বাংলায় ইসলামের আগমন
খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে বাংলায় ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে। বর্তমান বাংলাদেশ স্বাধীনতাণ্ডপূর্ব সময় থেকেই মুসলিম প্রধান দেশ। এমনকি এর পূর্বতন রূপ পূর্বপাকিস্তান অঞ্চলটিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সৃষ্ট। সুতরাং এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন সম্পর্কে জানার জন্য বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করা আবশ্যক।
ইসলামের আবির্ভাবের সময় এ অঞ্চলটি বঙ্গ বা বাংলা নামে পরিচিত ছিল। সেসময় বাংলা
বা বঙ্গ অঞ্চলের সীমানা শুধু বর্তমান বাংলাদেশের সীমানা দ্বারাই পরিবেষ্টিত ছিল না বরং তৎকালীন বঙ্গদেশের সীমানা ছিল বেশ বিস্তৃত। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন যুগে বাংলা ছিল প্রায় ৮০ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত এক বিশাল সমভূমি।
বস্তুত এ বিশাল বাংলা অঞ্চলে কোন সময় ইসলামের আগমন ঘটে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। তবে ঐতিহাসিকরা নানা তথ্য উপাত্তের আলোকে বঙ্গ
অঞ্চলে ইসলামের আগমনকাল সম্পর্কে নানা মত প্রকাশ করেছেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, এদেশে ইসলামের আগমন ঘটে প্রধানত দুটি মাধ্যমে।
আর এ দুটি হলো- (ক) স্থলপথে ও (খ) জলপথে বা সমুদ্রপথে।
ক) স্থলপথ :
বাংলা বিজয় : ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের সিন্ধু বিজয় গোটা ভারতবর্ষে
ইসলাম প্রচারের পথ উন্মুক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বহু মুসলিম
মুবাল্লিগ ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করে। এ সময় মাহমুদ ও মুহায়মিনের নেতৃত্বে একদল
ধর্মপ্রচারক এদেশে আগমন করেন বলে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ
বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে এদেশে ধর্মপ্রচারকদের ব্যাপক হারে
আগমন ঘটে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী তৎকালীন
বাংলার সেন বংশীয় রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে ইসলামের বিজয়কেতন উড্ডীন করেন।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বিজিত রাজ্যের সীমানা ছিল- উত্তরে
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত পূর্ণিয়া শহর হয়ে দেবকোট থেকে রংপুর শহর, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে তিস্তা ও করতোয়া, দক্ষিণে
গঙ্গার মূলধারা বা পদ্মা এবং পশ্চিমে কুশী নদীর নিম্নাঞ্চল থেকে গঙ্গার কিনারায়
রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর এ
বিজয়ের ফলে বাংলায় ইসলাম ব্যাপকভাবে পরিচিত ও প্রসারিত হয়। এসময় হতে দলে দলে
মুসলিমরা বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচারকার্য শুরু করেন। এভাবেই
বাংলা অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।
ইসলামের আগমন : ঐতিহাসিকদের অপর এক দলের মতে, বাংলাদেশে
ইসলামের আগমন ঘটে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়ের অনেক
আগেই। তাদের মতে, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে দশম শতকের মধ্যেই
ইসলামের প্রবেশ ঘটে এবং ধীরে ধীরে তা প্রসারিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, এদেশে ইসলামের আগমন ঘটে প্রধানত দুটি মাধ্যমে। আর এই দুটি হলো-১.
ব্যবসা-বাণিজ্য ২. এবং ধর্মপ্রচার। নানা যুক্তির মাধ্যমে ঐতিহাসিকরা প্রমাণ করেছেন
যে, উভয়ের মাধ্যম দ্বারা ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দের অনেক
আগেই বাংলায় ইসলামের সূচনা ঘটে। নিম্নে বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের এ দুটো মাধ্যম
প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
খ) জলপথ বা সমুদ্র পথ
১. ব্যবসা-বাণিজ্য : ঐতিহাসিকদের মতে-বাংলাদেশে ইসলামের প্রাথমিক পরিচিতি ও প্রচারকার্য পরিচালিত হয় আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে। মুসলিম বিজয়-পূর্ব বাংলায় আগত বণিকরাই এদেশে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরেন। এদেশে ইসলাম আগমনের সর্বপ্রধান মাধ্যম ছিল আরব-ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক। জাহিলিয়াতের যোগ থেকেই আরব বণিকদের সঙ্গে এ অঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রচলিত ছিল। রাসুল (সা.) ভারতীয় সুগন্ধি দ্রব্য উপহার হিসেবে লাভ করেন বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। ভূগোলবিদরা আরব-ভারত-চীন বাণিজ্য পথের নানা বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, আরব-চীন বাণিজ্য যাত্রার মূল সূত্র ছিল ভারতবর্ষ। আরব বণিকরা পারস্য উপসাগর হয়ে বেলুচিস্তানের একটি বন্দরে প্রবেশ করতেন। তারপর একে একে সিন্ধু, গুজরাট, মাদ্রাজ ও কলকাতা বন্দরে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে উপনীত হতেন। তারা এ সময় এ অঞ্চলের সিলাহাত বা বর্তমান সিলেট ও সাদজাম বা বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরে যাত্রাবিরতি করতেন। এরপর তারা চীন সাগরে প্রবেশ করতেন। এভাবেই আরব থেকে চীন পর্যন্ত বাণিজ্য যাত্রায় ভারত উপমহাদেশ ও বঙ্গদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আরবরা মধ্যবর্তী এসব বন্দরেও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতেন ও সফরের প্রয়োজনীয় সরাঞ্জাম সংগ্রহ করতেন।
আরব ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদদের বর্ণনায়ও বাংলার নানা স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ভূগোলবিদ ইবনে খুরদাদবিহ তার বর্ণনায় বাংলাদেশের চাঁদপুর নদীবন্দরের কথা উল্লেখ
করেছেন। আল ইদ্রিসীর বর্ণনায় রয়েছে- বাগদাদ ও বাসরা থেকে আরব বণিক এবং পর্যটকরা
মেঘনার মোহনার সন্নিকটের অঞ্চলে আসা-যাওয়া করতেন। বস্তুত মহানবী (সা.) এর নবুয়ত
পূর্ব বহুকাল ধরেই আরব-ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের
পরও এ সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। আর ইসলামের আবির্ভাবের অল্পকালের মধ্যেই ভারত বর্ষ তথা
বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে। বাণিজ্য উপলক্ষে আগমন করলেও আগত এসব আরব মুসলিম বণিক
এদেশের জনগণের মধ্যেও ইসলাম প্রচারের সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তারা যেসব বন্দরে
যাত্রাবিরতি করতেন সেখানে ইসলামের প্রচার করতেন। এভাবে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকেই
বাংলাদেশে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে।
২. ধর্ম প্রচার : বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশের প্রধানতম মাধ্যম ছিল মুসলিমদের ধর্ম প্রচার। মুসলিমরা ধর্মপ্রচারকে নিজ নিজ ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে পালন করেন। তাদের কাছে ইসলামকে অমুসলিমের কাছে পৌঁছে দেওয়া আর এ লক্ষ্যে কষ্ট-পরিশ্রম স্বীকার করা ছিল গৌরবের কাজ। এজন্য দেখা যায় রাসুল (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকেই ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। মহানবীর (সা.) ইন্তেকালের পর এ দায়িত্ব মুসলিমদের ওপর আরও ভালোভাবে অর্পিত হয়। সাহাবিরা এ সময় ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েন।
ঐতিহাসিকদের ধারণা মতে, সাহাবিদের একটি দল সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার
করার জন্য ভারত ও বঙ্গ অঞ্চলে আগমন করেন। আর
তাদের মাধ্যমেই এদেশে ইসলামের সূচনা ঘটে। যেহেতু আরব-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক বহু
প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল, সেহেতু ভারত উপমহাদেশে সাহাবিদের আগমন
অস্বাভাবিক ছিল না। ধারণা করা হয় যে, রাসুল (সা.)
