গাজায় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জোনাথন কারিকাস বলেছেন, বিশ বছর আগে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে হামাস গাজা শহর এবং সেখান থেকে খান ইউনুছ হয়ে রাফাহ পর্যন্ত হামাস টানেলের একটা বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
তার ভাষায়, গাজা শহরে দুটি স্তর রয়েছে। উপরের স্তরে সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। আর ভূগর্ভস্থ স্তরে বাস করে হামাসের সদস্যরা।
রেডক্রস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার হাসপাতালগুলো মর্গে বা মৃতদেহ রাখার স্থানে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। এসব হাসপাতাল এখন জেনারেটর দিয়ে চলছে। কিন্তু আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে।
তবে ইসরায়েল বলেছে, জিম্মিদের মুক্তি না দেয়া গাজায় পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি বা পানি দেয়া হবে না। অন্তত দেড়শ মানুষকে হামাস সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার আহত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে¸ গতরাতে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১২০০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এর জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজাতেও ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে গাজার লাখো বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ইসরায়েল থেকে।
তবে গাজার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এক নারী বলেন, “আমার যতদূর মনে পড়ে বহু বছর যাবত আমরা বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার সমস্যায় রয়েছি।”
হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ ছাড়াও খাদ্য এবং পানিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ এবং ওষুধ সরবরাহ করার জন্য নিরাপদ করিডর দেয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের উপর চাপ বাড়ছে। একই সাথে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে গাজা ত্যাগের করিডর দেয়ারও দাবি উঠেছে।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় কমপক্ষে তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েল গাজা সীমান্তে সেনা জড়ো করেছে। এদের মধ্যে নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি তিন লাখের মতো সংরক্ষিত সৈন্য রয়েছে। আরও সৈন্য আনছে ইসরায়েল।
সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, এখগাজার ভেতরে অভিযান চালানো হবে কিনা, সেই বিষয়ে এখনো কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসেনি।
তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার জন্য সম্ভাব্য সব বিকল্প বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার পাশাপাশি লেবানন সীমান্তেও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
বর্তমানে মিশরের অংশ ছাড়া গাজার তিনদিক ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত পয়েন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগরের দিকে পাহারা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
শুধুমাত্র মিশরের রাফাহ ক্রসিং থেকে সেদেশে প্রবেশ করা যাচ্ছে। কিন্তু সেজন্যও অনুমতি দরকার হচ্ছে এবং দীর্ঘ লাইনের তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার সেখানেও বিমান হামলা করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকে ওই ক্রসিং বন্ধ বা সীমিত চলাচল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে দাবি করেছিলেন যে, তিনি হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা শিশুদের শিরোচ্ছেদ করছে এমন ছবি দেখেছেন- এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউজ। তারা জানিয়েছে, মি. বাইডেন আসলে এ ধরনের কোন ছবি দেখেননি।
No comments