কীভাবে হয়েছিল গুড়ের বন্যা
গুড় মিষ্টি হলেও গুড়ের বন্যা কিন্তু মোটেও মিষ্টি নয়। যার তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল বোস্টনবাসি। ১৯১৯ সালে তরল গুড়ে ভেসে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই শহরটি। সেই মহাপ্লাবনে প্রাণ হারিয়েছিল ২১ জন। ইতিহাসে যা "গ্রেট মোলাসেস ফ্লার্ড"নামে পরিচিত।
গুড় দিয়ে তৈরি হয় মিষ্টি জাতীয় খাবার। তৈরি হয় অ্যালকোহল ও। আর অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয় গাল পাউডার ও ডিনামাইট তৈরিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাড়ে এমন বিস্ফোরকের চাহিদা। যার প্রেক্ষিতে The United States Industrial বোস্টনে একটি ট্যাংক স্থাপন করে। যাতে রাখা যেত প্রায় ৯০ লাখ লিটার তরল গুড়।
১৯১৯ সালের ১৩ই জানুয়ারি গুড়ের একটু বড় চালনা সেই
কোম্পানির স্টোরেজে। ২ দিন পর বিকট শব্দে ফেটে যায় স্টিলের ট্যাংকটি। উত্তপ্ত তরল
গুড় নিমিষেই বানের জলের মত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতা থেকে তরল
গুড়ের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় আশেপাশের সব বসত বাড়ি। ঘন্টায় প্রায় ৫৬ কিলোমিটার
বেগে ছুটে যাওয়া এই গুড়ের স্রোতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শহরের নর্থএন এলাকাটি।
ভেঙ্গে যায় বোস্টন রেলওয়ে ব্রিজে, একটি
ফায়ার স্টেশন। পানির চেয়েও ৪০ গুণ ঘন সেই তরল গুড় গড়িয়ে যায় বোস্টন হারবার
পর্যন্ত। দুই থেকে তিন ফুট গুড়ের স্তরে আটকা পরে বহু শ্রমিক ও শিশু। এর ভেতর থেকে
দেড় শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি ২১ জনকে। যাদের অনেকেরই
মৃত্যু হয়েছিল দম বন্ধ হয়ে। শহর জুড়ে গুড়ের এমন পুরু আস্তর পড়েছিল যে যা
পুরোপুরি সরাতে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
সেই ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল অসংখ্য মামলা। ভুক্তভোগীদের
অভিযোগ ছিল ট্যাংকের দিকে। তাদের মতে ট্যাংকটি মোটেও নিরাপদ ছিল না। প্রায়
বিভিন্ন রকম শব্দ ভেসে আসতো ট্যাংকটি থেকে। নির্মাণের পর অসংখ্য ফাটল দেখা দেয় এর
গায়ে। যেসব ফাটল দিয়ে বের হয়ে যাওয়া গুড় নিতে ভিড় জমাতো শিশুরা। অন্যদিকে
অ্যালকোহল কোম্পানিটির দাবি ছিল, পরিকল্পনা করে কেউ এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
১৯২৫ সালের দিকে তদন্তে উঠে আসে সমস্যাটা আসলে ট্যাংকেই ছিল। সে সময় ১ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল USIA কে। সেই দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে মার্কিন প্রশাসন। কঠোর নীতি আরোপ করা হয় শিল্প কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে। গুড়ের মতো পদার্থ কিভাবে এত মৃত্যুর কারণ হতে পারে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে বছরের পর বছর। ২০১৬ সালে এক গবেষণায় দাবি করে, মূলত ওই অঞ্চলের ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে মানুষের প্রাণহানি এত বেশি হয়েছিল। উষ্ণ আবহাওয়া থাকলে গুড় সহজে জমে যেত না। এতটা প্রাণহানিও হতো না।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments