আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে কি সত্যিই আলাদা ছিল?
নিশ্চয়ই জানেন পদার্থবিদ ভ আইনস্টাইন theory of relativity E is equal to MC square সূত্রের আবিষ্কারক। ফটো ইলেকট্রিক নীতি তারই উত্থাপন। এইসব তত্ত্ব দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। আর এসব অবদানেই পেয়েছিলেন নোবেল পুরুস্কার। আশ্চর্য চিন্তাশক্তি আর বোধ শক্তির কারণে লোকজন মনে করে যে আইনী স্টাইনের ব্রেইন অনন্য সাধারণ ছিল। আর সাধারণ মানুষের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। ব্যাপারটা আইনের স্টাইলও বুঝতে পেরেছিলেন এবং চাইতেন যে মৃত্যুর পর তার শরীর নিয়ে যেন কোনো গবেষণা করা না হয়। বরঞ্চ তিনি এরকম নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেন মৃত্যুর পর তার শব দাহ করা হয়।
কিন্তু আলবার্ট যা ভয় পেয়েছিলেন তাই হয়েছিল। উনিশশো পঞ্চান্ন সালের তেরোই এপ্রিল। প্রিন্স প্রিন্সট্রান হাসপাতালে যখন আইনস্টাইন মারা যান তখন ময়নাতদন্তের জন্য যে ডাক্তার এসেছিলেন তিনি আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি করেন। আসলে এই আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ভিতরে কি এমন আছে? আর সবার মতোই ওই ডাক্তারও এ নিয়ে ভীষণ কৌতূহলী ছিলেন। সেই ডাক্তারের নাম ছিল থমাস হার্ভি। কয়েকদিন পর যখন প্রিন্সট্রান হাসপাতালের নজরে বিষয়টি আসে, তখন তারা হার্ভ্রিকে বরখাস্ত করে। কিন্তু ডাক্তার হারভী আইনের ছেলে হ্যান্ডস আলবার্টের কাছে তার বাবার ব্রেন নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি চান।
ডক্টর হারভী প্রথমে সম্পূর্ণ ব্রেইনের সব অ্যাঙ্গেল থেকে
বেশ কিছু ছবি তুলে নেন। এবং তারপর ব্রেনটিকে ভাগ করে ফেলেন দুশো চল্লিশটি ব্লকে।
পরবর্তীতে ব্রেইনের আলাদা আলাদা অংশের কথা মাথায় রেখে এই ব্লক থেকে এক হাজারেরও
বেশি স্লাইড তৈরি করেন তিনি। এরপর এই স্লাইডগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে
বাক্স বন্দি করে পাঠিয়ে দেন পুরো পৃথিবীর নানা দেশের গবেষকদের কাছে।
উনিশশো পঁচাশি সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের ব্রেন নিয়ে প্রথম
গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
এরপর থেকে অসংখ্য গবেষণাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের গবেষণা থেকে
পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আইনস্টাইনের ব্রেইনের সাথে সাধারণ মানুষের ব্রেইনের ভিন্নতা
প্রমানিত। সব চেয়ে বড় পার্থক্যটা পাওয়া যায় মস্তিষ্কের কর্পাস কলসাম নামক
অংশে। মানুষের মস্তিষ্ক দুটি ভাগে বিভক্ত। মানুষ যে কাজ করে প্রথমে তার একটা অংশ brain
এই প্রক্রিয়া শুরু করে. আর brain থেকেই শরীরে
signal ছড়িয়ে পরে।
ব্রেনের বাম অংশ আমাদের শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আর ব্রেনের ডান অংশ আমাদের শরীরের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ব্রেনের বাম অংশ, কথা বলা, লেখা, গানিতিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। আর ডান অংশ সৃজনশীলতা, শিল্পকলা, সংগীত এসব স্কিল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আপনি হয়তো ভাবছেন এসবের মাঝে কর্পাস কলসমের কাজ কি?
যখন আমাদের ব্রেনের ডান অংশ কোন ভুল করে, সংশোধনের জন্য brain এর বাম অংশ থেকে সংকেত আসে। আর এই সংকেত আদান প্রদানের কাজটাই করে থাকে করপাস করোসম। আইনস্টাইনে করোসম সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকটাই বড় ছিল। অর্থাৎ তার মস্তিষ্কের দুই অংশের মাঝে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা ছিল বেশ মজবুত। যার ফলে একই সময়ে তিনি অনেকগুলো জটিল বিষয়ে চিন্তা করতে পারতেন।
আইনস্টাইনের ব্রেইনের সেরিব্রালকটেক্স মস্তিষ্কের বাকি অংশগুলোর চেয়ে অনেক পাতলা ছিল এবং এই পাতলা অংশে নিউরনের ঘনত্ব ছল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে তার গানিতিক দক্ষতা ছিল অদ্ভুত এমনকি জটিল গাণিতিক সমস্যা তিনি কাগজ আর কলম ছাড়াই সমাধান করতে পারতেন। বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক ধরনের জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে। আবিষ্কার হয়েছে নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তি। আইনস্টাইনে প্রসিদ্ধ মস্তিস্ক নিয়ে সামনে আরো গবেষণা হবে। উন্মোচিত হবার অপেক্ষায় আরো অনেক রহস্য।
No comments