‘কারাগার’ চঞ্চল চৌধুরীর অন্যতম সেরা কাজ
আমাদের এপার বাংলায় থ্রিলার বাদ দিয়ে শুধু মিস্ট্রি-ড্রামা নিয়ে আগে কখনও কেউ সিরিজ বানায়নি। একটা মাত্র সাদা-মাটা কন্টেন্ট ছিলো (মুখোশ)। কিন্তু কারাগার পার্ট - ১ ছিলো সবকিছুর এক অনন্য মিশ্রণ এবং এখন পর্যন্ত এটা নিঃসন্দেহে এপার বাংলার সেরা কাজ, সেটা হলফ করে বলা যেতেই পারে।
কারাগার - পার্ট ১ (২০২২)
➤ জেনার : ফ্যান্টাসি, মিস্ট্রি, ড্রামা
➤ অভিনয়ে
: চঞ্চল চৌধুরী, আফজাল হোসাইন, ইনতেখাব দিনার, এফ এস নাঈম, তাসনিয়া ফারিন, একে আজাদ সেতু প্রমুখ।
➤ পরিচালনা : সাইদ আহমেদ শাওকি
➤ এপিসোড : ৭টি
➤ প্ল্যাটফর্ম : হইচই
➤ আইএমডিবি
রেটিং : ৮.৭/১০
➤ ব্যক্তিগত
রেটিং : ৯/১০
প্লট :
সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি যে একটা জেল খানায় সেল রয়েছে ১৪৫ টা।
নিত্যদিনের মতোই কয়েদি কাউন্ট করতে গিয়ে একজন কয়েদি বেশি পাওয়া যায় তাও আবার এমন
এক সেলে যেটা গত ৫০ বছর ধরে বন্ধ। এখন কে এই লোক? কি তার পরিচয়? কীভাবে ঢুকলো ওই গত ৫০ বছর ধরে বন্ধ
হয়ে থাকা সেলটি তে? এই সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে আপনাকে
হইচই এ গিয়ে দেখতে হবে ‘কারাগার’ সিরিজটি।
অভিনয় :
এই সিরিজের অন্যতম ভালো একটা দিক হচ্ছে যে, এখানে প্রতিটি চরিত্রকে ইম্পর্টেন্স দেওয়া হয়েছে। থাম্বনেলে চঞ্চল
চৌধুরী আছেন বলে যে শুধু তার স্ক্রীনপ্লে বেশি থাকবে, এমন টা ছিলো না।
এবার আসি অভিনয়ের দিকে। চঞ্চল চৌধুরীকে দিয়েই শুরু করি। আপনারা
অনেকেই বলেছেন যে এখন পর্যন্ত কারাগার তার বেস্ট কাজ (অনেক রিভিউতেই দেখেছি)।
কিন্তু আমি বলবো না। এটা তার বেস্ট কাজ/বেস্ট পারফর্মেন্স ছিলো না। তিনি যে বেস্ট,
সেটা আরও অনেক আগেই প্রুফ করেছিলেন। তাই আপনাদের
কাছে ওনার ভিন্ন কিছুর সংযোজনকে মনে হয় বেস্ট। তিনি এমন একজন অভিনেতা যে উনাকে
আপনি যতই চ্যালেঞ্জিং ক্যারেক্টর দেন না কেন, উনি সেটা কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনাকে প্লে করে দেখাবেন। হয়তো এখানেই
আছে কোনো অভিনেতার জাত-স্বার্থকতা।
তবে এই না যে এটা তার এ্যাভারেজ কাজ, অবশ্যই এটা তার অনেক ভালো কাজ। তার চরিত্রের এক্সপ্রেশন, লুক এগুলো ছিলো একদম টপ-নচ! সাথে তার বোবাকালা’র অভিনয়ও অনেক অনেক প্রশংসার দাবি রাখে।
জেলার মোস্তাকের চরিত্রে রয়েছেন ইন্তেখাব দিনার। তার চরিত্রটা অনেক
প্রমিজিং ছিলো। প্রতিটি ডায়লগ এতো সুন্দর করে তিনি ডেলিভারি দিয়েছেন! তার রাগ,
ভয়, দুশ্চিন্তা
আবার ভুল স্বীকৃতি একেক সময় একেক প্যাটার্ন খুব ভালো লেগেছে দেখতে।
তাসনিয়া ফারিণ ও দুর্দান্ত ছিলেন। এফ এস নাইম কে অনেক দিন পরে
দেখলাম। তিনিও তার জায়গায় যথেষ্ট ভালো করেছেন। আফজাল হোসেনর সুরমা পরা চোখের লুক
দেখলে আসলেই একটু শরীর কাটা দিয়ে উঠেছিলো। যতক্ষণ স্ক্রীনে ছিলেন- বেশ ভালো অভিনয়
করেছেন। সাপোর্টিং কাস্টগুলোও অনেক ভালো ছিলো। শতাব্দী ওয়াদুদের গ্লিম্পজও বেশ
প্রমিজিং ছিলো। হয়তো এটার পার্ট - ২ তে তাকে আরও ইন ডিটেইলে আমরা দেখতে পারবো।
আর একজনের কথা একটু বলিই, একটা
কয়েদি আছে হ্যাংলা, কালো করে ইয়ং টাইপ। ওই ছেলেটার
চরিত্রটা একদম ফানি ছিলো। ভলিবল খেলার সময় যখন তার সাথের সিনিয়র ভাষণ দেয়, তখন ছেলেটার দিকে একবার তাকায়েন- ওর করা
রিপিটেড সিনগুলো দেখে আপনি হাসতে বাধ্য।
অবজারভেশন :
সিরিজটার সিনেমাটোগ্রাফি, কালার
গ্রেডিং, এডিটিং, ডাবিং, ডিরেকশনে অনেক খোঁজার পরেও কোথাও কোন
ভুল পেলাম নাহ। হয়তো তার (ডিরেক্টরের) কাজের প্রতি একটা ভালোবাসা আছে বলেই আমার
চোখে পরেনি।
শাউকির সর্বপ্রথম মেগাহিট সিরিজ ছিলো তাকব্দীর (২০২০)। তার অন্যতম
ভালো কিন্তু আন্ডাররেটেড আরেক টা কাজ হচ্ছে ঊনলৌকিক (২০২১)।
এই সিরিজ টায় প্রায় প্রতিটা ক্যারেক্টরের মধ্যে সাস্পেন্স রয়েছে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক অ্যাঙ্গেজিং থাকবেন আর শেষে যে এমন একটা টুইস্ট রাখবেন
তিনি এটা কেউ হয়তো ভাবতেই পারেনি। আমি লাস্ট ৫ মিনিটে শুধু থ হয়ে বসেছিলাম,
‘আরেহ ভাই এটা কি হইলো?’ শেষে একটা জিনিস, মেইনস্ট্রিমে অনেক প্রশ্নইতো রয়েছে কিন্তু তন্মধ্যে একটি সাইড
কুয়েশ্চন হচ্ছে,,“পুরো সিরিজে একটা বোরকা পড়া মহিলা কে
দেখতে পাবেন কিন্তু তার সাথে কার কি সম্পর্ক? কে সে?” মেইনস্ট্রিম কুয়েশ্চনের পাশাপাশি
আপনাকে এগুলোও অনেক ভাবাবে।
No comments