Adsterra

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পাথরের শিলপাটা

 

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পাথরের শিলপাটা

আমরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক ঐতিহ্যই ভুলতে চলেছি। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিলপাটা। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার মানুষের বাড়িতে হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন ও নানা রকমের ভর্তা বানাতে ব্যবহার হতো শিল পাথরের পাটা।

এককালে ঘরে ঘরে শিলপাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম উপায়। প্রতিটি পরিবারে শিলপাটার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিলপাটার ব্যবহার। তবে এখন শিল-পাটার বিকল্প হিসেবে এযুগের মানুষ ব্যবহার করছে বিভিন্ন আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। কেননা এ যুগের মানুষ আধুনিকতায় ঝুঁকে পড়েছে। শিলপাটা দিয়ে বেটে খাওয়ার চাইতে আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী দিয়ে সেসব জিনিস করে খাওয়া খুব সহজ।

বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ, বিয়ের সাঁজন সাঁজবে কন্যা… এইসব গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে গ্রামের সকল শ্রেণী পেশার নারীরা বিয়ে বাড়িতে দু-তিন দিন আগে থেকে হলুদ, মেহেদি বাটতেন। তাছাড়া সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজনবিলাসী গৃহিণীরা নানা রকম স্বাদের মসলা বেটে দিতেন। গ্রাম বাংলায় এখনও অনেক ভোজনবিলাসী পরিবার আছে যারা শিলপাটায় বাটা মসলা ছাড়া রান্না খেতে পছন্দ করেন না। গ্রাম বাংলায় শিলপাটা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। গুড়া মসলা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শিল-পাটায় মসলা পেষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসলার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

অনেক প্রবীণ গৃহিণীরা বলেন, যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিলপাটায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে। শিলপাটায় পেষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ ও কালোজিরার ভর্তার স্বাদ আজও অতুলনীয়। ‘পাটায় পেষা মসলার রান্নার ঘ্রাণ, স্বাদ মেশিনে গুঁড়ো করা মসলার চেয়ে অনেক বেশি। তাই তারা এখনো শিলপাটায় পিসেই রান্নার মসলা তৈরি করেন।’ শুধু এ কারণেই একটু কষ্টসাধ্য হলেও গ্রামের অনেকেই শিলপাটার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সময়ের প্রবাহে পাড়া-মহল্লার প্রতিটা দোকানে মরিচ, হলুদ ও ধনিয়াসহ নানা প্যাকেটজাত মসল্লায় বাজার ভরে আছে। হাত বাড়ালেই সব মসলা।

একসময় দেশের জেলা শহরগুলো ও আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত দেখা মিলতো শিল-পাটা খোদাইকারীর। কাঁধে শিলপাটা বয়ে নিয়ে খোদাইকারীরা বাড়ির সামনে গিয়ে ডেকে উঠতো- ‘পাটা খোদাইবেন, ডেকছির কান্দা লাগাইবেন’ এখন আর সেই হাকডাকের দৃশ্য চোখে পড়েনা। শোনা যায় না বাড়ির আঙ্গিনায় শিল-পাটা খোদাই করার টুকটাক শব্দ।

শিলপাটার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেক কারিগর পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অনেক কারিগর উপার্জন কমে যাওয়ার পরেও অনেক বাধা-কষ্ট পেরিয়ে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ওই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।


No comments

Powered by Blogger.