যেভাবে হার্ট ফেইলিউর রোগীর চিকিৎসা করাতে হবে
যেভাবে হার্ট ফেইলিউর রোগীর চিকিৎসা করাতে হবে
হার্ট ফেইলিউর এমন একটি রোগ, যেখানে হার্ট বা হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে এর সংকোচন এবং প্রসারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হার্ট আর সরবরাহ করতে পারে না।
হার্টের পাম্পিং জনিত অক্ষমতার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন-ফুসফুসে পানি জমে যায়, পা ফুলে যায়, পেটে পানি জমে যায়; পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের অভাবে কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে না। রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, শরীর অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, খাওয়ার রুচি কমে যায়।
* কারণ
▶ আগে হার্ট অ্যাটাক হলে বা হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে।
▶ উচ্চরক্তচাপ।
▶ ডায়াবেটিস।
▶ ধূমপান।
▶ স্থূলতা।
▶ অতিরিক্ত কোলেস্টেরল।
▶ মদ্যপান/নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ।
▶ গর্ভকালীন হৃদপিণ্ডের জটিলতা।
▶ হার্টের ভাল্বে সমস্যা।
▶ হার্টে জন্মগত ত্রুটি।
▶ পুষ্টিহীনতা ও ইনফেকশন ইত্যাদি।
* কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। রোগীদের শরীরের নিুে বর্ণিত উপসর্গগুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
▶ পা/পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া/পেট ফুলে গেলে।
▶ প্রতিদিন সকালে নাশতা করার আগে শরীরের ওজন মাপা। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, যেমন-দিনে এক কেজি অথবা সপ্তাহে দুই কেজি করে ওজন বৃদ্ধি পেলে।
▶ অল্পতে পরিশ্রান্ত হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া অথবা হঠাৎ দুর্বল লাগলে।
▶ ঘনঘন শুকনা কাশি হলে।
▶ শ্বাসকষ্টের কারণে ঘুমানোর সময় উঠে বসতে হলে।
▶ বুক ধড়ফড় করলে বা বুকে ব্যথা হলে।
* যে নিয়ম মেনে চলবেন
▶ প্রতিদিন পানি এবং পানীয় (যেমন চা, কফি, ডাল) সব মিলিয়ে ১-১.৫ লিটার পান করবেন। (শরীর ফুলে গেলে/পায়ে পানি এলে অথবা শ্বাসকষ্ট হলে পানি আরও কম পান করবেন।)
▶ ২৪ ঘণ্টায় খাবারে লবণের পরিমাণ জেনে নিন। ঘরে প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার রান্না হয়, সেখান থেকে আপনার জন্য নির্ধারিত খাবারে লবণের পরিমাণ হিসাব করে নিন। ২৪ ঘণ্টায় চা চামচের এক চামচের বেশি লবণ হতে পারবে না। পরিবারকে জানতে হবে, প্রতিদিন খাবারে কি পরিমাণ লবণ ব্যবহৃত হচ্ছে।
▶ রক্ত নালির ব্লকজনিত (ইসমেমিক) কারণে হার্ট ফেইলিউর হলে চর্বি জাতীয় খাবার, যেমন-গরু, খাসি, মগজ, চিংড়ি, কলিজা, হাঁস, মুরগির চামড়া, হাড়ের অস্থিমজ্জা, ডিমের কুসুম, ঘি, মাখন, বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি খাবেন না।
▶ মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাবেন। ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই এসব খাবার পরিহার করবেন।
▶ নির্ধারিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করুন।
▶ নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করবেন না। ওষুধ বন্ধ করবেন না। নতুন কোনো ওষুধ (যেমন-ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি) খেলেও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে জানাবেন।
▶ উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন
▶ ধূমপান, মদ্যপান, তামাকজাত পণ্য, যেমন-জর্দা, সাদাপাতা, খৈনি ও অন্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন।
▶ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০ মিনিট আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব দ্রুত হাঁটুন। তারপর হালকা ব্যায়াম করুন।
▶ প্রতিদিনের কাজে নিয়মিত বিশ্রাম নেবেন। প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাবেন।
▶ অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুঃশ্চিন্তা পরিহার করুন। প্রয়োজনে যোগ ব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি করুন।
▶ যে কাজ আপনাকে আনন্দ দেয়, সে কাজ করুন। যে মানুষটি আপনাকে বুঝতে পারে বা আনন্দ দেয় অথবা যারা অসুস্থতায় আপনার পাশে থাকবে, তাদের সঙ্গে মিশুন।
▶ কোনো রকম উদ্বেগ থাকলে, বিষণ্নতা অনুভব করলে অথবা, ঘুমের অসুবিধা হলে, এমনকি কোনো কিছুতে মনোযোগে দিতে না পারলে আপনার চিকিৎসককে জানান। বেশি বেশি বিষণ্নতা বা অস্থিরতা দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিষণ্নতা নিরসনে অনেক সহায়ক হবে।
▶ প্রতি বছর একবার ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা এবং পাঁচ বছর পর পর নিউমোনিয়ার টিকা দেবেন।
উপরের নিয়মগুলো না মেনে চললে, যেমন-অতিরিক্ত কাজের চাপ, অনিয়মিত ওষুধ সেবন এবং নিয়ম বহির্ভূত খাওয়া-দাওয়া হলে রোগীদের হার্ট ফেইলিউরের উপসর্গগুলো অনেক বেড়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগে প্রতি সোমবার হার্ট ফেইলিউর ক্লিনিকে এ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
- লিখেছেন ডা. আবিদা সুলতানা
No comments