যে বিচারকের কারণে জাপান - বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব
বাংলাদেশের নিঃস্বার্থ বন্ধু কোন দেশ? এই প্রশ্নের উত্তর নিঃসন্দেহে জাপান। প্রশ্ন কেন জাপান বাংলাদেশের এমন বন্ধু?
এর উত্তর ব্রিটিশ ভারতের কুষ্টিয়া তে জন্ম নেয়া একজন
বিচারক এর কারণ।
আজকের জাপানের উন্নতির পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখা সেই বিচারককে ভুলেনি জাপান। তার নামের ভাস্কর্য আর সদরপে দাঁড়িয়ে জাপানের কিয়েটো শহরে। তার নামের আছে রাস্তা, গড়া হয়েছে যাদুঘর। কে সেই বিচারক তা জানবো আজকের প্রতিবেদনে।
প্রয়াত হিরোহিত জাপানের সম্রাট থাকাকালীন বলেছেন, যতদিন
জাপান থাকবে ততদিন বাঙালি খাদ্য অভাবে অর্থ কষ্টে মরবে না।
জাপান হবে বাঙালির একমাত্র চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু। সম্রাটের এই বক্তব্য ছিল
একজন বাঙ্গালীর প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ। এই বাঙালি ব্যক্তি আর কেউ নয়, রাধা বিনোদ পাল।
তিনি ছিলেন শিক্ষক, আইনজীবী। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সালিমপুর গ্রামে ১৮৮৬
সালে। যদিও তিনি দেশ ভাগের পর ভারতে নাগরিক হয়েছিলেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই
ভারতীয় নাগরিককে জাপান জাতীয় বীরের মর্যাদা দেয়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সীন যায়াবি ২০০৭ সালে তিন দিনের জন্য ভারত সফরে এসে রাধা বিনোদ পালের ছেলে প্রশান্ত পালের সাথে দেখাও করে গেছেন।
আজ যে উন্নত জাপান আমরা দেখছি দেখি তার পেছনে যার বড় অবদান সেই রাধা বিনোদ পালের শৈশব ও কৈশোর কাটে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। শিশুকালে তার বাবা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। কৈশোরে একটি বড় সময় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিত থেকে লেখাপড়া করেন তিনি। অভাবের তাড়নায় এক সময়ের পর পড়াশোনা বন্ধ ও হয়েছিল রাধা বিনোদের। পরিবারের খরচ জোগাড়ের যখন জন্য মামার দোকানে ফুড ফরমাস খাটতে হয়েছিল তাকে।
তাকে সম্মান দেয়ার কারণ তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
পর জাপানে সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধ অপরাধ ও
মানবতার বিরোধের যে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল বিচারের সম্মুখীন করা হয় সেই
ট্রাইবুনালে ১১ জন বিকারকের একজন ছিলেন রাধা বিনোদ পাল। জাপানের বিরুদ্ধে গঠিত এই
ট্রায়ালে ১১ জন বিচারকের মধ্যে শুধুমাত্র রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছেন।
বলা হয় তাকে জাপানের পক্ষে রাধা বিনোদ পালের জন্যই এই ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা কমিয়ে ছিলেন।
এই ট্রায়ালে অভিযুক্তদের মধ্যে জাপানের তৎকালীন সম্রাট হিরোহিতকে বাদ দেয়া
হয়েছিল।
ট্রায়াল ধাপে এই বাঙালি বিচারকের অবস্থানের কারণে জাপান অনেক কম ক্ষতিপূরণের উপর বেঁচে গিয়েছিল। নয়তো সে ক্ষতিপূরণের বোঝা মিত্রপক্ষ ও অন্যান্য বিচারকরা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার দায় এখন পর্যন্ত টানতে হতো জাপানকে। টোকিও অঞ্চলে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইয়াসুকুনের স্মৃতিসৌধ। প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের স্মৃতি স্মরণে। এই সব মানুষ জাপানের হয়ে অথবা জাপানের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বা সংশ্লিষ্ট কোন ধরনের সহংসিহতার শিকার হয়ে মারা গিয়েছিলেন। এখানে একটি মাত্র স্মৃতি স্তম্ভ ব্যতিক্রমী। যার স্মরণে এটি তৈরি তিনি ধরনের কোন যুদ্ধ বা নিহত হয়নি। তিনি হলেন রাধা বিনোদ পাল।
জাপান তাদের এই ট্রায়ালা এর ইতিহাস নিয়ে একটি মিনি টিভি
সিরিজ তৈরি করে। আর ওই সিরিজে রাধা বিনোদ পালের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভারতীয়
অভিনেতা ইরফান খান।
১৯৬৬ সালের অক্টোবরে জাপানের সম্রাট
হিরোহিত থাকে জাপানের সর্বোচ্চ একাডেমিক খেতাব "ফার্স্ট
অর্ডার অফ সেক্রেট ট্রেজার্স " প্রদান করেন।
১০ জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে ৮০ বছর বয়সে রাধা বিনোদ পাল মৃত্যুবরণ করে।
টিকে থাকুক জাপান ও বাংলাদেশের এই চিরকালের বন্ধুত্ব
No comments