ব্যাচেলর || মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির যে সিনেমা আমাদের যুবসমাজের কথা বলে
আনিসুল হকের রচনা এবং মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির পরিচালনায় ‘ব্যাচেলর’ সিনেমাটি ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। রোমান্টিক-কমেডি জনরার এই সিনেমাটি দেশের যুবসমাজের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছে। মধ্যবয়সী আবরার ভাই তার বাসা ভাড়ার টাকায় পেয়ে নিশ্চিন্তে দিন পার করে। আবরার ভাই অবিবাহিত। তাই তিনি বাড়ী সবসময়েই ব্যাচেলরদের ভাড়া দিয়ে থাকেন। ৪ সদস্যদের সেই বাড়িতে ফাহিম নামের একজন তরুণের আগমন ঘটে যে কিনা রেডিওতে প্রোগ্রাম প্রোডিউসার হিসেবে চাকরি করে। ফাহিম একজন সুদর্শন পুরুষ। আর নূরানি চেহারা এবং নিষ্পাপ হাসিতে নারীরা প্রেমে মজে যায়। অন্যদিকে ফ্ল্যাটে বড় ভাইয়ের দায়িত্বে থাকেন হাসান ভাই। একসময়ে মিলিটারিতে চাকরি করা হাসান ভাই বলা যায় প্রায় বেকার যে কিনা একজন উঠতি মডেলকে পছন্দ করেন। সেই বাড়ির এক উদ্ভট চরিত্র মারজুক সবসময়ই কবিতা এবং শিল্পচর্চায় ব্যস্ত থাকে। আরজে রোমেল আর্কিটেকচার সাথীর সাথে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ। সাথী একদিন রোমেলকে খুজতে তাদের বাড়িতে ফোন করে কিন্তু সেখানে ফাহিম ফোনটা ধরে তার সাথে খাতির জমায়। দুজনের মধ্যে মন দেওয়া নেওয়া হয়। সাথীর জীবনে ফাহিমের আগমনের পর সে রোমেলকে অপছন্দ করতে শুরু করে। তারা দুজনে ঘুরে, ডেট করে এবং এমনকি সাথীকে রোমেল ফ্ল্যাটে রুম ডেটের জন্য পর্যন্ত নিয়ে আসে। আবরার ভাইয়ের চরিত্রটার লেয়ার বেশ মজার। তিনি সবসময় নারী বিরোধী বক্তব্য আড্ডায় দিয়ে থাকেন কিন্তু তিনি একজন বিবাহিত নারী ফাহমিদাকে পছন্দ করে এবং তাঁকে নিয়ে একটা ট্যুরে যায় সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে। ছোটবেলার প্রেমিকা জেরিনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মারজুক বেশ হতাশ হয়ে পরে। অপরদিকে সেই মডেলকে পটানোর জন্য হাসান ভাই অনেক কিছু করে এমনকি ফাহিমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে রেডিওতে গান পর্যন্ত করতে চায়। এদিকে সাথীর সাথে একদিন ফাহিমের ব্রেকাপ হয়ে যায় সে শাম্মা নামের মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে,এরপর মনাকে। এভাবে সহজ-সরল উপভোগ্য গল্প নিয়ে সিনেমাটি চলতে থাকে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমাটিতে অভিনয় করে ২০০৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছিলেন অপি করিম। এই সিনেমার সংলাপ দুর্দান্ত ছিলো ঠিক যেমন ব্যাচেলর জীবনে থাকা ছেলেরা আড্ডায় যেসব কথা বলে সেভাবেই ওভারল্যাপ করে অনেক সংলাপ হয়েছে। এই সিনেমার অনেক সংলাপই বিখ্যাত যেমন নিরাপদ যৌনমিলনের বিজ্ঞাপনের সংলাপ লেখা মারজুকের মুখ থেকে বের হওয়া ‘প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিকই কিন্তু বাচ্চা হবেনা বাচ্চা হবে বাচ্চা হবেনা’’ দারুণ আলোড়ন তুলেছিলো। সিনেমায় সমসাময়িক সময়ের অনেক ইস্যুকে মজার ছলে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। যেমন সিনেমায় ব্যবহৃত ফাহিমের মুখ থেকে সাথীকে বলা সংলাপ- ‘চলোনা লিটনের ফ্ল্যাটে যাই।’ এই সংলাপটি তরুণ তরুণিদেরকে এক ধরনের নষ্টালজিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সিনেমায় প্রতিটি গানই ছিলো দর্শক প্রিয় বিশেষ করে, আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, এস আই টুটুলের কণ্ঠে গাওয়া ‘কেউ প্রেম করে কেউ প্রেমে পড়ে’ এই গানটি তখনকার তরুণ তরুণীদের ফোনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৪৮ মিনিট দৈর্ঘের এই সিনেমাটি একদম উপভোগ্য।
No comments