Adsterra

গয়নার গ্রাম, শত বছরের ঐতিহ্য ধারণকারী এক গ্রাম

গয়নার গ্রাম, শত বছরের ঐতিহ্য ধারণকারী এক গ্রাম, ঢাকা ভয়েজ, dhaka voice,;


মোহাম্মদপুর চৌরাস্তা দিয়ে প্রায় কিলোমিটার পথ সামনে এগুলেই বসিলা ব্রিজ সেই ব্রিজ পার হয়ে কিলোমিটার সামনে ডান দিকের রাস্তায় ঢুকলে যেই রোডটা পরে তার নাম ভার্কুতা রোড এটা ঢাকার অদূরে সাভার জেলার একটি ইউনিয়ন এই রোড দিয়ে সোজা প্রায় - কিলোমিটার এগুতে থাকলেই দেখা মিলবে এক ঐতিহ্যবাহী মার্কেটের যার নাম গয়নার মার্কেট হ্যা একদম ঠিক শুনছেন, এই মার্কেটে মোটেও কোনো প্রসাধনীর জিনিস, কাপড়ের জিনিস বিক্রি হয়না রাস্তার দু ধার ঘেষে সারি সারি দোকানগুলোতে চোখ ধাঁধানো বাহারি ডিজাইনের গয়নার দেখা মিলে গয়না তৈরি করে সেই শত বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা কেউ দোকানে গয়না তৈরি করছে কেউ বা বাড়িতে তামা, পিতল, রূপা, স্বর্ণ সহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ মিশিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন ছাঁচে ফেলে তৈরি হয় নাক, কান, গলার বিভিন্ন গয়না ঠিক কত বছর পূর্বে এই গ্রামে গয়না তৈরির পেশা শুরু হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি তবে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় প্রায় ২০০ বছর কিংবা তারও বেশি প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা গয়না তৈরি করা কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে এই গ্রামে এক হিন্দু রাজার শাসন চলতো তার স্ত্রীর খুব শখ ছিলো শরীরে প্রচুর অলংকার পড়ে সে রাজ্য দেখতে বের হবে তখন রাজা খোজ করলেন এমন কে আছে যে একদম খাটি ধাতু গলিয়ে গয়না তৈরি করতে পারবে, তাঁকে তার বিনিময়ে রাজ্যের কিছু জমি দেওয়া হবে সেই খবর শুনে নানা স্বর্ণকার গয়না তৈরির কাজে নেমে পরে এবং রাজা সেসব প্রত্যেক স্বর্ণকারকে পুরস্কৃত করেন এরপর থেকে সে গ্রামেই অধিকাংশ মানুষ বংশ পরম্পরায় গয়না তৈরির কাজ করে এসছে শুরুতে হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষেরা এই পেশার সাথে জড়িত থাকলেও ধীরে ধীরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষই সে গ্রামে গয়না তৈরির পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েন ভাকুর্তার আশেপাশের প্রায় ৩০ টি গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির মানুষজন এই পেশার সাথে যুক্ত বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে ভাকুর্তা, কান্দিভাকুর্তা, হিন্দুভাকুর্তা, মোরগকান্দা, ঝাউচর, লুটেরচরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোক গয়না তৈরির কাজের সাথে সম্পঋত্ত পূর্বে ফু দেওয়া নল এবং কয়লা ব্যবহার করে এসব ধাতুগুলোকে বিভিন্ন ছাঁচে ফেলে তৈরি হতো গলার নেকলেস, পায়ের নূপূর, হাতের বালা, চুড়ি, নাকের ফুল সহ মেয়েদের নানা ধরনের গয়না কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় এখন হাতুড়ি এবং গ্যাস বার্ণার ব্যবহার করে বিভিন্ন ছাঁচে ফেলে গয়না তৈরি হয় প্রথমে গ্যাস বার্ণারে তাপ দিয়ে বিভিন্ন ছাঁচে গয়নার নকশার অবয়ব তৈরি হয় এরপর সেগুলোকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে শক্ত করা হয় সেগুলোর উপর বিভিন্ন পাথর বা পুঁথি বসিয়ে ডিজাইনগুলোকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় এরপর