পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ রাশিয়া
রাশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ। দেশটি পৃথিবীর মোট ভূমির আট ভাগের এক ভাগ নিয়ে গঠিত। রাশিয়ার মোট আয়তন ১৭,০৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৫৯২,৮০০ বর্গমাইল)।উত্তর এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের বিশাল অংশজুড়ে রাশিয়ার অবস্থান। জনসংখ্যার দিক থেকে এই দেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। রাশিয়ার সম্পূর্ণ নাম
"ফেডারেশন অব রাশিয়া"
। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো।
রাশিয়ার মুদ্রার নাম রুশ রুবল।
রাশিয়া উত্তর এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের অন্তর্গত। দেশটির পশ্চিমে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড (বেল্টিক উপকূলে ক্যালিনিনড্র্যাড ওব্লাস্ট এক্সক্লভ পরিচালনা করে), বেলারুশ এবং ইউক্রেন, দক্ষিণ-পশ্চিমে জর্জিয়ার (আখাকিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়া বিতর্কিত অঞ্চলগুলি সহ), আজারবাইজান এবং পূর্ব ও দক্ষিণে কাজাখস্তান, চীন, মঙ্গোলিয়া, এবং উত্তর কোরিয়ার সাথে বেশিরভাগ স্থল সীমানা ভাগাভাগি করে। যদিও রাশিয়ার বেশিরভাগ অংশ ভৌগোলিকভাবে এশিয়াতে, কিন্তু দেশটির জনসংখ্যার বেশিরভাগই ইউরোপীয় অংশে ঘনীভূত এবং সংস্কৃতিগতভাবে দেশটি ইউরোপীয়।
রাশিয়ার ইতিহাস শুরু হয় ৩য় ও ৮ম খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ব স্লাভদের মাধ্যমে যারা ইউরোপের একটি স্বীকৃত জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল পরবর্তীতে ভারাঞ্জিয়ান যোদ্ধা ও তাদের বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও শাসিত হয় এবং নবম শতকে দেশটির উত্থান শুরু হয়। ৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য থেকে গোঁড়া খ্রিস্টান রীতি গৃহীত হয়। এর ফলে বাইজান্টাইন ও স্লাভ সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটে যা পরবর্তী সহস্রাব্দ পর্যন্ত বহাল থাকে। রাশিয়া অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ জমি মোঙ্গলদের আক্রমণের পদদলিত হয় ও যাযাবরদের জন্য স্বর্গ হয়ে ওঠে। মস্কোর গ্র্যান্ড ডিউক শেষ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী রুশ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেন ও যাযাবরদের কাছে থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেন। তারা মূলত কিয়েভান রাশিয়ার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে শাসন করেন। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এই জাতিটি বিজয়, আত্মসাৎ এবং অন্বেষণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করে ইউরোপের পোল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকার আলাস্কা পর্যন্ত যা ছিল ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য।
রুশ বিপ্লবের পর রুশীয় সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃহত্তম, নেতৃস্থানীয় ও প্রয়োজনীয় সদস্য হয়ে ওঠে যা সংবিধান অনুযায়ী একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যা তাদের মতে সমস্ত ধরনের শোষণ থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিল, মানুষকে বিকশিত করে উন্নত সুন্দর মানুষ বানিয়েছিল। সেখানে ধনী দরিদ্রের ভেদরেখা ভেঙ্গা ফেলা হয়, শ্রমিকেই দেওয়া সর্বোচ্চ মূল। বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে, সাহিত্যের বিশাল অবদান রাখে। রবি ঠাকুর সোভিয়েত দেখে বলেছিলেন, স্বর্গ দেখে এলুম।এসময় এটি অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নেই প্রথম জার্মানির পরাজয় ঘটে, তারপর নাৎসি জার্মানির পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে এবং শেষমেষ হেরে যায়। সোভিয়েত যুগ বিংশ শতকের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত সাফল্য পেয়েছিল যার মধ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম মহাকাশযান ও প্রথম নভোচারী। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সোভিয়েতের রুশীয় প্রজাতন্ত্র রুশ ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হয় এবং একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হয়।
