ইউরোপ সহ সহজে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় যে সকল দেশে
বেশ কয়েক বছর
আগে মিশরীয় লেখক তাইয়েব সালেল এর একটি উপন্যাস "সিজনস অব মাইগ্রেশান টু
নর্থ" বাংলা করলে উপন্যাসের নাম দাঁড়ায় উওরে স্থানন্তরিত হওয়ার মৌসুম। নিজের
জন্মভূমি থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেয়ার প্রবণতা হাজার হাজার বছর ধরে হয়ে আসছে। কেউ
রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তায় আশায় , কেউ দেশ ভাগের কারণে দেশ ছাড়ে, কেউ উচ্চ
শিক্ষার আশায়, কেউ জীবিকায় এবং দেশ ছেড়ে উন্নত দেশে থিতু হতে
চায় সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আবার কেউ কালো টাকা পাচার
করার জন্যও দেশন্তরিত হয়। তবে যারা দেশান্তরিত হয়ে অন্য দেশে থিতু হয় তাদের
মধ্যে কেউ কেউ দেশে ফিরে আসে, আবার কেউ কেউ কখনো ফিরে আসে
না। এই যে দ্বিতীয় দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ, এটা এখন
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বন্ধু- বান্ধবদের মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে দেখা যায়। দেশ ছাড়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। থাকেন সুযোগ ও
সময়ের অপেক্ষায়। এই কাজ ভবিষ্যতে ও অনেকেই করবেন।
তবে বিশ্ব জুড়ে
জঙ্গিবাদের উত্থান, বিভিন্ন মহামারি, যুদ্ধ এবং নানামুখী স্বার্থের
দ্বন্দ্ব জটিল হয়ে গেছে অভিবাসন পদ্ধতি, এর পরেও মোটামুটি
তুলনামূলক নাগরিত্ব দেয় এমন কয়েকটি দেশের তথ্য তুলে ধরব এবারের প্রতিবেদনে।
সাধারণত
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ গুলো অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য জন্য বেশ উদার দৃষ্টিভঙ্গি
দেখিয়ে থাকে। তবে যে কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের স্থায়ী ভাবে বসবাসের
অনুমুতি বা নাগরিত্ব দিতে ৪ টি বিষয় বিবেচনা করে থাকে। সেগুলো হলো :-
জন্ম সূত্রে
নাগরিক, নতুন দেশে অবস্থানের সময়কাল, অর্থ সামর্থ্য ও নমনীয়তা।
বিশ্বে দ্রুত
নাগরিকত্ব প্রদান করা দেশ গুলোর তথ্য জেনে আসি।
• আরমেনিয়া :- পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ আরমেনিয়া।
দেশটির আয়তন ২৯ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির রাজধানী ইয়েরেভান। এটি দেশের
বৃহত্তম শহর। ১৯৯১ সালে স্বাধীন হয় আরমেনিয়া। এই দেশে কেউ ৩ বছর বসবাস করলে তাকে
স্বাভাবিক নাগরিক হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। যদিও আরমেনিয়া বিভিন্ন বিনিময়ের বিকল্প
অফার দিয়ে থাকে। এখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যা থাকা লাগে তা হলো, ১ টি আবাসিক অনুমতি, এছাড়া ও আরমেনিয়া সংবিধানের উপর
একটি পরীক্ষায় পাস করতে হবে এবং বসবাসের পারমিট বজায় রাখার জন্য দেশটিতে যথেষ্ট
সময় বসবাস করতে হবে।
• আর্জেন্টিনা :- উদার ভাবে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য সেরা লাতিন আমেরিকার দেশ
গুলো। এর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ আর্জেন্টিনা। মেসি, ম্যারাডোনার
দেশ আর্জেন্টিনা অভিবাসি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। দেশটিতে বেশ কিছু
প্রাকৃতিক আশ্চর্য ও জনপ্রিয় স্থান রয়েছে যা দেশটিতে বসবাসের আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে।
এই দেশটির নাগরিক হতে হলে আপনার প্রতি মাসে ৮৫০ ডলার আয় থাকা লাগবে এবং তার বৈধ
কাগজপত্র থাকতে হবে। আর এখানে নাগরিকত্ব পেতে হলে কমপক্ষে ২ বছর বসবাস করতে হবে।
এই ২ বছর বসবাসের পর উপযুক্ত কাগজপত্র আর্জেন্টিনার সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।
যেসব কাগজ জমা দিতে হবে তা হলো যাচাইকৃত জন্মসনদ, পূর্বে
বসবাসরত দেশের প্রমাণ, ব্যক্তিকে সনাক্তকরণের জন্য সব ধরনের
নথি, আর্থিক লেনদের সাথে সম্পৃক্ত সকল নথি, যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নগদ অর্থের হিসাব, সম্পদের হিসাব ইত্যাদি।
• ইকুয়েডর :- দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ ইকুয়েডর। দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয়
তুলনামূলক কম এবং মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহার হয়। এখানকার অভিবাসী হতে হলে,
আপনার মার্সিক আয় ৮০০ ডলার হতে হবে এবং এর বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে।
এর পাশাপাশি আপনাকে ১০০ ডলার অতিরিক্ত নির্ভরযোগ্যতার জন্য দেখাতে হবে। এটি ‘পেনশন ভিসার’ অধীনে পড়ে। পেনশন ভিসা পাওয়ার ২১ মাস
