আবাবিল পাখির ক্ষুদ্র পাথর নিক্ষেপে বিধ্বস্ত আবরাহার
মক্কা নগরীতে অবস্থিত কাবা শরীফের ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য ও পবিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ যখন দলে দলে কাবা ঘরের দিকে আসতে থাকে তখন ইয়েমেনের রাজা আব্রাহা ঈর্ষাণিত হয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। আব্রাহার এই উদ্দেশ্যে ৬০ হাজার সৈন্য ও কয়েক হাজার হাতি নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হন।
যখন তারা মসজিদুল হারাম শরীফের কাছাকাছি পৌছান তখন আল্লাহ
হাজার হাজার আবাবিল পাখি প্রেরণ করেন।
পাখিগুলো আল্লাহর নির্দেশে পায়ের তালুতে ২ টি ও মুখের মধ্যে ১ টি করে পাথর নিয়ে আব্রাহার হাতি বাহিনীর উপর নিক্ষেপ করতে থাকে এবং তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়।
এই ঘটনার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা আল ফীলে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কাবা শরীফে এখনও এই আবাবিল পাখি দেখা যায়।
সময়টা ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। মক্কার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের শাসক আবরাহা। আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতা ও শক্তি। ক্ষমতার দাপটে আবরাহার ইচ্ছা হলো ইয়েমেনের রাজধানী সানাতে সে কাবার অনুরূপ কিছু একটা তৈরি করবে। অতঃপর সারা পৃথিবী থেকে মানুষ হজ পালন করতে মক্কার পরিবর্তে সানায় যাবে। নাগরিকদের জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল অর্থ এবং উন্নয়ন কর্মীর কোনো অভাব না থাকায় তা যথাসময়ে তৈরিও হয়ে গেল।
কিন্তু বাদ সাধল, সারা পৃথিবীর মানুষ। হজ্ব
পালনের জন্য তাদের ধর্মীয় পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর তৈরি ঘর কাবা থেকে কোনোক্রমেই
সানার কাবায় যাচ্ছিল না। এতেই একসময় ক্ষেপে যায় দো
প্রতাপশালী আবরাহা! সিদ্ধান্ত নেয় ইব্রাহীম আঃ এর কাবা ভেঙে
ফেলতে হবে! সিদ্ধান্ত মোতাবেক সৈন্য-সামন্ত নিয়ে কাবা অভিমুখে রওয়ানা হয় সে। সাথে ৯-১৩টি
শক্তিশালী হাতি।
পথিমধ্যে প্রভাবশালী কুরাইশ বংশের নেতা আবদুল মোত্তালিব আবরাহার পথরোধ করে দাঁড়ালেন। সতর্ক করলেন আবরাহাকে। তাকে বললেন, এমন বিপজ্জনক কাজ থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে উন্মত্ত আবরাহাকে থামানো গেল না। তবে যাত্রাপথে কিছুটা বিঘ্ন ঘটাল হাতিগুলো। হাতিগুলোর দৃষ্টি সীমানার মধ্যে পবিত্র কাবা শরিফ আসার পর তারা আর অগ্রসর হতে চাইছিল না। তাই তারা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। চতুর আবরাহা হাতিগুলোর অভিপ্রায় বুঝতে পেরে ও গুলোর মুখ ঘুরিয়ে অন্যমুখী করল। তারপর তাদের খাওয়াল ভালো ভালো খাবার। উপরন্তু কিছু খাবার কাবামুখী পথে ও কাবা প্রাঙ্গণেও জমা করে রাখল।
আল্লাহ তার প্রতি বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু একটা দেখানোর জন্যই বোধকরি হাতিগুলোকে সেই রক্ষিত খাবারগুলোর প্রতি অনুরক্ত হওয়ার পথে আর বাদ সাধলেন না। তাই খাদ্যলোভী হাতিগুলো এবার জোর কদমেই এগোতে থাকল কাবার দিকে। মক্কার বিশ্বাসী কিন্তু দুর্বল মানুষগুলো দু-হাত তুলে ফরিয়াদ জানালেন আসমান ও জমিনের মালিক আল্লাহর কাছে। বললেন, ‘ইয়া রাব্বুল আল-আমীন! একমাত্র তুমিই পার এই দানবের হাত থেকে আমাদের প্রাণ প্রিয় কাবা ঘরটিকে রক্ষা করতে।’
ধৈর্যশীল আল্লাহ তাঁর ধৈর্যকে আর প্রলম্বিত করলেন না। তাঁরই
সৃষ্ট সর্ববৃহৎ স্থলপ্রাণী হাতির সমন্বয়ে গঠিত ও বিবিধ সমরাস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর
বিরুদ্ধে তিনি পাঠালেন তাঁর অতি ক্ষুদ্র প্রাণী ‘আবাবিল’ পাখিকে। অস্ত্র হিসেবে তাদের সাথে দিলেন প্রতি পাখির হাতে-পায়ে বহনযোগ্য
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোড়ামাটির তৈরি শক্ত ঢিল। ঝাঁকে ঝাঁকে তারা উড়ে এলো বৃহদাকার হাতি
ও সুসজ্জিত সেই বাহিনীর হামলা প্রতিরোধে, দুহাতে ক্ষুদ্রাতি
ক্ষুদ্র দুটি ঢিল নিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গবাদি পশুর খাদ্য, গমের ভুসি তুল্য বস্তুতে পরিণত হলো শক্তিশালী সেই বাহিনী ও হাতিগুলো।
অতঃপর বাতাসে উড়তে লাগল সেই ভুসি!
রক্ষা পেল পবিত্র কাবা ঘর। আর তার কিছু দিন পরই এই পৃথিবীতে
সুখ ও শান্তির প্রতীক হিসেবে আগমন ঘটল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর।
পৃথিবীর মানুষগুলোর জন্য শেষ নবী হিসেবে।
No comments