রাশিয়া ও তার পূর্বসূরি রাষ্ট্রসমূহ যেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, সেসব যুদ্ধে রুশ সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের মধ্যে উল্লেখ হচ্ছে সাইবেরিয়া বিজয়,রুশ–তুর্কি যুদ্ধ (১৭৩৫–১৭৩৯) রুশ–তুর্কি যুদ্ধ (১৭৮৭–১৭৯২),দ্বিতীয় মিত্রজোটের, যুদ্ধবক্সার বিদ্রোহ, ককেশাসের যুদ্ধ,রুশ–জাপান যুদ্ধ,তাব্রিজ আক্রমণ,প্রথম বিশ্বযুদ্ধ,সম্প্রতির রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাত ইত্যাদি। রুশ-ইউক্রেনীয় যুদ্ধ রাশি ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চলমান ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত, যা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল। যুদ্ধটি ক্রিমিয়ার অবস্থা ও দনবাসের কিছু অংশকে কেন্দ্র করে ঘটে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ইউক্রোনের অংশ হিসাবে স্বীকৃত।
রাশিয়ার বিশাল ভুখন্ডে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বরফের পাহাড়, লেক সবই আছে এই দেশটিতে। অসংখ্য পর্যটন স্পট থেকে সবচেয়ে আর্কষনীয় কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে-
• লেক বৈকাল: রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের লেক বৈকাল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো এবং গভীরতম লেক। এই লেক প্রায় সাড়া বছরই বরফে ঢাকা থাকে। মাঝে মাঝে এই বরফ এতটাই পুরু থাকে যে আপনি চাইলেই এই লেকের উপর গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবেন।
• ট্রান্স সাইবেনিয়ান রেলওয়ে: মস্কো থেকে রাশিয়ার সীমান্ত এলাকা ভ্লাদিবস্তক পর্যন্ত এর অবস্থান। ১৮৯১ সালে টেসার আলেক্সজান্ডার এই রেলপথে নির্মান কাজ শুরু করেন এবং তার পুত্র টেসার নিকোলাস ১৯১৬ সালে এই রেলপথ নির্মান কাজ শেষ করে।
• সেইন্ট বেসিল ক্যাথিড্র্যাল: ১৫৫৪ থেকে ১৫৬১ থেকে সময়কালে নির্মান হয় এই ঐতিহাসিক স্থাপনা। সাড়া পৃথিবীতে এই ধরনের স্থাপনা আর দ্বিতীয়টি খুজে পাওয়া যাবে না। রাশিয়ার মস্কোতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের মুল গন্তব্য থাকে এই ক্যাথিড্রাল।
• মাউন্ট এলব্রুস: দক্ষিণ রাশিয়ার জনপ্রিয় একটি স্থান হলো ককেষাস মাউন্টেন রেঞ্জের এই মাউন্ট এলব্রুস। ১৮৫১০ ফিট উচু বরফে ঢাকা এই পাহাড় সত্যিই অসাধারন। মুলত ভলকানো থেকেই তৈরী হয়েছে এই মাউন্টেন।
• হারমিটেজ মিউজিয়াম: ১৭৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিউজিয়াম রাশিয়ার বিখ্যাত এবং ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতি ধারণ করে আছে।
এছাড়াও রয়েছে উরাল পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ইয়েক্যাটারিনবার্গ শিল্পনগরী।কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী শহর সোচি।রাশিয়ার উত্তরে অবস্থিত ভেলিকি নোভগরোদ শহরের মূল আকর্ষণ সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল নামে একটি গীর্জা, বেল টাওয়ার, হানসিটিক ফাউন্টেইন। কাজান শহরে রয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ,কুল শরিফ মসজিদ।
শক্তিধর এই রাষ্ট্র রাশিয়ায় আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পর্যটকরা এসব স্থানে ভ্রমণ করে অসীম আনন্দ লাভ করে থাকেন।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments