে এরপর নানা মানুষ ষড়যন্ত্র শুরু করে। বেশ প্রেডিক্টেবল স্টোরি টেলিং হলেও সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে দূর্দান্ত সিনেমা ছিলো ‘খুনি শিকদার’। যদিও খুনি শিকদার সিনেমাটিকে অনেকেই এরশাদ শিকদারের বায়োপিক হিসেবে বলছেন কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি বায়োপিক ছিলোনা বরং এখানে ফিকশনাল ব্যাপারগুলোই বেশি ছিলো। তবে এরশাদ শিকদারের প্রিয় গান ‘আমি তো মরেই যাবো, চলেই যাবো, রেখে যাবো সবই’ গানটি এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে কয়েকবার বেজে উঠেছিলো। সিনেমায় একজন খুনিকে সমাজের চোখে যতটা ঘৃণিতভাবে দেখানো যায় সেরকমই চেষ্টা করা হয়েছে। এই সিনেমা তৈরি করে পরিচালক বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। এরশাদ শিকদার মারা যাবার পরেও তার দলের সাঙ্গ-পাংগরা তখনই ঢাকা শহরে ত্রাস সৃষ্টি করছিলো। এই সিনেমা মুক্তির সময় যখন পোস্টার টানানো হয় তখন একাধিকবার তৎকালীন এফডিসির সভাপতিকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু এই সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মনোয়ারা ফিল্মস সেই হত্যার হুমকিকে তোয়াক্কা না করে ঠিকই মুক্তি দিয়েছিলো সারাদেশ ব্যাপী সকল প্রেক্ষাগৃহে।
লিখেছেন ঃ সাদ ধ্রুব
No comments