Adsterra

কিথ ওয়াটারহাউজ || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান

কিথ ওয়াটার হাউজ,  মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান, ব্রিটিশ লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, উপন্যাসিক, নাট্যকার ও স্ক্রিনরাইটার, ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;


ব্রিটিশ লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, উপন্যাসিক, নাট্যকার ও স্ক্রিনরাইটার কিথ ওয়াটারহাউজতিনি ১৯২৯ সালে যুক্তরাজ্যের লিডস ইয়র্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেনকিথ ওয়াটারহাউজের পুরো নাম কিথ স্পেন্সার ওয়াটারহাউজ, ইংল্যান্ডের পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ জার্নালিজম রিভিউ আয়োজিত পাঠক ভোটে কিথ ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রশংসিত কলামিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হনএকাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালির উপর পাকিস্তানি ও তাদের দেশীয় দালালদের বর্বরতা সৃষ্টি করেছিল মানব ইতিহাসের ভয়াবহ বিপর্যয়, যা বিশ্ববাসীকেই হতবাক করে দিয়েছিলসেই সময় বাঙ্গালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ; তেমনই একজন লেখক কিথ ওয়াটারহাউজ

    কিথ ওয়াটারহাউজ একাত্তরে কলম ধরেছিলেন বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের গণহত্যার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের পক্ষে, ভারতে আশ্রিত এক কোটি শরণার্থীদের জন্য১৯৭১ সালের ৯ জুন যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির দৈনিক মিররের প্রথম পাতায় কিথের একটি কলাম প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল ‘Wednesday’s child’কলামের বিষয়বস্তু ছিল- বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালির উপর নৃশংস নির্যাতন ও ভারতে আশ্রিত এক কোটি বাঙ্গালি শরণার্থীর অমানবিক জীবন-যাপনপাশাপাশি বাংলাদেশ ও বাঙ্গালির পাশে দাড়ানোর আহ্বানতিনি লিখলেন- ‘এই কলামটি পরের দিন প্রকাশিত হবার কথা ছিল কিন্তু ২৪ ঘন্টা অনেক লম্বা সময় এবং আমাদের অপেক্ষা করা মানেই হয়তো আরো মানবিক বিপর্যয় ঘটে যাওয়া আর জীবন বাঁচানোর মতো কাজে দেরী করতে নেইপশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই; পত্রিকার সম্পাদকীয় ও কার্টুনিস্টের তুলিতে উঠে এসেছে মানব ইতিহাসের বিপর্যয়ের কথাআমরা দেখেছি পাকিস্তানিদের ভয়ংকর বর্বরতা থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে আসা বাংলাদেশিদের ছবি- উলঙ্গ ক্ষুধার্ত শিশু, ভিক্ষার থালা হাতে হতবাক বৃদ্ধের অসহায় দৃষ্টিশব্দ দিয়ে আমরা বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয়কে বুঝাতে পারি- দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, মহামারী কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান যে ভয়ংকর পরিস্থিতি, তাঁর জন্য শব্দ খুজে পাওয়া ভার

  পরের অংশে কিথ একটু ভালো থাকার জন্য, মানবিক জীবনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে বাংলাদেশে ও ভারতের বাঙ্গালি শরণার্থী শিবিরে সংঘটিত ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয় রোধে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য ব্রিটিশদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানসেই সময়ে চলমান স্নায়ুযুদ্ধে উন্নত বিশ্বের ক্ষমতার লড়াইয়ের অপব্য্য, চ্যারিটি সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব ও দায়িত্বহীনতাকে প্রশ্ন-উত্তরের মধ্যে দিয়ে ব্যঙ্গ করেন কিথ

   ‘প্রশ্নঃ আমেরিকা ও রাশিয়া চন্দ্রাভিযানে এত অর্থ ব্যয় করে কিন্তু পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করার পিছনে তাদের বাজেট থাকে অপ্রতুল

    উত্তরঃ আমি জানিনা

     প্রশ্নঃ কোন দেশে বোমা ফেলতে যদি অনুমতি না লাগে কিন্তু জীবন রক্ষাকারী ভ্যাক্সিনেশন পাঠাতে কেন অনুমতি লাগে? কেন রেডক্রস, রেড ক্রিসেন্ট, বিশ্ব সংস্থা তাদের ডাক পড়ার আগ পর্যন্ত মানবিক বিপর্য্য রোধে এগিয়ে যায় না

    উত্তরঃ আমি জানিনা

     প্রশ্নঃ সরকার সাহায্য পাঠানোর প্রক্রিয়া কেন এত ধীর?

     উত্তরঃ সরকারের কথা ভুলে যানসরকারের চেয়ে বরং এই পৃথিবীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব বেশি

      এরপর কিথ লিখেন- “ এইসব প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর খুজে পাওয়া যায় নাতাই, প্রশ্ন করে, উত্তর খুজে সময় নষ্ট করবেন নাবরং বাংলাদেশের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে এখনই এগিয়ে আসুন, আজ দুপুরের আগেই অংশগ্রহণ করুনখাম-কলম নিন, খামের উপর নিচের ঠিকানা লিখুন-

          SAVE A LIFE 

          Box 189, Daily Miror,1, Thavies Inn,

          London, S.O.1 P1DA

আপনার হয়তো কোনো পছন্দের দাতব্য সংস্থা আছে, যার ঠিকানা খুজে পাচ্ছেন নাহয়তো ভাবছেন, এই অনুদানের কতটুকু প্রশাসনিক কাজে ব্যয় হচ্ছে আর কতটা ভুক্তভোগিরা পাচ্ছেএই দ্বন্দ্বগুলো জাতিসংঘের জন্য ছেড়ে দিন এবং খামের উপর তিন পেনির একটি টিকেট লাগিয়ে এক পাউন্ডের একটি নোট উপরের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিনযদি আপনার কাছে এক পাউন্ড না থাকে, তবে জোগাড় করুন, দরকার হলে ধার করুন, বাড়ি ভাড়া বা গ্যাসের বিলের জন্য তুলে রাখা অর্থ থেকে নিন, পকেট্মানি থেকে বা ধূমপানের খরচ বাঁচিয়ে বা কিছু বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে হলেও এক পাউন্ড জোগাড় করুন আর সেই এক পাউন্ড খামের ভেতর ভরে পোস্ট করে দিনহয়তো আপনার এই এক পাউন্ডই বাঁচিয়ে দেবে একটি জীবনএই মানবিক কাজের জন্য ধন্যবাদ প্রত্যাশা করবেন না; কারণ, এই রক্তাক্ত পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করার দায়িত্ব আপনার- আমারই

   কলামটি এখানেই শেষ হয়েছিলতবে তা সাড়া ফেলেছিল পুরো যুক্তরাজ্যেমাত্র দুদিনের মাথায় মানে ১১ জুন পত্রিকাটি জানায় বাংলাদেশের শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য ৩৩,৪০০ পাউন্ড জমা পড়েছে

    কিথ এর লেখা বিলি লাইয়ার, বাকেট শপ, আওয়ার সঙ্গ, বিম্ব, গুড গ্রিফ, দেয়ার ইজ এ হ্যাপি ল্যান্ডসহ অনেক বই লিখেছেনলেখক হিসেবে অনেক পুরষ্কারও অর্জন করেছেন১৯৬২,১৯৬৩,১৯৬৪ সালে বেস্ট ব্রিটিশ স্ক্রিনপ্লে পুরষ্কার পান১৯৮৮ সালে তাঁর সানডে এক্সপ্রেস বুক অব দ্যা ইয়ার এবং ১৯৯০ সালে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড এওয়ার্ড ফর বেস্ট কমেডি অব দ্যা ইয়ার পুরষ্কার লাভ করে

   ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ ও বাঙ্গালির এই অকৃত্রিম বন্ধুর মৃত্যু হয় ৮০ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের লন্ডন কিথ ওয়াটারহাউজকে প্রদান করা হয় মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা  

 


চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.