Adsterra

নীলনদের পানিতে এমন কি রয়েছে যা অন্য কোনো নদনদীতে নেই

নীলনদের পানিতে এমন কি রয়েছে যা অন্য কোনো নদনদীতে নেই, ঢাকা ভয়েজ, dhaka voice,;

নীলনদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা পৃথিবীর কোনো নদনদী মধ্যে নেই কথাটি বলেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের সেরা চিকিৎসক, গণিতবিদ, জ্যোতি বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে সীনা। আশ্চর্যের বিষয় হলো নীলনদের উৎপত্তি স্থল থেকে এর শেষ প্রান্তের মাঝে এর দূরত্ব সর্বাধিক। এটি প্রবাহি হয় বড় বড় পাথর ও বালুময়ের উপর দিয়ে যাতে কোনো শ্যাওলা, ময়লা আবর্জনা নেই। তার মধ্যে কোনো পাথর সবুজ ও হয় না।

মিশরের নীলনদ পৃথিবীর সপ্তাশ্বচার্যের মধ্যে একটি। নীলনদকে প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় বলা হয় "ইতেরু। এটি আফ্রিকা মহাদেশের একটি নদী। বিশ্বের বৃহত্তম এই নদীটির রয়েছে ২ টি উপনদী। ১টি শ্বেত নীলনদ, অন্যটি নীলাভ নীলনদ। এর মধ্যে শ্বেত নীলনদ দীর্ঘতর, শ্বেত নীলনদ আফ্রিকা মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়েছে। উত্তর দিকে তানজানিয়া, লেক ভিক্টোরিয়া, উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নীলনদ। ইথিওপিয়ার টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করেছে। ২ টি উপনদী সুদানের রাজধানীতে মিলিত হয়েছে।

নীলনদের উত্তরের অংশ সুদানে শুরু হয়ে মিশরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। প্রায় পুরোটাই মরুভূমির মধ্য দিয়ে। মিশরের সভ্যতা প্রায় প্রাচীন কাল থেকে নীলনদের উপর নির্ভরশীল। মিশরের জনসংখ্যা অধিকাংশ ও বেশির ভাগ শহরের অবস্থান আসসোয়ান উত্তরে নীলনদের উপত্যকায়। প্রাচীন মিশরের প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এই তীরে অবস্থিত।

বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে নীলনদ ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। বলা বাহুল্য যে নদটির পানির স্বচ্ছতার কারণেই এই রকম হয়ে থাকে। এছাড়াও আর সব নদনদীর পানি যখন কমে যায় তখন এর পানি বৃদ্ধি পায়। আর অন্য সব নদীর পানি যখন বৃদ্ধি পায়, তখন এর পানি কমে যায়। তবে বর্তমানে যে নীলনদ দেখা যায় তা পিছনে রয়েছে অনেক গল্প।

এক সময় নীলনদের পানি প্রবাহের জন্য এখানে সুন্দরী নারীকে উৎসর্গ করা হতো। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দ এর আগ পর্যন্ত মিশরীয়রা খ্রিস্টান ছিল। এসময় মিশরের এই নীলনদ প্রতিবছর শুকিয়ে যে। সেই সময় মিশরীয়রা একটি কৌশল সংস্কার মেনে চলতো। সেটি হলো, শুকিয়ে যাওয়া নদীতে কোনো পিতা- মাতাকে রাজি করিয়ে তাদের সুন্দরী, কুমারী মেয়েকে অলংকার ও পোশাক পরিয়ে নীলনদের শেষ সীমানায় যেখানে ডুবন্ত পানি থাকতো সেখানে ভাসিয়ে দেয়া। এই দিনটিকে তারা ইদের দিনের মত আনন্দে পালন করতো। রাজা বাদশারা নিজেরা উপস্থিত থেকে সব আয়োজনে তদারকির করতেন। উৎসবে কবিতা আবৃত্তি করা হত।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রাঃ) খেলাফতের সময় বিখ্যাত সাহাবি হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) নেতৃত্বে ইসলাম কায়েমের জন্য ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন মিশর বিজয়ী হলো তখন তিনি নীলনদের এই নারী বলি দেয়ার ঘটনায় খুবই মর্মাহত হলেন। মিশরীয় এক দল লোক প্রতি বছরের মত এবারও নারী বলি দেয়ার অনুমতি আনতে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর কাছে যান। তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাদের জানান ইসলাম কখনো এই ধরণের কুসংস্কার সমর্থন করে না। অন্যায় ভাবে কোনো মানুষের জীবন এভাবে জলাঞ্জলি দেয়া ইসলাম কখনোই মেনে নেয় না।

সে বছর ঘটনাক্রমে দেখা গেল নীলনদে পানি আসেনি। তখন চাষাবাদে সীমানাহীন ক্ষয় ক্ষতি হয়। এমনকি যাদের পেশা শুধু চাষাবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ঠিক সে সময় হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর কাছে বিষয়টি জানানো হলে তিনি একটি চিঠি লিখে পাঠায় নীলনদের কাছে।

যেখানে লেখা ছিল, " হে নীলনদ, তুমি যদি আল্লাহর আদেশে প্রবাহিত হও, তাহলে মানব কল্যাণে প্রবাহিত হয়ে যাও। আর যদি তুমি নিজে নিজে প্রবাহিত হও তাহলে তুমি প্রবাহিত হইও না। "

এই চিঠি যখন নীলনদের বুকে নিক্ষেপ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে নীলনদের পানি প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

 

 

No comments

Powered by Blogger.