এর মামা সাহাবি আবু আক্কাস মালিক ইবনে ওয়াহাব (রা.) আনুমানিক ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে তার
কতিপয় সাথিসহ ইসলামের প্রচারের জন্য চীনের উদ্দেশ্যে দুটি জাহাজ নিয়ে রওনা হন। এ
যাত্রায় কাইস ইবনে হুজাইফা (রা.), উরওয়া ইবনে আছাছা (রা.), আবু কায়েস ইবনে হারিস (রা.) প্রমুখ সাহাবি তার সঙ্গে ছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য
ছিল চীনে ধর্ম প্রচার করা। এ লক্ষ্যে তারা আরব ও চীনের মধ্যবর্তী ভারতীয়
বন্দরগুলোতেও অবতরণ করেন। তারা সেসব বন্দরে অবস্থানকালে ইসলাম প্রচার করেন। শায়খ
যাইনুদ্দিন সীয় ‘তোহফাতুল মুজাহিদীন’ গ্রন্থে ভারতের নানা বন্দরে এরূপ একদল আরবের ইসলাম প্রচারকের বর্ণনা উপস্থাপন
করেছেন। কেননা সফরের রসদ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের জন্য তৎকালে এসব বন্দরে
অবতরণের কোনো বিকল্প ছিল না। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় যে, সাহাবিরা বাংলাদেশেও ইসলাম প্রচারের সূচনা করে গিয়েছেন। মূলত এভাবেই বাংলাদেশে
ইসলামের আগমন ঘটে।
চট্টগ্রাম ও সিলেটের কথা আসে এর পর। মালাবারে আরব মুহাজিরদের স্থায়ী বসবাসের
পর তাদের অনেকেই চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসার সূচনা করে, এখানেও তাদের অস্থায়ী বসতি গড়ে উঠে। এটাই ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন
হচ্ছে এই যে, মালাবারে যেমন প্রথম হিজরী শতকেই ইসলাম দানা
বেধেঁছিল, চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার কি সমসাময়িক কালেই
হয়েছিল, না তার অনেক পরে। এ সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য
তথ্য পরিবেশন করা সম্ভপর নয়। তবে খৃস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে আরবের মুসলমান বণিকদের
চট্টগ্রামের সাথে যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল তা প্রমাণ সাপেক্ষে
নির্ভূলভাবে বলা যেতে পারে।
চট্টগ্রামে কয়েক শতাব্দী যাবত মুসলমান বসবাস করলেও তারা কোন রাজনৈতিক
প্রতিষ্টা লাভ করেননি। তাদের কাজ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য ও ইসলাম প্রচার। মুহাম্মদ বিন
বখতিয়ার খিল্জী কর্তৃক বাংলায় মুসলমান শাসন কায়েমের অনেক পরে সোনার গাঁয়ের
স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ১৩৩৮-৪৯
খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম জয় করে তা মুসলিম শাসনের অন্তর্ভূক্ত করেন।
চট্টগ্রামকে সাধারণত গণমানুষের কাছে বার আউলিয়ার দেশ বলে অভিহিত করা হয়। এই
বার আউলিয়ার মধ্যে দশ জনের নাম চট্টগ্রাম ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলসমূহের সর্বসাধারণের
মুখে মুখে শোনা যায়। যথাক্রমে- সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী, শেখ ফরিদ, বদর শাহ, কতল পীর, শাহ মহসিন আউলিয়া, শাহ পীর, শাহ উমর, শাহ বাদল, শাহ চাঁদ, শাহ জায়েদ
প্রমুখ।
আনুসাঙ্গিক তথ্যাদিবলে এ কথা অনুমিত হয় যে, এসব আউলিয়া
একসঙ্গে চট্টগ্রামে আসেন নি। সম্ভবত তাঁরা দুই-তিনজন এক সঙ্গে অথবা পৃথক পৃথক ভাবে
চট্টগ্রামে এসেছিলেন। চট্টগ্রামবাসী এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, পীর বদর শাহ, কতল পীর এবং মহসিন আউলিয়া সম্ভবত সর্বপ্রথম
একসঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আগমন করেন। এ জনশ্রুতির সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করেও
তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে কতকগুলি প্রমাণ সাপেক্ষে একথা বলা যায় যে, এই তিনজন দরবেশ বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন ইবনে মুহাম্মদ শাহের সময়ে সিলেটের গৌড়রাজ্যে কয়েক ঘর
মুসলমান বসবাস করতেন। গৌড়ের রাজা ছিলেন গৌড়গোবিন্দ। জনশ্রুতি আছে, রাজা গৌড়গোবিন্দের রাজ্যে শেখ বুরহান উদ্দিন নামীয় এক মুসলমান বসবাস করতেন।
শেখ বুরহান উদ্দিনের পুত্রের আকিকা উপলক্ষ্যে জবাই করা গরুর হাড় বা মাংসপিন্ড কাক
বা শকুন বহনকারীর মুখ থেকে অকস্মাৎ রাজবাড়ির সম্মুখে পড়ে গেলে রাজা সাম্প্রদায়িক
দৃষ্টিভঙ্গি ও সংকীর্ণতার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সত্য অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়ে বুরহান
উদ্দিনের দু'হাত কেটে ফেলে ও তার পুত্রকে হত্যা করেন।
বুরহান উদ্দিন তখন সুলতান আলাউদ্দিন ইবনে মুহাম্মদ শাহের কাছে গিয়ে ন্যায় বিচার
চাইলে, সুলতান তাঁর ভাতিজা সিকান্দর শাহকে সৈন্যসমেত
গৌড় অভিমুখে প্রেরণ করেন। সিকান্দর শাহ গৌড় রাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে
পিছু হটতে থাকেন। পথিমধ্যে হযরত শাহ জালাল (রঃ)-এর সাথে দেখা হলে তাকে সবকিছু
অবহিত করেন।
১৩০৩ খৃস্টাব্দে হযরত শাহ জালাল (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইয়ামেন থেকে
সিলেট অভিমুখে আগমন কালে রাজার এহেন ঔদ্বৈত্য পূর্ণ অন্যায় আচরণে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ
হলে, সফর সঙ্গী নিয়ে রাজা গৌড়গোবিন্দের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই খবর পেয়ে রাজা গৌড়গোবিন্দ শাহজালাল (রঃ) কে বাধা প্রয়োগের
জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, হযরত শাহ
জালাল (রঃ) তাঁর অলৌকিক কারামত প্রয়োগ করেন। রাজা গৌড়গোবিন্দ ফকিরের কারামতের কাছে
টিকতে না পেরে রাজ্য ছেড়ে আত্মগোপন করেন। শাহ জালাল (রঃ) সিলেটেই ইসলাম প্রচারের
কাজে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানে খান্কা প্রতিষ্ঠিত করে জনসাধারণের মাঝে ইসলামের
বাণী প্রচার করতে থাকেন। তাঁর শিষ্যগণ সিলেটসহ পার্শবর্তী অঞ্চল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা ও
আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। অন্যান্য ধর্মে শ্রেণীভেদ ও
বৈষম্যতার শিকার হয়ে, অনেক ক্ষেত্রে ঐক্য এবং নিরাপত্তা জনিত
উদারতার ফলে অনেকেই ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে।
উপরোল্লিখিত ধারাবাহিকতাই বলে দেয়, বাংলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের আধিপত্য ও বিস্তার বাংলায় মুসলিম শাসনের অধীনে বিভিন্ন পীর, ওলী, দরবেশদের ধারাই সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকতা লাভ করে। তাছাড়া বাংলাদেশে ইসলামের ব্যাপক প্রচার প্রসার ও বিকাশে এদেশে আগত আলিম, পীর মাশায়েখ ও মোবাল্লিগদের ভূমিকা ছিল অন্যতম। ইসলাম প্রচারের মূল দায়িত্ব তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। সাধারণভাবে ইসলাম প্রচারক বলতে এই শ্রেণির মনীষীদের উল্লেখ করা হয়ে থাকে। ইসলামের আগমনের সময় থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত এদেশে ইসলাম প্রচারে এ শ্রেণির প্রচারকরা ছিলেন সদা সক্রিয়।
No comments