Adsterra

হিপক্রেটিসকে বলা হয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক

হিপক্রেটিসকে বলা হয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক, ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice; সোফোক্লিস, প্লেটো, অন দি স্যাক্লেড ডিসিস, ডাক্তার হাউস, দেবী প্যানাসিয়া, হাইজিয়া

তিনিই প্রথম রোগীদেরকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন। তার সময়কালে (খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছর পূর্বে) গ্রিসের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করত রোগ দেবতাদের অভিশাপ বা অপদেবতাদের কারনে হয়। কিন্তু তিনি জোর গলায় বলেন রোগ প্রাকৃতিক ঘটনার অঙ্গ আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। আরতাই হিপক্রেটিসকে বলা হয় 'চিকিৎসাবিদ্যার জনক'। চিকিৎসাক্ষেত্রে হিপক্রেটিসের একটি অবদান হল পথ্য নির্দেশে নিয়ম শৃঙ্খলা। তিনি বলেছেন যে পথ্য নির্দেশে রোগীর বয়স, রোগীর স্বাস্থ্য এবং ঋতুর কথা বিবেচনা করতে হবে। 


ধারণা করা হয়, হিপোক্রেটিস খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে গ্রিসের 'কস' (cos) নামে এক ছোট দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নব্বই বছর বেঁচেছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি সম্ভবত মিশর সফর করেছিলেন, যেখানে তাঁর পরিচয় ঘটে মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির সাথে। তারপর তিনি গড়ে তোলেন তার নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি। তিনি পরবর্তীতে যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তার চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। হিপক্রেটিসের রচনার মধ্যে অনেকগুলো ছোট বাক্য 'হিপোক্রেটিসের বচন' হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। 


যেমনঃ • জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্ত কলা দীর্ঘস্থায়ী। • একজনের জন্য যা অমৃত অন্যের জন্য তাই বিষ। • যারা স্বভাবত মেদবহুল তারা ক্ষীনদেহী ব্যাক্তির চেয়ে স্বল্পায়ু হতে পারে। • শীতকালে গ্রীষ্মের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন হয়। • ক্ষীনদেহ ব্যাক্তিদের খাদ্যের প্রয়োজন কম, কিন্তু তা স্নেহজাতীয় হওয়া চাই। মেদবহুল ব্যাক্তির খাদ্যের প্রয়োজন বেশি, কিন্তু তাতে স্নেহবস্তু কম থাকা ভাল। হিপোক্রেটসের জন্ম অ্যাপিয়ান সাগরের ‘কস’ দ্বীপে। তার জীবন সম্বন্ধে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হয় তার পিতা ছিলেন কসের অ্যাপোলো মন্দিরের প্রধান পুরহিত। 


তিনি যে সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন একই সময় জন্মগ্রহণ করে ছিলেন সক্রেটিস, এ্যসেকাইলাস, কিছুপরে সোফোক্লিস, প্লেটো মত মহান দার্শনিক। তাকে পশ্চিমা বিশ্বের ঔষধ বিভাগের জনক বলে চিহ্নিত করা হয়। তার শিক্ষাার সূত্রপাত হয় তার পিতার হাত ধরে। তিনি পিতার কাছথেকে যাবতিয় গুপ্তবিদ্যা শিখেছিলেন। তিনি অসাধারণ মেধাবী ছিলেন। সে সময় এথেন্সে চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত কিছু পড়াশুনা হত। তিনি এথেন্সে গেলেন এবং ডিমোক্রিটাস তার শিক্ষক ছিলেন। 


সে যুগো এথেন্সে ছিল শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসা নামে পরিচিত ছিল এর অর্থ জ্ঞানচরচার কেন্দ্র। শিক্ষকরা প্র্রত্যেকে নিজেদের শিক্ষা ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন তবে অধিকাংশক্ষেত্রেই শিক্ষকরা জ্ঞান সামান্য অংশ দিতেন। নিজের অভিজ্ঞাতার বেশি অংশই প্রকাশ করতেন না। হিপোক্রেটস চিকিৎসকের পুত্র হলেও নিজের গভীর জ্ঞান, বাস্তব যুক্তিনিরভর দৃষ্টিভঙ্গিদিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি ঠিক করলেন বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছ থেকে তাদের জ্ঞানকে অর্জন করতে হবে। কিন্তু কাজটা কঠিন ছিল। 


