৫৫ কেজি সোনা চুরি : জড়িত দুই রাজস্ব কর্মকর্তা, সঙ্গী এক সিপাহি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা চুরি করেছেন গুদামের দায়িত্বে থাকা দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। তাঁদের সহযোগিতা করেছেন এক সিপাহি। ওই দুই কর্মকর্তা গত আগস্টে বদলি হলেও সোনার হিসাবে গরমিল পাওয়ায় তাঁদের বদলি বাতিল করা হয়। গরমিল ধামাচাপা দিতেই তাঁরা ‘সিঁধ কাটার’ নাটক সাজিয়েছেন।
পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তারা এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্র গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ওই তিনজনের সঙ্গে
আর কারা জড়িত এবং গায়েব করা সোনা কোথায় আছে, তার খোঁজ চলছে। কাস্টমসের ওই তিনজনসহ মোট
আটজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। মামলাটির তদন্তভার বিমানবন্দর থানা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ
কর্মকর্তারা বলছেন, কাস্টমসের তিনজন সোনা চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা হলেন ওই গুদামের এ
শিফটের ইনচার্জ ও সহকারী রাজস্ব
কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম সাহেদ, সি শিফটের ইনচার্জ
ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম এবং সিপাহি মো. নিয়ামত হাওলাদার। এই তিনজনসহ মোট
আটজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
অন্য পাঁচজন হলেন গুদামের শিফট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও আকরাম শেখ
এবং তিন সিপাহি রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও আফজাল
হোসেন।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, সাইদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম
দীর্ঘদিন বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন। অপর দুই শিফট ইনচার্জ নতুন। তাই তাঁরা পুরোনো দুই কর্মকর্তাকেই সন্দেহ করছেন। এ ছাড়া সিপাহি
নিয়ামতও জড়িত। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন জবাব দিয়েছেন। ডিউটি না থাকলেও তাঁরা
বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতেন। তাঁদের যেকোনো সময় আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন,
ওই গুদামে ছয় মাস পরপর
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিবর্তিত হয়। দায়িত্ব পরিবর্তনের সময় নতুন কর্মকর্তারা পুরোনো কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সোনাসহ মূল্যবান পণ্যের হিসাব বুঝে নেন। সাইদুল ইসলাম এবং শহিদুল ইসলাম গত জানুয়ারি ও
ফেব্রুয়ারি থেকে গুদামের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের আগস্টে বদলি করা হয়। ১৮ আগস্ট তাঁরা
কাগজে-কলমে গুদামের পণ্যের হিসাব বুঝিয়ে দেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও আকরাম শেখকে।
কিন্তু সব সোনা মিলিয়ে
দিতে গড়িমসি করেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তার চাপে তাঁরা রাজি হন এবং সোনার
হিসাবে গরমিল ধরা পড়ে। জব্দ সোনার ৩৮৯টি ডিএম (শনাক্তকরণ রসিদ) থেকে বার ও অলংকার মিলিয়ে
৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা
কম পাওয়া যায়।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, শহিদুল ও সাইদুল নতুন
দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধার টোপ দিয়ে রাজি করান। সোনা হাতানোর বিষয়টি অন্যদিকে ঘোরাতে চুরির নাটক সাজান। এই নাটকে গুদামের
নিরাপত্তায় নিয়োজিত চার সিপাহি মো. রেজাউল করিম, মোজাম্মেল হক, মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত
হাওলাদারকেও সঙ্গে নেন তাঁরা। নিয়ামত সোনা সরানোর ক্ষেত্রে শহিদুল ও সাইদুলের সহযোগী
ছিলেন। নিয়ামত পুলিশকে বলেছেন, চুরির বিষয়টি সাজানো। এতে গুদামের সংশ্লিষ্ট অনেকে সহযোগিতা করেছেন।
সূত্র জানায়, সোনা চুরির বিষয়টি ৩ সেপ্টেম্বর জানাজানি
হলেও কাস্টমসে জানাজানি হয় বেশ কয়েক
দিন আগে। এ জন্যই ২৩
আগস্ট সাইদুল ও শহিদুলের বদলি
স্থগিত করে গুদামে ফেরত আনা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হলের ইনচার্জ এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মিনহাজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত আদেশে তাঁদের আবার গুদামের দায়িত্ব দিয়ে হিসাব মেলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম
নুরুল হুদা আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথমে আগস্টে খবর আসে, কিছু সোনা গুদামে নেই। এরপর আমি একটি কমিটি করি। যাঁরা আগে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সামনে গণনার জন্য তাঁদের বদলি বাতিল করি। তাঁদের এনে হিসাব করা হয়। তখন বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।’
সূত্র বলেছে, পুলিশ দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ও সাইদুল এবং
সিপাহি নিয়ামতের সাম্প্রতিক গতিবিধি এবং তাঁরা কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, এসব পর্যবেক্ষণ করেছে।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, ‘গুদাম থেকে সোনাগুলো গায়েব করে কোথায় নেওয়া হয়েছে, হাতবদলের পর কী করা
হয়েছে–এসবের খোঁজ চলছে। আমরা কিছু তথ্য এখনো পাইনি, সেগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। সেসব তথ্য পেলে এর সঙ্গে আর
কারা জড়িত, তা স্পষ্ট হবে।’
সোনা
চুরির মামলাটি এখন তদন্ত করবে ডিবি। ডিবির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. আকরামুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো মামলাটি বুঝে পাইনি। তবে ঘটনার পর থেকেই ছায়া
তদন্ত করছি।’
No comments