Adsterra

হামাসের আক্রমণের মুখে কেন ব্যর্থ মোসাদ ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা

 
হামাসের আক্রমণের মুখে কেন ব্যর্থ মোসাদ ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা, ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;

গাজা থেকে রকেট হামলার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় ইসরায়েলের রহবত এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক আক্রমণে প্রাথমিকভাবে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল ইসরায়েল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে দেশটির। তবে ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও দেশটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোদাসসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগাম কেন এই হামলা টের পেতে ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে কথা উঠেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। 


হামাস এতটাই সংগোপনে এই হামলার পরিকল্পনা করেছে যে, গোষ্ঠীটির প্রথম সারির অনেক নেতাও এই হামলার বিষয়ে অবগত ছিলেন না। এই হামলাটি চালায় মূলত হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড। গত শনিবার সকালে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলায় মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ে তারা। 

পাঁচ হাজার রকেট নিক্ষেপের সঙ্গে বুলডোজার, গ্লাইডার এবং মোটরবাইক নিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে। এটি নিঃসন্দেহে ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় আঘাত। ৫০ বছর আগে সিরিয়া ও মিসর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে পুরো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হামাসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, হামাস কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি অভূতপূর্ব গোয়েন্দা কৌশল ব্যবহার করেছে। হামাস ইসরায়েলকে ধারণা দিয়েছিল, তারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। কিন্তু তারা ব্যাপক অভিযানের প্রস্তুতি ঠিকই নিয়েছে। এমনকি এই দুই বছর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সামরিক নিপীড়ন ঠিকই চলেছে। এরপরও হামাসের পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া আসেনি। 


বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের শীর্ষ নেতা ও বর্তমানে লেবাননে নির্বাসিত আলি বারাকাহও একই কথা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনই এই হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানত। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় শীর্ষস্থানীয় নেতারা না জানলেও হামাসের দুই মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরান বিষয়টির সম্পর্কে সামান্য হলেও অবগত ছিল। হামাসের এই দুই মিত্র যুদ্ধ যোগ দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। 


গাজায় খাবার ও জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৬৮৭ গাজায় খাবার ও জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৬৮৭ 

যা হোক, ইসরায়েলের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ভেঙে এমন হামলা আসলেই নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় ভেঙে এমন হামলা কী করে চালাল হামাস? মোসাদের মতো গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও হামলার কোনো পূর্ব তথ্য ছিল না! বিষয়টিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতার বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 


যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিনিধি ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগ অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিভাগ উভয় দিক থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি শুধু ফিলিস্তিনি অঞ্চলে নয়, লেবানন, সিরিয়া এবং অন্যান্য স্থানে জঙ্গিগোষ্ঠীর ভেতরেই গোয়েন্দা নিয়োজিত রয়েছে। তবে যেখানেই নিয়োজিত থাক না কেন, এবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামাসের আক্রমণের পরিকল্পনা জানতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। 


হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ৬০০ ইসরায়েলি নিহত, যুদ্ধ অনুমোদনহামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ৬০০ ইসরায়েলি নিহত, যুদ্ধ অনুমোদন বিষয়টি নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত জার্মান সাংবাদিক অ্যান্থনি লোওয়েনস্টেইন। তিনি বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে বিগত কয়েক ঘণ্টা ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথাই বলছে। গাজায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে বেশ কয়েকবার সীমান্তে ইসরায়েলি চেকপয়েন্ট পার হতে হয়েছে। তাই হামাসের সদস্যরা যেভাবে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে তা এক কথায় দুঃসাধ্য কাজ।’ 


লোওয়েনস্টেইন আরও বলেন, ‘অতীতে ইসরায়েলি সীমান্ত পেরোনো এক কথা প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ, দেশটি সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বজায় রাখত খুবই শক্তিশালীভাবে। কিন্তু এবার হামাস এমন সব কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের উপাদান-উপকরণ ব্যবহার করেছে যা ইসরায়েলি গোয়েন্দারা আঁচ করতে পারেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সিও সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ 


হামাসের সদস্যরা কেবল স্থলপথেই ইসরায়েলে প্রবেশ করেনি। গোষ্ঠীটির সদস্যরা আকাশ এবং জলপথেও প্রবেশ করেছে। ব্যাপক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি থানা, সেনা চৌকি খালি করেছে, বন্দী করে নিয়ে এসেছে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা ও সেনাসদস্যদের। এমনটা করতে গিয়ে আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের সদস্যদের ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে হয়েছে। 


এ বিষয়টি কীভাবে সম্ভব হয়েছে সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিওন লেভি বলেন, ‘এই ব্যর্থতার একটি বড় কারণ হলো—ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য। তারা মনে করে, তারা খুবই শক্তিশালী এবং তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। যাদের কাছে আছে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।’ 


লেবানন থেকেও ইসরায়েলে হামলা   লেবানন থেকেও ইসরায়েলে হামলা  কেবল এই ঔদ্ধত্যই নয় নিজেদের নিয়ে আত্ম তুষ্টিতেও ভোগে ইসরায়েলিরা। এ বিষয়ে লেভি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা মনে করে আমরা যেহেতু কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে সুদীর্ঘ প্রাচীর, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছি তাই আমরা অনেক বেশি সুরক্ষিত।’ লেভির মতে ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য ও আত্মতুষ্টিতে ভোগার ঐতিহ্য হামাসের আক্রমণের মুখে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। 


মোসাদ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে লেভি বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণটি হলো—সরকারের প্রাধান্য তালিকা। ইসরায়েলের বর্তমান সরকার পাগলের মতো প্রায় সব সেনাই মোতায়েন করেছে পশ্চিম তীরে যাতে করে সেখানে যত ইসরায়েলি (অবৈধ) বসতি রয়েছে এবং সেগুলো বসবাসরত ইসরায়েলি রয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে দক্ষিণ রণাঙ্গন কার্যত খালি হয়ে পড়ে।’ মূলত এই দুই কারণেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামাসের চাল আগাম অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে।


No comments

Powered by Blogger.