Adsterra

বিশ্বের পাঁচটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

বিশ্বের পাঁচটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঢাকা ভয়েজ, dhaka voice,;

স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখলো বাংলাদেশ। রাজধানীর বঙ্গ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে লাখো মানুষের স্বপ্ন। কয়েকদিন পর পরই দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় এমন অগ্নিকাণ্ডের খবর। যে অগ্নিকাণ্ড তছনছ করে দেয় অনেক স্বপ্ন, অনেক জীবন।শুধু দেশের নয়,  এমন অনেক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে গোটা বিশ্ব। আজ আমরা জানবো বিশ্বে ঘটে যাওয়া এমন পাঁচটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা।

ঘটনার শুরুটা হয়েছিল ১৬৬৬ সালে ২ সেপ্টেম্বর। আগুনের সূত্রপাত থমাস ফেরেনার নামের এক লোকের বেকারী থেকে। বেকারীটি বিখ্যাত লন্ডন ব্রিজের কাছেই পুডিংলেনে বা ফিশিং ইয়ার্ডে। আগুন লাগার পর পর এই আগু ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো লন্ডন শহরে জুড়ে। তিন দিন ধরে পুতে থাকে পুরো শহর। ফায়ার সার্ভিস তাদের সাধ্য মত চেষ্টা করেছিল। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। আগুনের বিস্তার ক্ষণে ক্ষণে দানব আকৃতি নিতে থাকে। মধ্যরাতে যে আগুন দেখতে মানুষ ভিড় করেছিল, শেষ রাতে সেই মানুষেরাই শহর থেকে পালাতে শুরু করে। রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন, পুতে শুরু করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট সব। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা "গ্রেট ফায়ার অব লন্ডন" বা "লন্ডনের মহাঅগ্নিকাণ্ড" নামে পরিচিত।

আজ থেকে প্রায় ১৪৭ বছর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বিপর্যয়ের কথা শোনা যায়, ‘গ্রেট শিকাগো ফায়ারতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৮৭১ সালের ৮ অক্টোবর, রবিবার রাতে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং অক্টোবরের দশ তারিখ, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেই আগুন নেভানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সেই বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে গোটা শিকাগো শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভেঙে পড়েছিল সকল ধরনের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। এই ঘটনায় ৩০০ এরও অধিক মানুষ জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এর মধ্যে ১২০টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এর মধ্যে এক লাখ লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেসব গুরুত্বপূর্ণ নথির মধ্যে ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসেডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এবং শিকাগোর জনপ্রিয় আলোকচিত্রী আলেকজান্ডার হেসলারের তোলা লিঙ্কনের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবির নেগেটিভ, যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

১৮৭১ সালের একই দিনে বিশ্ব সাক্ষী হয় আরো এক ভয়ংকর দাবানলের। যুক্তরাষ্ট্রের সেই দাবানলের আকার সবার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল একই দিনে দ্য গ্রেট শিকাগো ফায়ার ঘটায় অনেকে মনে করেন পেশটিগো দাবানল বুঝি তারই অংশ। কিন্তু পেশটিগো দাবানল গ্রেট শিকাগো ফায়ারের অংশ ছিল না।

পেশটিগো দাবানল ঘটেছিল উইসকনসিন বনে শিকাগোর আগু ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল তখন। গরম আবহাওয়ায় রুক্ষ বন রূপ নিয়েছিল লোহার কারখানার চুল্লির মত। এই দাবানলে পুরে যায় ১২০ লাখ একর বন ও শহর। মারা যায় প্রায় ১৫ শ জন মানুষ যা সে সময় উইসকনসিনের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেছিল।

 

২০০৯ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল শনিবার। ভোর পাঁচটায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে ফোন আসে, বনে আগুন লেগেছে। বুনো ঝোপের আগুন গুলোকে বলা হয় "বুসফায়ার"। এ ধরনের আগুন ফসলের মাঠ, বন সব গিলতে শুরু করে। ভোর ৫ টায় যে আগুনের খবর ফায়ার সার্ভিসে কাছে আসে, সেই আগুনটা রাত দশটায় গোটা শহর পুড়িয়ে দেয়। প্রথম দিন পেরিয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়া টের পায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হতে যাচ্ছে তারা ইতিহাসে এ মারাত্মক দাবানল "ব্ল্যাক স্যাটারডে বুসফায়ার" নামে পরিচিত। এই ঘটনায় ১৭৩ জনের প্রাণহানি হয় আহত হয় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ। এবং গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার অস্ট্রলিয়ান।  

 

২০১০ সালের ১৫ ই নভেম্বর, ঘড়িতে তখন দুপুর শোয়া ২ টা বাজে। চীনের সাংহাই এর ২৮ তলা ভবনে ১০ তলায় আগুন আর ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে সবাই। চীনের প্রধান সংবাদ মাধ্যম গুলোর মধ্যে খবর এসেছিল, ওয়েল্ডিং করার সময় আগুনের ফুলকি থেকে শুরু হয় এই দুর্ঘটনার। সে আগুন মিনিটে মিনিটে বাড়তে শুরু করে। মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবণের প্রতিটি তলায়। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেও কিছু করতে পারেনি। এক পর্যায়ে সাংহাই ২৮ তলা দালানের পুরোটাই জ্বলতে থাকে আগুনে। ৫৮ জন মারা যায় এই অগ্নিকাণ্ডে, আহত হন ৭০ জন মানুষ। উচ্চ ভবনে আগুন লাগার এই উদাহরণ বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছিল। বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে এই ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করে।

তবে এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সাক্ষী আর হতে চায় না বিশ্ব।

No comments

Powered by Blogger.