স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান জানাল ভারত
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিজেদের অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে ভারত। বৃহস্পতিবার দেশটি বলেছে, সার্বভৌম, স্বাধীন এবং টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার জন্য সরাসরি আলোচনা শুরু করাকেই ভারত বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকে দীর্ঘদিনের এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন পালনের সর্বজনীন বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন। সরকার একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা দেখতে চায় যা নিরাপদ এবং স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে, পাশাপাশি (এবং) ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিতে অবস্থান করবে। আমাদের সেই অবস্থান একই রয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে ভারতের এই অবস্থান বদলকে আরব বিশ্বের আবেগের গতিমুখ বুঝেই পরিবর্তন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ শুরুতে হামাসের রকেট হামলার পরই তীব্র ভাষায় সন্ত্রাসের নিন্দা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখনই ঘরোয়া বিরোধী মহলে এই বিতর্ক শুরু হয়েছিল যে, সরাসরি ফিলিস্তিন বিরোধিতায় নেমেছে মোদি সরকার যা ভারতের দীর্ঘদিনের বিদেশনীতির পরিপন্থী।
এদিকে ইসরায়েলের হাইফা বন্দর আদানির মালিকানায় থাকার বিষয়টি দিল্লির মত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। এর মধ্যে নয়াদিল্লি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে।
সম্প্রতি আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইসরায়েল পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তারই ফলস্বরূপ আজ (শুক্রবার) অরিন্দম বাগচী এ কথা বলেছেন।
৭ অক্টোবর রকেট হামলার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এটিই প্রথম বিবৃতি। এরমধ্যে দুবার মুখ খুলেছেন মোদি। হামাসের হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে উল্লেখ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছিলেন, এই কঠিন সময়ে ভারত সর্বতোভাবে ইসরায়েলের পাশে রয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এক্স হ্যান্ডল-এ।
তবে শুক্রবারের বিবৃতিকে নিজেদের অবস্থানে পরিবর্তন বলে মানতে নারাজ দিল্লি। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করেছিলেন। তিনি সার্বিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তার সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান একই আছে।
আরব দেশগুলোর সঙ্গে ফিলিস্তিনের একাধিক কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তেল। ভারতের সিংহভাগ তেলই ইরাক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়। কোনো কারণে যদি ভারতের আমদানি তেলের ওপর কোনো হেরফের করার সিদ্ধান্ত নেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তবে হয়তো রাশিয়া থেকে তারা আমদানি কিছুটা বাড়াতে পারবে। কিন্তু পুরো আমদানির বিকল্প কোনো উপায় পাবে না।
ফিলিস্তিনের সঙ্গেও ভারতের ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭৪ সালে ভারতই প্রথম অ-আরব রাষ্ট্র যারা ফিলিস্তিনিদের ‘বৈধ প্রতিনিধি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৮৮ সালে তারা একটি পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭৭ সালে প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানের জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূমি খালি করতে হবে যা তারা অবৈধভাবে দখল করেছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল-হামাস শত্রুতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পুনরায় আবির্ভূত হয়েছে।
No comments