জন্ম নিবন্ধন যেন জন্মগ্রহণের চেয়েও কঠিন
কিছুদিন আগেও দিনের অধিকাংশ সময় সার্ভার ডাউন থাকত। এখন অবশ্য এ সমস্যা কিছুটা কমেছে। আবার অনেক সময় কেউ জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে ফেললে তার তো আর নিবন্ধন নম্বর মনে থাকবে না৷ কিন্তু সার্ভারে কারো নিবন্ধন খোঁজার জন্য নিবন্ধন নম্বরই ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে কেউ নিবন্ধন সনদ হারিয়ে ফেললে সেটার কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।’
দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাাল নিউজ বাংলা ২৪ ডটকম এর চট্টগ্রামের সাংবাদিক আরাফাত বিন হাসানের এক প্রতিবেদনে এমনি তথ্য উঠে এসেছে।
দেশীয় আইনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোষ্ঠী, বয়স নির্বিশেষে সবার জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। তাই দেশে জন্ম নেয়া শিশুর প্রথম স্বীকৃতিই এই জন্ম নিবন্ধন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিককে দেয়া হয় নাগরিক সনদ। সেই সনদ পেতে অধিকাংশ নাগরিককে পোহাতে অন্তহীন ভোগান্তি। শুধু সেবা প্রার্থীরা নয়, নিজ নিজ অঞ্চলের নাগরিকদের সেবা দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাও।
২০১০ সালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনলাইন করার পর থেকে সেবাপ্রাপ্তি সহজ ও নিরাপদ করতে সেবার উন্নতির নামে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে বেশ কয়েকবার। কার্যত স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইন করার পর বেড়েছে ভোগান্তি। ‘অনলাইন’ নাম হলেও নিবন্ধন সম্পন্ন করতে এখনও সরকারি কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। মূলত নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক কঠিন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ৷
এতে সার্বার ডাউন, পসিবল ডুপ্লিকেট (সম্ভব্য দুবার আবেদন), অনলাইন টাকা গ্রহণে ধীরগতি, ওটিপি সমস্যা, আবেদন ফরম প্রিন্টিং সুযোগ না থাকা, দিনে ত্রিশটির অধিক নিবন্ধন সম্পন্নের সুযেগ না থাকা, নিবন্ধন নম্বরের বিকল্প কীওয়ার্ড দিয়ে আবেদন খোঁজার সুযোগ না থাকা সহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে সেবাদাতারাও। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় লাগামহীন ভোগান্তির দায় মাঠ পর্যায়ে সেবাদাতাদের ওপর চাপান সেবাপ্রার্থীরা। এতে সেবাপ্রার্থীর পাশাপাশি নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরা।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়ার এসব সমস্যা নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পশ্চিম ষোলশহর এলাকার কাউন্সিলর মোবারক আলীর সঙ্গে।
তিনি জানান, দেশে একই নামে একাধিক কেন, সহস্রাধিক ব্যক্তি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে বাবা বা মায়ের নামও মিলে যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিবন্ধনের সময় পসিবল ডুপ্লিকেট আসে। আগে এটা জেলা প্রশাসন ঠিক করতে পারত, এখন তাদের ওপরও নেই।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নিবন্ধনের জন্য আলাদা ওটিপির প্রয়োজন হয়। এটা ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো প্রতিটা ওটিপির জন্য পৃথক ফোন নম্বর লাগে। এক্ষেত্রে একই পরিবারে যদি একাধিক শিশু থাকে, তাদের নিবন্ধনের সময় ঝামেলা হয়।’
মোবারক আলী বলেন, ‘বিষয়টা এমন দাড়িয়েছে যে, এখন জন্মদান বা জন্মগ্রহণের চেয়ে জন্মের নিবন্ধন করা কঠিন। একটা ওয়ার্ড থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০টি নিবন্ধন সম্পন্ন করার সুযোগ আছে। অথচ প্রতিদিন আমাদের সেবাপ্রার্থী এর কয়েকগুণ বেশি। এতে আমাদের জট লেগে যাচ্ছে রোজই। সেবাপ্রার্থীরা এসব বুঝতে চান না, আমাদের এটা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।
‘অনেক সময় কারো কারো ক্ষেত্রে সত্যি সত্যি একাধিক রেকর্ড পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী, সেই বিষয়েও কোনো নির্দেশনাও নাই। এগুলো বারবার সংশ্লিষ্টদের জানিয়েও কোনো সুরহা হচ্ছে না।’
সিটি করপোরেশনের পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অধিকাংশ সময় দেখা যায় পেমেন্ট গ্রহণ করতে অতিরিক্ত সময় নেয়। সার্ভার ডাউন থাকে। পেমেন্ট গ্রহণে সময় বেশি নেয়ায় আমাদের কাছে সেবাপ্রার্থীরা আসলেও দেখা যায় পেমেন্ট অসম্পন্ন। তখন তারা ক্ষুব্ধ হয়। এসব সমস্যার কারণে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। চসিকের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘সার্ভার ডাউন সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিছুদিন আগেও দিনের অধিকাংশ সময় সার্ভার ডাউন থাকত। এখন অবশ্য এ সমস্যা কিছুটা কমেছে। আবার অনেক সময় কেউ জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে ফেললে তার তো আর নিবন্ধন নম্বর মনে থাকবে না৷ কিন্তু সার্ভারে কারো নিবন্ধন খোঁজার জন্য নিবন্ধন নম্বরই ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে কেউ নিবন্ধন সনদ হারিয়ে ফেললে সেটার কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্যার স্থায়ী একটি সমাধান দরকার। এটার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ আমাদের ভুল বোঝে।’
এই বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে বক্তব্য জানাতে রাজি হননি৷
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments