বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য
১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর, মায়োনি থেকে বিলাসবহুল ইউথ উইচক্র্যাফট করে বাবা এবং ছেলে সাগরে পাড়ি জমালেন। কিন্তু তীর থেকে এক মাইল দূরে যেতেই কোস্ট গার্ডের কাছে কল এলো, জাহাজটি কোন কিছু সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। তবে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কোস্ট গার্ড সাথে সাথে রওনা দিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখল, কিছুই নেই। এমনকি জাহাজের কোন চিহ্নই নেই। এভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অসংখ্য জাহাজ, নৌকা বা আকাশ যাওয়া পথে বিমান রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার গল্প অনেক শোনা গেছে।
তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে হারিয়ে যাওয়া সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো, ফ্লাইট-১৯। ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচটি যুদ্ধবিমান রেগুলার মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। এসব বিমান উদ্ধার করতে পাঠানো বিমানগুলোও রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। এসব কিছু শুনে প্রথমে যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হল, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য সত্য নাকি মিথ্যা? কি হয়েছিল উইচক্র্যাফট বা যুদ্ধ বিমানের? কি ঘটে সেদিন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের?
মায়ামির সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো এবং বারমুডা। উত্তর আটলান্টিক
মহাসাগরের এই তিনটি স্থানে পড়েছে ত্রিভজাকৃতির অঞ্চলটির তিনটি শীর্ষবিন্দু। মাঝের
জায়গাটির পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ থেকে ৩৯ লাখ বর্গকিলোমিটার। অবশ্য এটি একদম
নির্ধারিত নয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অন্য একটি নাম হলো ডেভিল ট্রায়াঙ্গেল।
পৃথিবীর অন্যতম যত রহস্যঘেরা স্থান রয়েছে তারা থেকে এই জায়গাকে এতো গুরুত্ব
দেওয়ার মূল কারণ হলো- ভয়াল পরিবেশে নৌযান ও আকাশযানের বহুযাত্রীর অকাল
প্রাণহানি। সেখানে আজ পর্যন্ত শতাধিক জাহাজ ও বিমান উধাও হয়ে গেছে ও প্রাণ
হারিয়েছে হাজার খানেক মানুষ।
অঞ্চলটি নিয়ে এমন একটি থিওরি রয়েছে যে, এখানে একবার প্রবেশ করলে সেখান থেকে বের হবার বা কোনো তথ্য বের করে আনার কোন সুযোগ নেই। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিভিন্ন বিমান ও জাহাজ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে অসংখ্য থিওরি প্রচলিত আছে। কেউ বলেন এলিয়েন এসে জাহাজ বা উড়োজাহাজ উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। কেউ বলে সেখানে সাগরের নিচে বড় দৈত্য আছে। অনেকে আবার বলেন সেখানকার সমুদ্রেই এমন যে সেখানে সব জাহাজে এসে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে এবং অবশেষে ডুবে যায়। তবে সাইন্টিফিকালি যদি চিন্তা করি তাহলে পাঁচটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত এখানকার ম্যাগনেটিক ফিল্ড। এখানে কম্পাস এপ্রোপিয়েড রিডিং দেয় না। তবে পৃথিবীতে এই অঞ্চল ছাড়াও এমন আরো অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে কম্পাস
এক্সাক রিডিং পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত এ অঞ্চলটির আশপাশ অগভীর। অসংখ্য হিডেন শোজ রয়েছে, সেখানে জাহাজ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় পানির নিচে মিথেন হাইড্রেডস বা মাঠ
ভলকানো সৃষ্টি। এ অঞ্চলে পানির নিচে যদি মাঠ ভলকানো সৃষ্টি হয় তাহলে পানির উপরে যত শক্তিশালী জাহাজ থাকুক না কেন সেটা ডুবে যেতে
বাধ্য। চতুর্থত, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ওই এলাকাটি হ্যারিকেন
প্রবণ অঞ্চল। পৃথিবীতে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়
তাদের মধ্যে শেষে রয়েছে চীন এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো কিউবা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা এই অঞ্চলেই অবস্থিত। এর
বাইরে আরও একটি যে কারণ রয়েছে যেটি আসলে এড়িয়ে যারা সম্ভব নয়, হিউম্যান সাইকোলজি। এ বারমুডা অঞ্চল নিয়ে বেশি মাতামাতির কারণে অন্য অঞ্চলে
দুর্ঘটনা গুলো চোখের আড়ালে পড়ে যায়। এমন না যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল ছাড়া
পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলে জাহাজ ও উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হয় না। এ অঞ্চলটি আসলে
সমুদ্রের অন্যান্য অঞ্চলের মতই। এখানে প্রতিনিয়ত অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এমনকি
সেখানে আকাশ পথেও অসংখ্য উড়োজাহাজ চলাচল করে। বিজ্ঞানীদের মতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল
মানুষের মুখ মুখে বেশি পরিচিতি পেয়ে গেছে।
এ অঞ্চলে জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়া
যেসব থিওরিআজ পর্যন্ত শোনা গেছে তার কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এখানে মূলত কোন রহস্য নেই। কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে এটি সত্যি। তবে এগুলো শুধুই
কেবলই দুর্ঘটনা।
এই এলাকা দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান
অঞ্চলে প্রচুর জাহাজ চলাচল করে। এমনকি নিয়ম নিয়মিত অসংখ্য উড়োজাহাজ ও চলাচল
করে। এমন অঞ্চলে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, অন্যান্য অঞ্চলে ও এর মত অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে
বারমুডা নিয়ে কেন এত আলোচনা? কেন এত মিথ?
বিখ্যাত আবহাওয়াবিদ রেন্ডে ক্যারভেনি সহ বেশ কিছু
বিজ্ঞানীদের দাবি, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের পেছনে রয়েছে
হেক্সাগোনা ক্লাউড অর্থাৎ এক ধরনের মেঘ । উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর আর বারমুডা
দ্বীপে ২০ থেকে ৫৫ মাইল দূরে মেঘ তৈরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু। যার বেগ
ঘন্টায় ১৭০ মাইল। এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ুকে বলা হয় এয়ার
বোম। এই এয়ার বোম এতটাই শক্তিশালী যে, এটি প্রায় ৪৫ ফিট উচ্চতার সামুদ্রিক ঝড় করতে পারে। কোনো জাহাজ এই ঝড়ে টিকতে
পারা সম্ভব নয়। আর কোনো উড়োজাহাজের পক্ষেও এই তীব্র বাতাসের বেগ সামাল দেয়া
সম্ভব না।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের স্যাটেলাইট ইমেজ নিয়ে গবেষণা করে বিশ্লেষকরা এই অঞ্চল
নিয়ে আগের সব রহস্যজনক থিওরি সমাধান দিয়েছেন। তবে সেখানকার আবহাওয়া নিয়ে
বিশ্বব্যাপী এখনো গবেষণা চলছে। মজার ব্যাপার হলো, বারমুডা
ট্রায়াঙ্গেল ছাড়াও বিশ্বের অসংখ্য জায়গায়, অসংখ্য জাহাজ
ও উড়োজাহাজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে
যে মিস্ট্রেরিয়াস ঘটনা গুলো ঘটেছে সেখানে কোন কিছু নেই। তাই বিজ্ঞানীদের দাবি এই
অঞ্চল নিয়ে আজ পর্যন্ত থিওরি জানা গেছে কোনোটিরই বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।
No comments