মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২২ কাজের ২১টিই অসম্পন্ন, ভুয়া ভাউচারে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ
২২ কাজের ২১টিই অসম্পন্ন, ভুয়া ভাউচারে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ। অভিযোগ প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস ও মাহবুবুর রহমান রনির বিরুদ্ধে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংস্কার ও মেরামতে বরাদ্দকৃত ২২টি কাজের মধ্যে মাত্র একটি কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার। বাকি ২১টি কার্যাদেশের বিপরীতে কোনো কাজই হয়নি। অথচ এর মধ্যেই সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে বরাদ্দের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল সংস্কার ও মেরামতের মোট ২৭টি কাজের মধ্যে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর অধিভুক্ত ৫টি এবং গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬ এর আওতাধীন রয়েছে ২২টি কাজ।
জানা যায়, গণপূর্ত ই/এম-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনির তত্ত্বাবধানেই এসব কাজ ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ সম্পন্নের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস ও প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনি ২২টি কাজে বরাদ্দ থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকার ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২২টি সংস্কার কাজের জন্য আলাদা আলাদা কার্যাদেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র একটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সবগুলো কাজ সমাপ্ত হওয়ার প্রত্যয়নপত্র চেয়ে কাগজপত্র দাখিল করে। তবে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে কাজের প্রকৃত চিত্র উঠে আসায় প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে অভিযোগ ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬ এর ২২টি কাজসহ ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর আওতাধীন ৫টি কাজের সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক তদন্তের অনুরোধও জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া মুগদা হাসপাতালের পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ কর্তৃক নির্মাণ/সংস্কার কাজের বিপরীতে ২২টি কাজের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওই ২২টি কাজের মধ্যে ২১টির দাখিলকৃত কার্যাদেশ অনুযায়ী কোনো কাজই সম্পাদন করা হয়নি। গণপূর্ত সিভিল (ই/এম) বিভাগকে বারংবার বলার পরও তারা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করছে না।’
হাসপাতালের সংস্কার ও মেরামতের কাজ অসম্পন্নের অভিযোগ প্রসঙ্গে গণপূর্তের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সংশ্লিষ্ট কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও, এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসকে একাধিকবার ফোন করে, এমনকি সশরীরে তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নানা ধরনের সংস্কারের জন্য মোট ২২টি কার্যাদেশ দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। মুগদা হাসপাতালের ওই কাজগুলোর মধ্যে বিভিন্ন অকেজো সরঞ্জাম মেরামত এবং সংস্কার। মেরামত কাজের মধ্যে ছিল- হাসপাতাল কম্পাউন্ডে নিরাপত্তার জন্য অকেজো/নষ্ট সিকিউরিটি লাইট, গার্ডেন লাইট, ভবনের চতুর্থতলায় অবস্থিত ফ্লাডলাইট মেরামত বা পরিবর্তনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।
এছাড়া হাসপাতালের পাম্প মটরের অকেজো নষ্ট যন্ত্রাংশ মেরামত বা পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজও এর আওতাধীন ছিল। আরেকটি কাজ ছিল হাসপাতালের রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালে স্থাপিত ২০০ কেভিএ একটি, ২২৫ কেভিএ দুটি এবং ২৫০ কেভিএ একটি অকেজো বা নষ্ট ডিজেল জেনারেটর সেট মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।
ভিন্ন ভিন্ন কার্যাদেশে কনফারেন্স রুমে অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; হাসপাতালের পঞ্চমতলার পশ্চিম পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; মেডিকেল কলেজের নবমতলার পূর্ব পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; নিয়ন সাইন বোর্ডে অকেজো বা নষ্ট লাইট পাওয়ার সাপ্লাই মেরামত এবং ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জেনারেটর সেটের মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ বিভিন্ন সংস্কার এবং উন্নয়ন কাজ।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments