Adsterra

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্য


পৃথিবীতে প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আশ্রয়ের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল শান রাজবংশ। খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গা দখল করে নিয়েছে শান রাজবংশ। পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম-আয়েশের সব ধরনের ব্যবস্থা। ছিল খাদ্য ও বিনোদনব্যবস্থা। ইতিহাসবিদরা এই বৃদ্ধাশ্রমকে প্রাচীন চীনে গড়ে ওঠা সভ্যতার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমের সেই ছবি এখন আর নেই। আজ প্রীতি-প্রেমের পুণ্য বাঁধনের চিরায়ত ভাবনা বদলে তৈরি হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। যেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে বাবা-মাকে পাঠাতে পারলেই সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি সন্তানদের। কিন্তু সেই পরম শ্রদ্ধেয় বাবা-মায়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মা সন্তানকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছেন। সুতরাং সে (সন্তান) যেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, তাদের দুঃখ-কষ্ট দিও না, তাদের সম্মান রক্ষা করে কথা বলো, তাদের বৃদ্ধ বয়সে তিরস্কার করো না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৮)

বাবা-মায়ের শোকর আদায়ের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো তাদের বার্ধক্য। কারণ এ সময় তারাও শিশুর মতো হয়ে যান। নিজেরা কিছুই করতে পারেন না। সন্তানই তখন তাদের অন্ধের যষ্টি। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করো না, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, বাবা-মায়ের কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের উফ বলো না এবং তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো আর দোয়া করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩-২৪)

উল্লিখিত আয়াতের শেষাংশে আল্লাহতায়ালার শেখানো দোয়া অনুযায়ী বোঝা যায়, সন্তান শৈশবে যে ধরনের লালন-পালনের মুখাপেক্ষী হয়, ঠিক তেমনি বাবা-মায়েরাও বৃদ্ধ বয়সে সে ধরনের মমতাপূর্ণ আচরণের মুখাপেক্ষী হন। অন্যদিকে বার্ধক্যে মা-বাবার খেদমত করতে পারাটা যেমন জান্নাতে প্রবেশের কারণ তেমনি মা-বাবার খেদমত না করাটাও হতভাগ্যের কারণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘নবীজি (সা.) একবার মিম্বারে আরোহণ করলেন। প্রথম ধাপে উঠে বললেন, আমিন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে উঠেও বললেন, আমিন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, (কী বিষয় আাল্লাহর রাসুল?) আপনাকে (এভাবে) আমিন বলতে শুনলাম? তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমি যখন মিম্বারে আরোহণ করলাম তখন জিবরাইল (আ.) আগমন করলেন এবং বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যে রমজান মাস পেল আর রমজান গত হয়ে গেল কিন্তু তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। তারপর বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যে তার মা-বাবাকে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথচ তারা তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না (অর্থাৎ তাদের খেদমতের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না) আমি বললাম, আমিন। তৃতীয়বার বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হলো আর সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করল না। বললাম, আমিন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৫১)

দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। প্রবীণরা আমাদের অনেকের কাছেই স্রেফ ‘বুড়ো-বুড়ি’। বাংলাদেশে ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। অধিকাংশই নারী তথা জননী ‘যার পদতলেই সন্তানের জান্নাত’। বাস্তবে এসব জননীকুলের অনেকের অবস্থা খুবই অসহায় ‘সন্তান পরিত্যক্তা জননী’। আমাদের বহুমুখী কর্মব্যস্ততায় পারস্পরিক দায়বদ্ধতা লোপ পাচ্ছে, আর মা-বাবা তথা প্রিয়জনের প্রতি বাড়ছে উপেক্ষা। বিশ্বনবী (সা.)-এর ভাষায়, ‘বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মায়ের সেবা-সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি।’ সহিহ তিরমিজি, হাদিস : ১৮৯৯

প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে প্রবীণদের সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত (উম্মত) নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)

No comments

Powered by Blogger.