Adsterra

মহাবীর আলেকজান্ডার দি গ্রেট

মহাবীর আলেকজান্ডার দি গ্রেট, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, today top news, today trending news, hot news, update news, somoy news,

আলেকজান্ডার ছিলেন মেসোডনিয়ান রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তাঁর চতুর্থ স্ত্রী রানী অলিম্পাসের সন্তান। তাঁকে সম্বোধন করা হয় হেলেনীয় লিগের হেজিমন, পারস্যের শাহেনশাহ, মিশরের ফারাও ও এশিয়ার প্রভু নামে। মৃত্যুর পূর্বে আলেকজান্ডার পুরো পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অংশ জয় করেছিলেন। অথচ মাত্র ৩২ বছর বয়সে এই বীর যোদ্ধা রাজার মৃত্যু ঘটে। আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালের জুলাই মাসে জন্ম গ্রহণ করেন। আলেকজান্ডারের বাবা ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। আলেকজান্ডার ছিলেন রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তাঁর চতুর্থ স্ত্রী রানী অলিম্পাসের সন্তান। 


তাঁকে সম্বোধন করা হয় হেলেনীয় লিগের হেজিমন, পারস্যের শাহেনশাহ, মিশরের ফারাও ও এশিয়ার প্রভু নামে। তিনি তাঁর মৃত্যুর পূর্বে পুরো পৃথিবীর অর্ধেক অংশ জয় করেছিলেন। তাঁর সেনাবাহিনী ছিল অসীম সাহসী। সামরিক বাহিনীর কূটকৌশল তাঁর আয়ত্তে ছিল। তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সফল সামরিক প্রধান এবং সম্রাট। শৈশব কাল থেকেই আলেকজান্ডার ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও বুদ্ধিমান। 


তাঁর বুদ্ধি ও সাহসের জন্য অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে আলেকজান্ডারই হবেন ভবিষ্যৎ রাজা। তাঁর শৈশবের ঘটনা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই ঘটনাটি- আলেকজান্ডার একদিন তাঁর বাবার সাথে বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছেন। পথের ধারেই কতগুলো মানুষের সমাবেশ দেখে আলেকজান্ডার জানতে চাইলেন সেখানে কি হয়েছে? তাকে জানানো হলো সেখানে একটি কালো পাগলা ঘোড়াকে কিছু মানুষ বশ করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউই সেই ঘোড়াটাকে বশ করতে পারছে না। 


ছোট্ট আলেকজান্ডার তখন কিছুটা কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। তিনি ঘোড়াটাকে বশ করার জন্য তাঁর বাবার কাছে অনুমতি চাইলেন। তাঁর বাবা ফিলিপ তাকে অনুমতি দিলেন এবং এটাও জানিয়ে দিলেন যে যদি তুমি ঘোড়াটা বশ করতে পারো তাহলে সেটা তোমার হয়ে যাবে। আলেকজান্ডার অত্যন্ত খুশি হয়ে কাজে লেগে পড়লেন। তিনি প্রথমে লক্ষ করলেন ঘোড়াটা কেন ভয় পাচ্ছে এবং মানুষকে কাছে আসতে দিচ্ছে না। তিনি দেখলেন যে ঘোড়াটা তাঁর নিজের ছায়াকে ভয় পাচ্ছে। 


তিনি ঘোড়াটাকে সূর্যের দিকে মুখ করালেন যেন ঘোড়াটা তাঁর নিজের ছায়াকে দেখতে না পায়। তাঁর বশ করা এই ঘোড়াটা তাঁর সাথে তাঁর শেষ যুদ্ধে মৃত্যু বরন করার আগ পর্যন্ত তাঁর সাথেই ছিল। তিনি এই ঘোড়াটার একটি নামও দিয়েছিলেন। ঘোড়াটার নাম ছিল ‘বুসেফেলাস’। আলেকজান্ডারের রাজা হবার পথ সহজ ছিলনা। আলেকজান্ডারের বাবা ফিলিপ যখন পঞ্চম বার বিয়ে করেন তখন তাঁর রাজা হবার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ ফিলিপের পঞ্চম স্ত্রী ক্লিওপেট্রা ছিলেন পুরোপুরি মেসিডোনিয়ান। অন্যদিকে আলেকজান্ডারের মা ছিলেন ইপিরাসের বাসিন্দা। 


