Adsterra

চার্লি চ্যাপলিন, সর্বকালের সেরা কৌতুক অভিনেতা

চার্লি চ্যাপলিন, সর্বকালের সেরা কৌতুক অভিনেতা, কালো মোচ, কালো টুপি, হাতে বেত, পায়ে অতি পুরনো বুটজুতো আর পাতিহাঁসের মতো চলন, দ্য কিড’, চালর্স চ্যাপলিন


একবার এক বিখ্যাত ডিরেক্টর একজন অভিনেতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি নিশ্চয়ই কঠোর পরিশ্রম করে মানুষকে হাসানোর মত এত সুন্দর সব এক্সপ্রেশন রপ্ত করছেন? তাই নয় কি? অভিনেতাটা হেসে উত্তর দেন, না। মোটেও না। এটা তো খেলা। বাচ্চাদের খেলা। বাচ্চাদের খেলা দেখে তো সবার হাসাটাই স্বাভাবিক। এটার জন্য আবার পরিশ্রম কিসের? একদিন ডিরেক্টরটা দেখলেন, ঐ অভিনেতাটাই শুটিং এর ফাঁকে ঘুমুচ্ছেন। তিনি অবাক হলেন। মনে মনে ভাবলেন, সত্যিই এই অভিনেতাটা আরামপ্রিয় মানুষ। পরিশ্রম তেমন একটা করেন না। 


ওঁনার যা আছে তা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। তিনি কৌতুহলবশত একজন ক্রু মেম্বারকে বললেন, আচ্ছা, ঐ অভিনেতাটা এই সময় ঘুমাচ্ছে কেন? তিনি কি এতই আরামপ্রিয়? ক্রু মেম্বারটা বললেন, আরে না! উনি তো অনেক পরিশ্রমী মানুষ। গত চারদিন ধরে শুধুমাত্র একটা মজার অঙ্গ-ভঙ্গী নিয়ে পড়ে ছিলেন। তিনি কিছুতেই তা করতে পারছিলেন না। নাছোড়বান্দার মত লেগে গেলেন। না ঘুমিয়ে, অল্প খেয়ে টানা চারদিন প্র্যাকটিস করেছেন। আজ সেটা শুটিং এ করে দেখিয়েছেন। এটা নতুন না। তিনি এমনই। ডিরেক্টরা হতভম্ব হয়ে গেলেন। চার্লি চ্যাপলিন মি. বিনের চেয়েও যে আমাকে মুগ্ধ করেছে সে এই চ্যাপলিনই। নিষ্ঠুর দারিদ্রতার সাথে বেড়ে উঠেছেন। 


কিন্তু, চোখে-মুখে দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি। মানুষকে হাসানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জম্মেছেন। ভুল বললাম! মানুষকে হাসানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা করে নিয়েছেন। কাজ ছাড়া যিনি কিছুই বুঝতেন না তিনি এই চ্যাপলিন। হিটলার যখন তার নৃশংসতা দিয়ে সারা পৃথিবীতে তান্ডবলীলা চালাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তিনি সারা পৃথিবীকে হাসিয়ে ছেড়েছেন। তাঁকে আজ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। কালো মোচ, কালো টুপি, হাতে বেত, পায়ে অতি পুরনো বুটজুতো আর পাতিহাঁসের মতো চলন – দ্যাখলেই মানুষজন বুঝবেন, হয় চ্যাপলিন, নয়তো চ্যাপলিনের নকল। চ্যাপলিন তাঁর ট্র্যাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রে প্রথম আবির্ভূত হন ১৯২১ সালে, ‘দ্য কিড’ ছবিতে। 


হাসিঠাট্টা আর বিষণ্ণতা, ভাঁড়ামো আর হতাশা মিলে এক অদ্ভুত রস সৃষ্টি হয়েছে এই অদ্ভুত চরিত্রটিতে। **জন্ম ও পরিবার ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন চার্লি স্পেন্সার চ্যাপলিন বা চার্লি চ্যাপলিন৷ তবে তার জন্মস্থান কোথায় তা নিয়ে সঠিক কোনও তথ্য কারও জানা নেই। চ্যাপলিনের জন্মের দুই বছরের মাথায় তাঁর বাবা-মা’র মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ চার্লি চ্যাপলিনের পিতার নাম চালর্স চ্যাপলিন। তিনি মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে। তার মায়ের নাম ছিল হানা। ১৮৯১ সালের আদমসুমারী থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্নাহ চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সাথে ওয়ালওয়ার্থ, দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটন জেলার অন্তর্গত। 


**প্রথম অভিনয় *বাস্তব ও পর্দার চার্লি চ্যাপলিন চার্লি চ্যাপলিনের মা থিয়েটারে কাজ করতেন। ঘটনাটি চ্যাপলিনের পাঁচ বছর বয়সের। একদিন তার মা মঞ্চে গান গাইছিলেন। আর ছোট্ট চ্যাপলিন বসে বসে মায়ের অভিনীত গীতনাট্য দ্যাখছিলেন। সে সময় লন্ডনের খেটে খাওয়া শ্রমিক, ভবঘুরে কিংবা নেশাতুর লোকেরই বিনোদনের জন্য থিয়েটারে ভিড় জমাতো। মঞ্চে গায়িকা বা নর্তকীর হেরফের হলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে থিয়েটার মাথায় তুলে নিতো। মঞ্চে গান গাইছিলেন চ্যাপলিনের মা হানা চ্যাপলিন। চ্যাপলিনের মায়ের গলায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। গান গাওয়ার এক পর্যায়ে চ্যাপলিনের মায়ের গলার স্বর ভেঙ্গে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। 


কিন্তু মঞ্চ ভর্তি দর্শককে বুঝ দেওয়ার জন্য মায়ের জায়গায় চ্যাপলিনকে মঞ্চে ওঠানো হয়। চার্লি তার মায়ের পরিবর্তে স্টেজে গান গাইতে শুরু করেন, ‘Jack Jones well and known to everybody’। তার গানে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে স্টেজে কয়েন ছুঁড়তে থাকে। চ্যাপলিন হঠাৎ অঙ্গভঙ্গিসহ বলে ওঠেন, ‘আমি এখন গান গাইব না; আগে পয়সাগুলো কুড়িয়ে নিই, তারপর আবার গাইবো। এটি ছিল দর্শকের হাসির জন্য চার্লির প্রথম কৌতুকাভিনয়। ** চলচ্চিত্র চার্লির অভিনীত মোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৩৫ টি। চ্যাপলিনের অনেকগুলো ছবির মধ্যে যেগুলো সেরা ধরা যায়: 


1. Modern Times (1936) 2. City Lights (1931) 3. The Great Dictator (1940) 4. The Gold Rush (1925) 5. The Kid (1921) 6. Limelight (1952) 7. The Immigrant (1917) 8. The Circus (1928) 9. Monsieur Verdoux (1947) 10. A Dog’s Life (1918) **ব্যক্তিজীবন ব্যক্তিজীবনে চার্লির সুন্দরী মেয়েদের প্রতি দুর্বল ছিলেন। কিন্তু কোনও সুন্দরই তাকে সুখ দিতে পারে নি। তার ব্যক্তিজীবন ছিল বিষাদময়। ব্যক্তিজীবনে তিনি চারবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জীবনে শেষ ক’টা বছর পরিবারের সদস্যদের একান্ত সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন তিনি। 


** সম্মান সূচক অস্কার চ্যাপলিন দশ বছর ধরে কোনও ছবি না করার পর, ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’ ছবিটি। মার্লন ব্র্যান্ডো ও সোফিয়া লোরেনের মতো তারকারা থাকা সত্ত্বেও ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ করে। চ্যাপলিন তাঁর জীবনের শেষ দশকগুলি কাটিয়েছেন সুইটজারল্যান্ডে – এই সময়ে শুধুমাত্র একবার যুক্তরাষ্ট্র্রে ফিরেছিলেন তিনি, ১৯৭২ সালে, একটি সাম্মানিক অস্কার গ্রহণ করার জন্য। সেই কাহিনীটাই বলছি। ১৯৭২ সালে ‘লাইম লাইট’ ছবিটির আবহ সঙ্গীতের জন্য অস্কার পান চ্যাপলিন। এছাড়াও ‘চলচ্চিত্রের শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাসে অভাবনীয় প্রভাব বিস্তারের’ স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সন্মানসূচক অস্কারও প্রদান করা হয়। 


এই অস্কার গ্রহণের জন্য দীর্ঘ নির্বাসন ভেঙ্গে আবারো যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান চ্যাপলিন। সেই অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদানের সময় উপস্থিত দর্শকেরা কয়েক মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে চার্লি চ্যাপলিনকে অভিবাদন জানান, যেটি অস্কারের ইতিহাসে আজও পর্যন্ত দীর্ঘতম ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ এর রেকর্ড হয়ে আছে। **চার্লি চ্যাপলিনের জীবনের মজার দুটি ঘটনা চার্লি চ্যাপলিন তখন পৃথিবী-বিখ্যাত। তার অনুকরণে অভিনয়ের একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গোপনে চার্লি চ্যাপলিন নাম দেন সেই প্রতিযোগিতায়। মজার বিষয় হলো প্রতিযোগিতা শেষে দেখা গেলো ১ম ও ২য় স্থান অর্জন অন্য দুজন প্রতিযোগী। চার্লি চ্যাপলিন হন তৃতীয়। 


অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সাথে যখন চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম দেখা হলো তখন আইনস্টাইন চ্যাপলিনকে বলেছিলেন- ‘আপনাকে আমি যে কারণে খুব পছন্দ করি সেটা হলো আপনার বিশ্বজনীন ভাষা। আপনি যখন অভিনয় করেন, তখন আপনি হয়তো কোনও ডায়লগই বলছেন না, কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষ ঠিক বুঝতে পারে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন এবং তারা সেজন্য আপনাকে অসম্ভব ভালোও বাসে।’ উত্তরে চ্যাপলিন হেসে বলেছিলেন- ‘ড. আইনস্টাইন, আপনাকে আমি তার চেয়েও বড় কারণে পছন্দ করি। আপনার থিওরি অব রিলেটিভিটিসহ অন্যান্য গবেষণার বিন্দুবিসর্গও কেউ বুঝে না, তবুও গোটা পৃথিবীর মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করে’। 


প্রয়াণ ১৯৭৭ সালের শুরু থেকেই চার্লি চ্যাপলিনের শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। ১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে চার্লি প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডের কার্সিয়ারে। ওই দেশের ডিঙ্গিতে চার্লির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এর পর ঘটে একটা দুর্ঘটনা। পরের বছর চার্লির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায়। ১৬ দিন পরে তা উদ্ধার করে আবার সমাহিত করা হয়। "

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.