সেগুলো পাইকারদের কাছে অপরিশোধিত অবস্থায় বিক্রি করা হয় বিভিন্ন দামে এই যেমন এক জোড়া চুড়ি ২০০-৩০০ টাকা, সীতার হাড় ৬০০-১০০০ টাকা, টিকলি ৮০-১০০ টাকা এসব দামে পাইকাররা কিনে নেয় এবং তারা পরিশোধন করে ঢাকার গাউসিয়া, তাঁতি বাজার, চকবাজার, গুলিস্থান এসব মার্কেটে দ্বিগুণ-তিনগুন লাভে বিক্রি করে আগে অনেক দোকানী পলিশ এবং রঙের জন্য তাঁতি বাজার পাঠাতো এখন নিজেরাই পলিশ এবং রঙ করে নিজেদের মার্কেটেই বিক্রি করে তবে কেউ যদি ডিজাইন সহ বেশি পিস অর্ডার করে তবে তারা সেখানেই রূপার গয়না পর্যন্ত বানিয়ে দেয় এই শিল্পের কাঁচামালগুলো ভারত থেকে আমদানি করার কারণে কাচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কারিগরেরা তেমন একটা মুনাফা করতে পারেনা বরং যখন পাইকারদের কাছে যায় এবং হাত বদল হয়ে যখন বিভিন্ন দোকানে পণ্য হিসেবে বিক্রির জন্য যায় তখন তারা কারিগরদের চেয়ে অধিক লাভবান হয় এই বিষয়ে এক কারিগর বলেন, ‘আগে আমরা ঘরে ঘরে গয়না তৈরি করতাম একটা সময় প্রচুর অর্ডার পেতাম দোকানের কর্মচারিরা কাজ করেও সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে পারতাম না অথচ এখন প্রযুক্তির ব্যপক উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত কিন্তু বাজারে চায়না ঢুকে যাওয়ায় এই পণ্যের চাহিদা অনেকাংশে কমে গেছে তাছাড়া জিনিসপত্র স্বর্ণ, রূপার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আমাদের লাভ অনেক কম হওয়ায় এখন অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে এই ব্যবসা এখন ধ্বংসের মুখে আমরা পণ্য বানাই আমাদের লাভ নেই বললেই চলে অথচ পাইকারি বিক্রেতা এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে পণ্যটি পৌছানো মাত্রই তারা ব্যপক লাভবান হয় এই চক্র নিয়ন্ত্রণে কোনো রকম সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা মার্কেট দূরে হওয়ায় শহর থেকে অনেক মানুষই আমাদের এখানে আসতে পারেনা তা না হলে আমরা সরাসরি ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতাম তাছাড়া আমাদের এই শিল্প একদমই প্রচার বিমুখ অবস্থায় থাকায় আমাদের এই শিল্প একদমই ধ্বংসের মুখে পড়েছেবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতির কারণে স্বর্ণ এবং রূপার দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে যেই চক্র এই বাজারটা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নেওয়ার মতোও কেউ নেই এখন বেশিরভাগ কারিগরেরাই ঝুকছেন ইমিটেশন গয়না তৈরির দিকে কারণ আসল ধাতুসমূহ দিয়ে গড়া গয়নাগুলো ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ায় মানুষ সস্তা পণ্যের দিকেই ঝুঁকছে এদিকে হাতেগোণা কয়েকটি দোকানে সোনা বা রূপার গয়না তৈরি হলেও এসবের আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশি হওয়ায় স্বল্প দামে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে এবং চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আর মাঝখান থেকে তৃতীয় পক্ষ, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে এই শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন সেই সাথে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই শিল্পের ইতিহাস তুলে ধরা অগ্রজদের দায়িত্ব 

 

No comments

Powered by Blogger.