Adsterra

কৌশিক থে‌কে মাশরাফি হয়ে ওঠার গল্প জানালেন তার মা

কৌশিক থে‌কে মাশরাফি হয়ে ওঠার গল্প জানালেন তার মা, ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;


ছোটবেলা থেকেই কৌশিক দুরন্ত ও মেধাবী। সারাদিন সে খেলাধুলা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকত যে পড়ার টেবিলে তেমন সময় দেওয়া হতো না তার। যদিও একবার কোনো পড়া দেখলেই তা মুখস্থ হয়ে যেত কৌশিকের। সারাদিন এ মাঠে সে মাঠে খেলায় মেতে থাকত। 

ছেলের অতিরিক্ত খেলার নেশা সহ্য করতে না পেরে একবার পিঠে আঘাত করেছিলেন মা হামিদা মর্তুজা। এতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তার। সেই যাত্রায় তিন ঘণ্টা সন্তানের পিঠে তেল-পানি মালিশ করে ছেলেকে স্বাভাবিক করেছিলেন মা হামিদা। সেদিন শপথ করেছিলেন আর কখনো ছেলেকে খেলার জন্য বকা দেবেন না। সেই ছোট কৌশিকই আজ হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজা।    

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে মাশরাফি বিন মর্তুজার নড়াইলের বাসভবনে ঢাকা পোস্টের সারাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার মা হামিদা মর্তুজার প্রাণবন্ত আড্ডা হয়। সেই আড্ডায় তিনি জানান ছেলের কৌশিক থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়ে ওঠার গল্প। 

হামিদা মর্তুজা বলেন, কৌশিকের সারাদিন খেলাধুলা আমার কাছে ভালো লাগতো না। একদিন অসহ্য হয়ে আমি তার পিঠে উপর্যুপরি আঘাত করি। এরপর ছেলের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমাকে বললো, মা আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে বাঁচান। আমি তিন ঘণ্টা তার পিঠে তেল মালিশ করেছি আর আল্লাহর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। সেদিন শপথ করেছিলাম আর কখনো খেলার জন্য ছেলেকে মারব না। সেই দিনের কথা মনে হলে আমার খুব কষ্ট হয়। কান্না ধরে রাখতে পারি না।

পুরোনো দিনের স্মৃতি স্মরণ করে হামিদা মর্তুজা আরও বলেন, আগামীকাল ছেলের মাধ্যমিকে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। যেহেতু হাতে সময় কম তাই তার বাবা তাকে বলেছে সারাদিন যেন বাসায় থেকে পড়ালেখা করে। কিন্তু কৌশিক আমার চোখ এড়িয়ে খেলতে চলে গেল। সারাদিন এলাকায় আমি খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। একজন বললো সামনের মাঠে নাকি সে খেলছে। আমি গিয়ে দ্রুত বাসায় নিয়ে আসলাম। এরপর এমনভাবে পড়ার টেবিলে বসল মনে হলো সে সত্যিই সারাদিন ধরে পড়ছে। তার বাবা বাসায় এসে তাকে ধন্যবাদ জানালো। ফলাফল বরাবরের মতোই ভালো হয়েছিল। আমার ছেলে আসলেই মেধাবী।

ছেলের প্রথম জাতীয় দলের খেলা দেখা প্রসঙ্গে হামিদা মর্তুজা বলেন, আমি কোনোদিন কৌশিকের খেলা দেখি না। আমার বুক কেঁপে ওঠে। সবাই বলে আমার ছেলে ভালো খেলে। দেশের সম্মান বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। প্রথম যেদিন জাতীয় দলে খেলেছিল তার বাবা স্টেডিয়ামে বসে দেখেছে। আমি বাসায় ছিলাম। তার জন্য দোয়া করেছি। আমার সন্তান কেবল আমার গর্ব নয়, সে বাংলাদেশের গর্ব। আমার ছেলে সবার পাশে থাকুক আমি দোয়া করি।

গোলাম মর্তুজা স্বপন ও  হামিদা মর্তুজা দম্পতির ঘর আলোকিত করতে ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে জন্ম হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাশরাফি বড়। ছোট ভাই সিজার মাহমুদও ক্রিকেট নিয়েই সময় কাটান। ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই সাদামাটা থাকাটাই পছন্দ মাশরাফির। দামি পোশাক, ব্র্যান্ড কখনোই প্রলুব্ধ করে না তাকে। ট্রাউজার, টি-শার্ট আর পায়ে স্লিপার, এই হলেন মাঠের বাইরের মাশরাফি। সঙ্গে সানগ্লাসটা থাকে। তবে মোটরসাইকেলটা যেন তার জীবনেরই একটা অংশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পেছনের কারিগর যেন এই মাশরাফি। তাই তো পেয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা।

মাশরাফি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কোনো দেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকাবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম।


মাশরাফির মায়ের সঙ্গে প্রাণবন্ত আড্ডা শেষে ঢাকা পোস্টের ময়মনসিংহ বিভাগের নিজস্ব প্রতিনিধি মো. উবায়দুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা পোস্টের মিলনমেলা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমরা সারাদেশ টিম নড়াইলে আছি। গিয়েছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ভাইয়ের বাসায়। মাশরাফি ভাইয়ের গর্বিত মায়ের সঙ্গে আমাদের প্রাণবন্ত আড্ডা হলো। মায়ের কাছ থেকে শুনলাম ছেলের জানা-অজানা অনেক গল্প। সবমিলিয়ে আন্টির আন্তরিকতায় মুগ্ধ আমরা।


আড্ডায় অংশ নেওয়া ঢাকা পোস্টের বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নড়াইলে এ‌সে দেখা করার সু‌যোগ হ‌লো মাশরাফি বিন মর্তুজা ভাই‌য়ে‌র মা‌য়ের স‌ঙ্গে। আ‌ন্টির আন্ত‌রিকতায় মুগ্ধ আমা‌দের ঢাকা পোস্টের সারা‌দে‌শের টিম। যে সময়টুকু আমরা সবাই কাটিয়েছি তা সারাজীবন সবার স্মৃতি হয়ে থাকবে। 




চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.