Adsterra

আইয়ুব বাচ্চুঃ সঙ্গীতের নক্ষত্র

আইয়ুব বাচ্চুঃ সঙ্গীতের  নক্ষত্র


আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক জগতের একজন কিংবদন্তী। ১৯৬২ সালের ১৬ই আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ইশহাক চৌধুরী এবং নূরজাহান বেগম দম্পতির বড় সন্তান তিনি। যুদ্ধের পর চট্টগ্রামের জুবলী রোডের একটি বাড়িতে তার কৈশর জীবন অতিবাহিত হয়। কৈশর বয়সেই কুইন, ডিপ পার্পল, দ্যা জিমি হেনড্রিক্স এক্সপেরিয়েন্স এসব আমেরিকান রক ব্যান্ডের গান শুনতেন তিনি। জিমি হেনড্রিক্সের গিটার বাজানো তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছিলো যে তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ইলেকট্রিক গিটার নিয়ে তখন থেকেই গিটারে টুংটাং আওয়াজ বাজাতেন। গিটারের প্রতি আগ্রহ দেখে তার বাবা তাঁকে তার ১১ তম জন্মদিনে গিটার উপহার দেন। তার ওস্তাদ ছিলেন বার্মিজ গিটারিস্ট জেকব ডায়াজ। জেকব ডায়াজ তার গিটারের প্রতি আগ্রহ দেখে বলেছিলেন, ‘লেগে থাকো, একদিন তুমি বাংলাদেশের সেরা গীটারবাদক হবেই হবে।’ তার প্রথম গঠিত ব্যান্ডের নাম ‘আগলি বয়েজ’ যা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তিনি ‘আগলি বয়েজের’ গিটারিস্ট ছিলেন এবং সেই ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ছিলেন আরেক বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। সেই সময় তারা ভাড়ায় বিভিন্ন ক্লাবে ক্লাবে গান গাইতো। তবে ১৯৮০ সালে কুমার বিশ্বজিৎ ‘সোলস’ ব্যান্ডে চলে গেলে সেই ব্যান্ডটি ভেঙ্গে যায়। মাঝখানে ১৯৭৭ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ড (বর্তমানে নগরবাউল) ব্যান্ডে গিটারবাদক হিসেবে যোগ দেন। ফিলিংস ব্যান্ডের ভোকালিস্ট জেমস যিনি আরেক জীবন্ত ব্যান্ড কিংবদন্তী তাঁকে একদিন চায়ের দোকানে গিটার বাজাতে দেখে তার দলে যোগ দিতে বলেন। ৮১ সাল পর্যন্ত সেই ব্যান্ডের হয়েও তিনি পর্যাপ্ত শো করেছিলেন। একদিন একটা ক্যাফেতে শো করতে গিয়ে ‘সোলস’ ব্যান্ডের একজন টিমমেট নকিব খানের মনে গেঁথে যান। নকিব খান তাঁকে তাদের স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে তপন চৌধুরীর সাথে পরিচয় করান এবং সেই থেকে তার নতুন করে ‘সোলসের’ সাথে যাত্রা শুরু হয়। মানুষ মাটির কাছাকাছি শিরোনামের এলবামে বাচ্চুর সোলসের হয়ে প্রথম গানটি ছিলো ‘হারানো বিকেলের গল্প’। সোলসের সাথে তার শেষ এলবাম ছিলো ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট যা ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়। তবে সোলসের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তিনি সোলস ত্যাগ করেন। এই বিষয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আসলে সোলসের সাথে আমার মনের মিল হচ্ছিলোনা। আমি অনেকটাই উঁচু স্কেলের রক গানের প্রতি আগ্রহ ছিলো। বিপরীতে সোলসের অন্যান্য সদস্যরা শান্ত, সুমধুর গান গাইতো। আমি তাদেরকে মোটেও অসম্মান করিনি। আমার মনে হলো যে তাদের থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মতো করে আমার গান গাওয়া উচিৎ।’ এরপর তিনি ১৯৯১ সালে ঢাকায় এসে ‘ইয়োলো রিভার ব্যান্ড’ নামের একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। ১৯৯১ সালে একবার ভারতে গেলে উপস্থাপক ভুলে তাদের ব্যান্ডের নাম ঘোষণা করেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। এরপর থেকেই এই ব্যান্ড এল আর বি নামে পরিচিতি পায় অর্থাৎ তিনি এই নামটি রেখে দেন। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এল আর বি প্রথম কনসার্ট করে। যা বামবা দ্বারা পরিচালিত হয়। মূলত এই কনসার্টটি ছিলো একপ্রকারের প্রতিবাদী কনসার্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের উৎযাপন উপলক্ষে এই কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিলো। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে প্রথম ডাবল এলবামঃ এল আর বি ১ এবং এল আর বি ২ প্রকাশিত হয়েছিলো। ব্যান্ডটির তৃতীয় এলবাম সুখ জুন মাসে প্রকাশিত হয় এবং এই এলবামের ‘চলো বদলে যাই’ গানটি এখন পর্যন্ত সর্বাধিক আয়কৃত অডিও গানগুলোর মধ্যে একটি। তার একক এলবাম গুলোও ছিলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সোলসে থাকাকালীন তিনি ২টো একক এলবাম বের করেছিলেন যার একটি হলো ময়না এবং অপরটি রক্তগোলাপ যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ১৯৯৫ সালে বাচ্চু তার নিজের তৃতীয় একক এলবাম ‘কষ্ট’ প্রকাশ করেন। মাত্র ১ বছরেই এই এলবামটির ৩ লক্ষ অডিও কপি বিক্রি হয়েছিল। অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া আইয়ুব বাচ্চুর চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান কাজী হায়াত পরিচালিত সিনেমা ‘আম্মাজানের’ টাইটেল ট্র্যাক ‘আম্মাজান’। 

১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ঢাকার মগবাজারে তিনি এবি কিচেন নামের একটি স্টুডিও তৈরি করেন যেখানে তার সোলো এলবাম এবং একই সাথে এল আর বি’র এলবামের গানগুলোও রেকর্ডিং হতো। ১৯৯১ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী চন্দনাকে বিয়ে করেন। তাদের একটি পুত্র এবং কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর রূপালি গিটার ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। 


লিখেছেন ঃ সাদ ধ্রুব 

No comments

Powered by Blogger.