Adsterra

এই অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার শেষ কোথায়?


এই অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার শেষ কোথায়?, সামাজিক সহিংসতা, ব্যক্তিগত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম, পূর্বশত্রুতা, খুনখারাবি,

সমাজে অশান্তি ও অসহিষ্ণুতা বাড়িয়া চলিয়াছে। শুধু কি রাজনীতিতেই অস্থিরতা বিরাজমান? ইহার পাশাপাশি এই সময় সামাজিক সহিংসতা কেন বাড়িতেছে, তাহাও গভীর চিন্তার বিষয়। গত সোমবার রাজশাহীতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই চিকিৎসককে নৃশংসভাবে কুপাইয়া হত্যা করা হইয়াছে। একেবারে ফিল্মি স্টাইলে একজন চিকিৎসককে চেম্বার হইতে মাইক্রোবাসে তুলিয়া নিয়া নৃশংসভাবে হত্যা করা হইয়াছে। এই দুই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের পেশাগত সংগঠন বিএমএ প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখিয়া প্রতিবাদ জানাইয়াছে। ইহা কীসের আলামত?


এই যে সমাজে ব্যক্তিগত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ, আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম, পূর্বশত্রুতা ইত্যাদির জেরে খুনখারাবি, মারামারি ও হানাহানি বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার মূল কারণ কী? সাধারণত যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়া যায়, তখন উন্নয়নশীল দেশে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত ও দাগি অপরাধী তাহার সুযোগ গ্রহণ করিয়া অপরাধের মাত্রা বাড়াইয়া দেয়। তবে ইহার প্রকৃত কারণ সমাজে ন্যায়বিচার ও সুবিচারের অভাব। যেইখানে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করিয়া মানুষকে ঘরছাড়া ও এলাকাছাড়া করা হয়, হাজার রকমের অন্যায়ের প্রতিকার হয় না, সেইখানে সমাজ স্থির ও শান্ত থাকিবে কীভাবে? যাহারা এইভাবে মানুষকে হয়রানি করে, তাহারা কাহারা? তাহাদের অধিকাংশই সরকারি দলে অনুপ্রবেশকারী? সত্যিকারার্থে তাহাদের কোনো দল নাই। তাহারা সুযোগসন্ধানী ও বর্ণচোরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সম্মুখে রাখিয়া তাহারা আরো বেপরোয়া হইয়া উঠিয়াছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করিবার পর কাহাকে গ্রেফতার করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ বজায় ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্যই ইহা আবশ্যক। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে একশ্রেণির নেতা, পাতিনেতা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কিংবা সেই প্রার্থীর সমর্থক শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ে মদত দিয়া চলিয়াছে। পিছন হইতে কলকাঠি নাড়িতেছে। তাহারা মাদকের কারবারসহ এমন কোনো অপরাধ নাই, যাহার সঙ্গে জড়িত নহে। এইভাবে তাহারা অঢেল কালোটাকার মালিক। এই অবৈধ অর্থ দিয়া এখন তাহারা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে বিচার বিভাগের লোকজনদের কিনিয়া লইতেছে। ফলে তাহারা চলিতেছেন তাহাদের হুকুমতো মতো। এইভাবে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা-মোকদ্দমা দিয়া প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করিবার চেষ্টা ন্যক্কারজনক। এমনকি যেই সকল মামলা তিন বত্সর পূর্বে করা হইয়াছিল, তাহা এখন নূতনভাবে সম্মুখে আনা হইতেছে। থানা-পুলিশ জানে, মিথ্যা জিডি করা হইয়াছে। তাহার পরও হয়রানি করা হইতেছে। পুরাতন মামলা বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া ঝুলিয়া আছে। তদন্ত করিয়া ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার কোনো নাম নাই। এখন সেই সকল মামলাই নির্বাচনের আগেভাগে গতি পাইতেছে কাহাদের অঙ্গুলিনির্দেশে, তাহা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। তাহারা এখন এই মোক্ষম সময়টাকে কাজে লাগাইতেছে। এই সমস্ত কারণে আজ সরকারি অফিস-আদালতে যাহারা যান, তাহাদের দুর্ভোগের অন্ত নাই। তাহারা নির্বাচনের জন্য কাজ করিবেন, নাকি কোর্টকাচারি সামলাইবেন, তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেন না।


এইদিকে বিচার বিভাগ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিচারকদের অভাব, অভাব অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধারও। ফলে কোর্টে লক্ষ লক্ষ মামলা পড়িয়া রহিয়াছে বিচারাধীন অবস্থায়। এই মামলাজটে নাগরিকদের জীবন দুর্বিষহ হইয়া উঠিলেও সেইদিকে কাহারও ভ্রক্ষেপ নাই। সর্বোপরি সরকারি অফিস-আদালত যেইখানেই যাওয়া হউক না কেন, উপরি ছাড়া তেমন কাজ হয় না। এইভাবে দেখা যাইতেছে, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনাইয়া আসিতেছে, ততই একশ্রেণির লোক ফুলিয়া-ফাঁপিয়া উঠিতেছেন। তাহাদের নিকট ন্যায়-অন্যায়বোধ বলিয়া কিছু নাই। এই সকল অন্যায়-অবিচারের কারণেই আজ সমাজে বাড়িতেছে অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতার মধ্যে জন্ম নিতেছে সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ও নৃশংসতা। ইহার শেষ কোথায়?



চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.