হিপোক্রেটস তাদের অনুগত শিষ্য্ হয়েয় নানান স্তুতি প্রশংসায় তাদের মন জয় করে নিতেন। তার পর নিজের অসাধারন প্রতিভায় অল্পদিনের মধ্যেই গুরুর সব জ্ঞান আয়ত্ত করে নিতেন। এভাবে সে যুগে যুগে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বন্ধ্যে পরিপূর্ন একটি ধারণা গড়ে তুললেন এর মধ্যেকার ভ্র্রান্তি, ভুল, মিথ্যাচার, প্রতারণা কোন কিছুই তার অজানা রইলনা। অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসক হিসেবে তার খ্যাতি চারিদিকে ছরিয়ে পড়ল। হিপোক্রেটস শুধু যে চিকিৎসকের পারদরশিতা ছিল তানয় চিকিৎসা বিদ্যার নামে ভন্ডামি ও কঠরতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। 


সে যুগে হিপোক্রেটিস তার ‘অন দি স্যাক্লেড ডিসিস’ গ্রন্থে লিখেছেন আর দশিটি ব্যাধির মত মৃগী একটি ব্যাধি । চিকিৎসক যাতে তাদের সুমহান আদর্শে থেকে বিচ্চুত না হয় সে কারণে তিনি তার ছাত্রদের বিদ্যা শিক্ষা শেষ হলে শপথ করাতেন। একে বলা হত ‘হিপোক্রেটিস শপথ’। প্রায় আড়া্ই হাজার বছর ধরে পৃথিবীরর সর্বদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্ররা আাজও এ শপথ নিয়ে থাকেন। “আমি আমার জীবন ও এ পেশাকে পবিত্র,সুন্দর,নির্মল করে রাখব” প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটস দু' হাজার বছর আগে প্রথম বলেছিলেন, 


যে সব খাবার আমরা খাই তা সরাসরি আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। হিপোক্রেটসকে অনেকেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলে মনে করেন। অবশ্য দু' হাজার বছর আজ আমরা বুঝতে পারছি যে, তার সে কথা কতোটা সত্য ছিল। মেডিক্যালের শিক্ষক ড. ড্যানিয়েল একবার ছাত্রদের কাছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস সেরা ডাক্তারদের নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। তারা প্রথমে বললো, হ্যারল্ড শিপম্যানের নাম। উত্তর শুনে তো শিক্ষক থ। শত শত রোগীর প্রাণহরণকারী ডাক্তার হ্যারল্ড শিপম্যানের নামই কি না শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে সর্বপ্রথম উচ্চারিত হলো! 


তারা এরপর যার নাম বললো তিনি আমেরিকান টিভি সিরিজের এক চরিত্র ডাক্তার হাউস। এবারের উত্তর শুনে প্রশ্নকর্তার চোখ ফেটে পানি বের হওয়ার উপক্রম। তৃতীয় উত্তর ছিল হিপোক্রেটস। ডাক্তারদের বাইবেলখ্যাত ‘হিপোক্রেটিক ওথ’-এর লেখকের নাম শোনার পর এবার যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন ওই শিক্ষক। আড়াই হাজার বছর আগে রচিত ডাক্তারদের শপথমূলক গ্রন্থ হিপোক্রেটিক ওথ পশ্চিমি চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এমনকি ডাক্তাররাও বইটি সম্পর্কে কমই জানে। কি আছে ওই গ্রন্থটিতে? 