সে সময় ইপিরাস মেসিডোনিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই নিয়ে আলেকজান্ডারের সাথে তাঁর বাবার বাকবিতণ্ডা হয় এবং তিনি, তাঁর মা অলিম্পাস ও বোন রাগ করে মেসিডোনিয়া ছেড়ে চলে যান। পরে ফিলিপ তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং আলেকজান্ডারকে আবার তাঁর প্রাসাদে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তাঁর মা অলিম্পাস ও তাঁর বোন আর ফিরে আসেননি। তিনি প্রাসাদে থাকাকালীন যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। অতি অল্প সময়ে তিনি মেসিডোনিয়ান সেনাবাহিনীর একজন দক্ষ সেনাপতিতে পরিণত হন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৮ সালে মেসিডোনিয়ার সাথে এথেন্স ও থিবস্ এর যুদ্ধ শুরু হয়। 


এই যুদ্ধের নাম ছিল ক্যারোনিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধেই প্রথম আলেকজান্ডার তাঁর যুদ্ধবিদ্যার পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। এই যুদ্ধে অশ্বারহী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন আলেকজান্ডার নিজে। তাঁর অসাধারণ যুদ্ধ কৌশল ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে তিনি থিবস্ এর বিশেষ বাহিনীকে পরাজিত করেন। তাঁর নাম যুদ্ধক্ষেত্রে অনেকটা ত্রাস সৃষ্টি করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ সালে আলেকজান্ডারের বাবা রাজা ফিলিপ মারা যান। ধারণা করা হয় ফিলিপের খুনের জন্য দায়ী আলেকজান্ডার অথবা অলিম্পিয়াস। আবার অনেকে ধারণা করেন যে পারস্যের রাজা তৃতীয় দারিয়ুস ফিলিপের মৃত্যুর জন্য দায়ী। 


যাই হোক ফিলিপের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডারকে মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনী সে দেশের রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন। এই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র বিশ বছর। অনেকে মনে করেন এই অল্প বয়সে রাজা হিসেবে আলেকজান্ডার রাজ্যের কাজকর্ম ঠিক ভাবে করতে পারবে না। ফলে দেখা যায় গ্রিক নগর তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু আলেকজান্ডার এই সব বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করে। আলেকজান্ডারের মনে বিশ্ব জয়ের এক সুপ্ত বাসনা কাজ করতো। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৯ সালে এক ভোজ সভায় তিনি ঘোষণা করেন যে “এখানে একব্যক্তি গ্রিস থেকে এশিয়া জয় করার পরিকল্পনা করছে”... 


সেই ব্যক্তিটি ছিলেন আলেকজান্ডার নিজেই। তাই তিনি প্রথমে পারস্য জয় করার জন্য অভিযান চালান। গ্রিকপন্ডিতরা সেসময়ে তাদের সন্তানদের শেখাতেন যে পারস্যরা হচ্ছে বর্বর জাতি। আর গ্রিকরা হচ্ছে সভ্য জাতি। তাই পারস্যের প্রতি তাঁর একটা খারাপ ধারণা ছিল। আলেকজান্ডারের শিক্ষাগুরু ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটোল। পারস্য অভিযানে আলেকজান্ডারের সাথে ছিল প্রায় ৪২০০০ হাজার সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী। তাঁর এই সেনাবাহিনী মেসিডোনিয়ান,গ্রিক, থ্রাসিয়ান, পাইওনিয়ান ও ইলিরিয়ান সৈন্য নিয়ে গঠিত ছিল। আলেকজান্ডার তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে পারস্যে প্রবেশ করেন এবং পারস্যের রাজা তৃতীয় দারিয়ুস কে পরাজিত করেন। 


তিনি এখানেই থামেন নি এর পর তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২-৩৩১ সালে মিশর জয় করেন। মিশরে আলেকজান্ডার আলেকজান্ড্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরেও তিনি আরও অনেক অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি অভিযান পরিচালনা করতে করতে ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত এসে পড়েন। এই যাত্রা পথে তিনি অনেক রাজ্য জয় করেন। অনেক পরাক্রমশালী রাজারাও তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারেনি। সকলেই তাঁর বশ্যতা শিকার করতে বাধ্য হয়েছে। এই যাত্রা শেষ হয় ভারতের বিপাশা নদীর তীরে। 


তিনি ভারতের পাঞ্জাবের বিপাশা নদীর অপর পার থেকে ফিরে যান। এই মহান বীর খুব অল্প বয়সে মারা যান। আলেকজান্ডার ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে জুন মাসের ১১ তারিখে মৃত্যু বরন করেন। অনেকে মনে করেন তিনি মারা গেছেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালের ১২ জুন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ধারনা করা হয় তিনি হয়তো ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। "

No comments

Powered by Blogger.