পর এখানে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। ইকুয়েডরে নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হলে
চারটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়:
১. অন্তত তিন
বছর ইকুয়েডরে বসবাস করেত হবে।
২. ইকুয়েডর
সরকার কর্তৃক যাচাইকৃত জন্মসনদ থাকতে হবে।
৩. ইকুয়েডরে
বসবাসরত আবাসটি দেশটির সরকার কর্তৃক যাচাই করে, সঠিক কাগজপত্র দিতে হবে।
৪. নাগরিকত্ব
পেতে সাক্ষাৎকার দিতে হবে এবং সেখানে পাস করতে হবে।
• পেরু : পেরু দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। সহজে নাগরিকত্ব এর জন্য এই দেশ
অত্যন্ত নিরাপদ ও পছন্দের। পেরু অভিবাসীদের আইনি বসবাসের অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে
থাকে। একজন বিদেশি সেখানে নাগরিকত্ব জন্য আবেদনের আগে একটানা ২ বছর ধরে সেখানে
থাকতে হয়। প্রতিমাসে চলার জন্য নির্দিষ্ট একটি আয় থাকতে হবে।
• পোল্যান্ড : - অভিবাসীদের জন্য খুবই অতিপরিচিত আরেকটি দেশ পোল্যান্ড। এটি
মধ্য ইউরোপের একটি দেশ। ১৬ টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত পোল্যান্ড। দেশটির পশ্চিমে
জার্মানি, দক্ষিণে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া ও পূর্বে
ইউক্রেন ও বেলারুশ। এবং বাল্টিক সাগর, লিথিয়ানিয়া ও রাশিয়া
অবস্থিত। বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ড এর সাথে ডেনমার্কের জলসীমা রয়েছি।
রূপকথার মত সুন্দর
এক দেশ পোল্যান্ড। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর পোল্যান্ড আবার স্বাধীন
দেশে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোল্যান্ড ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের
অধিন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৯৮৯ সালে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে কমিউনিস্ট
শাসনের অবসান ঘটে।
বর্তমানে
পোল্যান্ড একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে
পোল্যান্ড এর অর্থনীতি বেশ স্থিতিশীল। পোলান্ডের সেনজিন ভিসা নিয়ে যাওয়া যায়।
বর্তমানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশটিতে ভিসা পেয়ে থাকেন।
পোল্যান্ড
শিক্ষার্থীদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে বেশ উদার। এই দেশে যারা স্থায়ী বসবাস নিশ্চিত
করতে চান তারা দেশটিতে ৫ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে
দেশটিতে বিনিয়োগ করলে ৩ বছরের কম সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। পোল্যান্ডে নাগরিকত্ব
পাওয়ার জন্য আরেকটি সহজ উপায় হলো স্থানীয় কাউকে বিয়ে করা। এটি হলে দ্রুত নাগরিকত্ব
পাওয়া যায়।
• উরুগুয়ে :- দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি দেশ উরুগুয়ে। উরুগুয়ে নাগরিকত্ব দিতে মোটামুটি
বেশ উদার। দেশটিতে খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। এখানকার মানুষ যথেষ্ট বন্ধু
সুলভ। ভিসার মাধ্যমে সহজে যে কেউ দেশটিতে যেতে পারেন। এই দেশেটিতে অভিবাসী হয়ে
নাগরিকত্ব পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র লাগে। যেমন:- এখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার
জন্য কমপক্ষে ৫ বছর বসবাস করতে হয়। তবে বিয়ে করলে ৩ বছর লাগে। আবেদনের জন্য এখানে
৬ টি ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
১.স্থায়ী
অভিবাসের জন্য উরুগুয়ে সরকারের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে হবে।
২. সঠিক জন্মসনদ
দিতে হবে যা উরুগুয়ে সরকার গ্রহণ করে।
৩. বিয়ের
কাগজপত্র দিতে হবে। যদি থাকে
৪. নির্ভরযোগ্য
মাসিক আয় ও আয়ের হিসাব দেখাতে হবে।
৫. মেডিক্যাল
সনদ দিতে হবে।
৬. বৈধ উরুগুয়ের
ঠিকানা দিতে হবে।
এসব নিয়ম মেনে
আবেদন করলে ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে বৈধ নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
• ডোমেনিকান রিপাবলিক : ক্যারেবিয়ের দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র ডোমেনিকান রিপাবলিক । সহজে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি দেশ। যদি অভিবাসিরা সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলে খুব সহজে ডোমেনিকান রিপাবলিকে নাগরিকত্ব পেতে পারে। এখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কমপক্ষে একটানা ২ বছর বসবাস করতে হয়। একবার এই মানদণ্ড পূরণ হলে দ্রুত স্থায়ী নাগরিক হওয়া যায়।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
follow our Twitter account Dhaka Voice
No comments