উত্তরে এক ডাক্তার তার এক বয়স্ক রোগীর বিশ্বাসের কথা বলেন, গ্রন্থটিতে ডাক্তারকে রোগীর কাছে সত্য না বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সত্যটা হলো গ্রন্থটিতে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। গ্রন্থের শুরু এভাবে : ডাক্তার অ্যাপোলো, অ্যাসক্লেপিয়াস, হাইজিয়া ও প্যানাসিয়ার নামে কসম কেটে বলছি, আমি (শপথগ্রহণকারী ডাক্তার) আমার শপথ রক্ষা করবো। গ্রিক পুরাণে রোগ নিরাময়ের দেবতা অ্যাপোলো একবার করোনিস নামে এক মানবীর প্রেমে পড়েন। 


নিজের অনুপস্থিতিতে করোনিসের ওপর নজর রাখার জন্য তিনি একটি সাদা কাক পাঠাতেন। একদিন সাদা কাকটি এসে অ্যাপোলোকে জানায়, করোনিস অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে। সাদা কাকের কাছ থেকে এ খবর শোনার পর রেগে গিয়ে অ্যাপোলো কাকটিকে কালো রঙের বানিয়ে দেন। এদিকে ভাইয়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে অ্যাপোলোর বোন তীর ছুড়ে করোনিসকে বিদ্ধ করেন। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার সময় করোনিস অ্যাপোলোকে জানান, তার গর্ভে অ্যাপোলোর সন্তান। অ্যাপোলো সেদিন করোনিসকে রক্ষা করতে না পারলেও বাঁচিয়েছিলেন নবজাতক অ্যাসক্লেপিয়াসকে। 


স্বাস্থ্যের দেবী হাইজিয়া ও চিকিৎসার দেবী প্যানাসিয়া এই অ্যাসক্লেপিয়াসেরই দুই মেয়ে। কিংবদন্তী অনুযায়ী অ্যাসক্লেপিয়াসের সন্তানদেরই উত্তরপুরুষ হলেন হিপোক্রেটস। কর্মজীবন শুরুর আগে অ্যাপোলোর বংশধরদের অপার কীর্তি ও নাম নিয়ে শপথগ্রহণের সময় ডাক্তাররা যে অনুপ্রাণিত হন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রন্থটির পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, ডাক্তাররা যেন গুরুর চিকিৎসার সময় তাকে নিজ বাবা-মা মনে করে চিকিৎসা করে। এখানে আরো বলা আছে, ডাক্তারের উচিত রোগীর স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করা। চিকিৎসা চলাকালে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বা রোগীর জন্য ক্ষতিকর কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণপণে লড়তে ডাক্তারদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়। 


এতে আরো বলা হয়, ‘আমি কোনো নারীকে জন্ম নিরোধক পটি ব্যবহারের পরামর্শ দেবো না।’ অনেকের মতে, গর্ভপাত বন্ধ করতেই এ শপথের উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সময় গর্ভপাত বৈধ হলেও এ ধরনের পটি সংক্রমিত হয়ে গর্ভবতীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলেই তা ব্যবহারের পরামর্শ প্রদানে নিষেধ করা হয়। গ্রন্থটির সর্বশেষ অংশে গোপনীয়তা সংক্রান্ত। এখানে বলা আছে : চিকিৎসার প্রয়োজনে বা চিকিৎসা ব্যতিরেকে মানুষ হিসেবে আমি সারাজীবনে যা কিছু দেখবো বা শুনবো তার সব কিছুই গোপন রাখবো। এখনকার মতো আগেও রোগীরা ডাক্তারদের কাছে কোনো কিছু গোপন না করেই নিজেদের সব কথা প্রকাশ করতো। 


নিজেদের গোপন কথা কখনো অন্যদের কাছে প্রকাশ হবে না এ বিশ্বাস থেকেই তারা ডাক্তারদের কাছে কিছুই লুকাতো না। বইটির একদম শেষ শপথটা পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত। এখানে বলা আছেÑ যারা গ্রন্থটির শপথ বজায় রাখবে তাদের খ্যাতি চিরন্তন হবে আর শপথ লঙ্ঘন করলে ঠিক তার উল্টোটা ঘটবে। এখন যুগ পাল্টেছে। এসেছে কসমেটিক সার্জারির যুগ। কিন্তু প্রাচীনকালে লেখা ডাক্তারি মূল্যবোধ কি এখনো প্রাসঙ্গিক? উত্তরে বলতে হয়, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন, ড্রাগ কম্পানি, ডাক্তার ও রোগীতে গিজগিজ করা এই আধুনিক যুগেও হিপোক্রেটিক ওথ গ্রন্থটির শপথগুলোর স্পৃহা আগের মতোই প্রাসঙ্গিক ও সর্বজনীন। "

No comments

Powered by Blogger.